হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, প্রতি বছর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে পালিত হয় ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। কালীপুজোর ঠিক দুদিন পরেই এই সম্প্রীতির অনুষ্ঠান পালিত হয় ধুমধাম করে। শুধু বাংলায় নয়, দক্ষিণ ভারত, মহারাষ্ট্র, এমনকি নেপালেও ভাইটিকা নামে পালিত হয়। বিভিন্ন পুরাণ ও শাস্ত্রে ভাইফোঁটার উল্লেখ রয়েছে। কীভাবে উদ্ভব হল, তার রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। কথিত আছে, মৃত্যুর দেবতা যম এইসময় বোন যমুনার হাতে ফোঁটা নিতে যান। তাই এই উত্সবকে যমদ্বিতীয়াও বলা হয়ে থাকে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, সূর্যদেবের যমজ সন্তান হলেন যম ও যমুনা। দুই যমজ ভাই-বোন। তাঁরা বড় হয়ে একে অপরের থেকে অমেক দূরে চলে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ভাইবোনের দেখা না হওয়ায় মনখারাপও করতে শুরু করে। বোন যমুনার মনেপ্রাণে ইচ্ছে ছিল, ভাই যমকে একবার চোখে দেখার। তাই ভাইকে একদিন মর্তলোকে আসার জন্য নিমন্ত্রণ করেন। আর সেই নিমন্ত্রণ পেয়েই ভাই যমরাজ বোনের বাড়িতে উপস্থিত হন। বাড়িতে ভাই আসায় বোন যথাসাধ্য আপ্যায়ন করার চেষ্টা করেন। লুচি, সন্দেশ, পায়েস, মিষ্টি ইত্যাদি সুস্বাদু খাবারের পদ সাজিয়ে তাঁর জন্য আয়োজন করেন। ভাইকে অনেকদিন পর দেখার পর যমুনা ভাইয়ের মঙ্গলকামনার করে প্রদীপ জ্বালিয়ে, ফোঁটা দিয়ে প্রার্থনা করেন। প্রতিবছর বোনের ডাকে যমলোক থেকে মর্ত্যলোকে আসার জন্য অনুরোধ করে। বোনের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিবছর আসবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন ভাইও। সেই রীতি মেনে পৃথিবাতে প্রতিবছর কার্তিক মাসের দ্বিতীয়া দিন ভাইফোঁটা পালন করে থাকে।
ক্য়ালেন্ডার অনুসারে, এবছর ভাইফোঁটা পালিত হবে আগামী ১৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার। শুভ তিথি শুরু হচ্ছে বেলা ২টো ৩৬ মিনিটে। সমাপ্ত হবে পরের দিন, ১৫ নভেম্বর, বেলা ১টা ৪৭ মিনিটে। ফলে মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে ভাইফোঁটার তিথি। বাম হাতের কড়ি আঙুল দিয়ে ভাইয়ের কপালে ও ঠোঁটে চন্দন ও মধু দিয়ে একটি মন্ত্র বা ছড়া বলার রীতি রয়েছে। সেই মন্ত্র না বললে ভাইফোঁটা কার্যকরী হয় না। যমুনা তাণর ভাই যমকে ফোঁটা দেওয়ার সময় ভাইফোঁটার এই ছড়া আওড়েছিলেন। সেই রীতি এখনও বিদ্য়মান। এই উত্সবের প্রচলিত মন্ত্র ও ছড়াটি হল…
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর॥