অনেকেই বলেন চিরকুমার কার্তিক! তবে কথাটা কি আদৌ ঠিক? পুরাণ কিন্তু বলছে মোটেই নয়। বরং স্ত্রী নিয়ে ভরা সংসার আছে কার্তিকের। তা ছাড়া প্রতি বছর কার্তিক মাসের সংক্রান্তি তিথির আগের দিন, সন্তান লাভের আশায় নবদম্পতিদের বাড়িতে বা সন্তানহীনদের বাড়িতেও কার্তিক ফেলা হয়। মনে করা হয়, কার্তিক পুজো করলে কার্তিকের মতোই ফুটফুটে সন্তান লাভ হয়। যদি তাই হবে তাহলে সেই কার্তিক ঠাকুর চিরকুমার হন কী করে?
তবে কার্তিকের স্ত্রী তাহলে কে? তিনি কি কোনও দেবী? নাকি কোনও মানস কন্যা? এই রহস্যের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে কার্তিকের নামের মধ্যেই। হর-গৌরীর পুত্র কার্তিকের আরেক নাম দেবসেনাপতি। তারকাসুরকে বধ করতেই শিবের ঔরস থেকে জন্ম তাঁর। দেব সৈন্যের অধিপতি বা সেনাপতি ছিলেন তিনি। অনেকে ভাবেন তাই হয়তো তাঁর নাম দেবসেনাপতি।
তবে এই ধারণা মোটেই সত্যি নয়। আসলে তাঁর নাম দেবসেনাপতি কারণ কার্তিক দেবসেনার পতি বা স্বামী তাই। তারকাসুরকে বধ করে স্বর্গরাজ্য দেবতাদের ফিরিয়ে দেন কার্তিক। তাই নিজের কৃতজ্ঞতা সরূপ নিজের কন্যা দেবসেনার সঙ্গে কার্তিকের বিয়ে দেন দেবরাজ ইন্দ্র। তাই তিনি দেবসেনপতি।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে আবার দেবসেনা ছিলেন ব্রহ্মার মানস কন্যা। তিনিই হলেন দেবী ষষ্ঠী। অর্থাৎ, আরেক মতে কার্তিকের স্ত্রী হলেন দেবী ষষ্ঠী। দেবী ষষ্ঠীর পুজো করলে সন্তান লাভ হয়। সেই থেকেই কার্তিক পুজোয় নিঃসন্তান বা নবদম্পতিদের বাড়িতে কার্তিক ফেলার চল বলে মনে করা হয়।
তবে এখানেই শেষ নয়, কার্তিকের কিন্তু আরও এক স্ত্রী আছেন। তিনি হলেন দক্ষিণ ভারতের উপজাতি নম্বিরাজের কন্যা বল্লী। মা-বাবার উপরে অভিমান করে কৈলাস ত্যাগ করেছিলেন কার্তিক। প্রথম স্ত্রী’কে নিয়ে দক্ষিণ ভারতে পাহাড়ি এলাকায় এসে বাস করতে শুরু করেন তিনি। সেখানকার উপজাতির মানুষ কার্তিক এবং তাঁর স্ত্রী’কে সাদরে গ্রহণ করেন। একদিন ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন একলা কার্তিক। হঠাৎ পাহাড়ি ক্ষেতে শস্য পাহারা রত এক কালো মেয়ের প্রেমে পড়ল কার্তিক। সেই প্রেম এতই গাঢ় যে তখন এক বৃদ্ধের ছদ্মবেশে গিয়ে নাম পরিচয় জানতে চাইল কার্তিক। জানা গেল যুবতী উপজাতি রাজা নম্বিরাজের কন্যা বল্লী।
এরপরেই যুবতীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন বৃদ্ধবেশের কার্তিক। সেই প্রস্তাব পেয়ে রেগে আগুন বল্লী। বিপদ বুঝে কার্তিক স্মরণ করলেন বিঘ্ননাশক দাদা গণেশকে। গণেশও ভাইয়ের কথায় এক মত্ত হস্তীর রূপ ধরে আটকে দাঁড়ালেন বল্লীর রাস্তা।
মত্ত হাতির ভয়ে তিনি জড়িয়ে ধরলেন সেই বৃদ্ধকে। ভয়ে তাঁর দু’চোখ বোজা! এবার কার্তিক বললেন হাতিটাকে তাড়াতে পারলে বল্লী তাঁকে বিয়ে করবেন, নয় তো দু’জনেই মরবেন। প্রাণ বাঁচাতে সেই শর্তে রাজি হলেন বল্লী।
এরপরেই চোখ খুলে, দেখলেন বৃদ্ধের জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে এক সুপুরুষ যুবক। অমনি বিয়ের আপত্তি কথা ভুলে গেলেন রাজুকন্যা। বিয়ে হল ধুমধাম করে। বল্লীর সঙ্গে দাম্পত্য আর প্রেম পূর্ণ ভাবে উপভোগ করার জন্য দক্ষিণ ভারতের ছয়টি স্থানে ছ’টি শস্ত্রাগার নির্মাণ করেন কার্তিক। সেই ছয় শস্ত্রাগার আজ ভারতের সবচেয়ে পবিত্র কার্তিক মন্দির বলেও মনে করা হয়। সেগুলি হল পালানী, স্বামীমালাই, পাঝামুদিরচোলাই, থিরুচেন্দুর, থিরুথানি এবং থিরুপ্পারামকুমারাম। তামিলনাড়ুর রক্ষাকর্তা হিসাবেও কার্তিকের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।