
ক্রিকেট মাঠে ঘুম পায়! গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের কাছে ম্যাচ মানে বিনোদনও। কিন্তু সেটাই যদি না থাকে ঘুম পেতেই পারে। তাই বলে বিশ্বকাপের ম্যাচেও! ওই যে, পরিস্থিতি তেমন হলে। বিশাখাপত্তনমে এমনটাই যেন হয়েছিল। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের হতাশার পারফরম্যান্স। মন্থর পিচে ঘুম পাড়াতি ব্যাটিং। একের পর এক ডট বল। আর রান রেট বাড়াতে গিয়ে উইকেট পতন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শুরু থেকে এমন চিত্রই দেখা গেল। টপ অর্ডার ফের ফ্লপ। চাপ সামলাতে ব্যর্থ মিডল অর্ডারও। দায়িত্ব নিলেন রিচা ঘোষ। শুধু গ্যালারির ঘুম ভাঙানোই নয়, ভারতকে লড়াই করার মতো বা বলা ভালো জয়ের হ্যাটট্রিক করার মতো জায়গায় পৌঁছে দিলেন রিচা ঘোষ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৫২ রানের টার্গেট দিল ভারত। অল্পের জন্য ওডিআই কেরিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি এল না রিচা ঘোষের। টেকনোলজির বেড়াজালে আটকে যেতে হল রিচাকে। কোমরের উচ্চতায় ফুলটস হলেও টেকনোলজি বলছে, ৪ সেন্টিমিন্টারের জন্য তা নো বল নয়।
বিশাখাপত্তনমে ব্যাটিং পিচের প্রত্যাশা ছিল। যদিও ম্যাচের আগের দিনগুলোয় লাগাতার বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ম্যাচের আগের দিন বৃষ্টির কারণে ঠিকঠাক প্রস্তুতিই সারতে পারেনি ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্লেয়াররা। টস জিতে রান তাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। বাকি কাজটা করে দেন বোলাররা। পেস বোলিংয়ে উইকেট এলই। ভারতকে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলেন দুই বাঁ হাতি স্পিনার ক্লোই ট্রায়ন ও মালাবা। সকলের মাঝে পর্বত হয়ে দাঁড়ান রিচা ঘোষ। বিশ্বকাপের মঞ্চে ৮ নম্বরে নেমে সর্বাধিক স্কোরের রেকর্ড গড়লেন রিচা ঘোষ।
গত ম্যাচের মতো রিচা ঘোষকে পাঠানো হয় আট নম্বরে। দল তখন প্রবল বিপদে। ভালো ওপেনিং জুটি। কিন্তু মিডল ওভারে একের পর এক উইকেট। ৫৫-০ থেকে ১০২-৬ হয়ে যায় ভারতের স্কোর। এখান থেকে ২০০ অবধি পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব মনে হয়েছে। কিন্তু এরপরই রিচা ঘোষের পাওয়ার হিটিং দেখার সুযোগ পেলেন ক্রিকেট প্রেমীরা। গত ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল রিচার ২০ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। আর এ দিন করলেন ৭৭ বলে ৯৪! ১১টি বাউন্ডারি এবং ৪টি ওভার বাউন্ডারি মেরেছেন রিচা।
একটা সময় প্রবল কঠিন পরিস্থিতিতে ছিল ভারত। অমনজ্যোৎ এবং স্নেহ রানার সঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন রিচা ঘোষ। ৮৬ ডেলিভারি পর বাউন্ডারি আসে রিচা ঘোষের সৌজন্যেই। কাউন্টার অ্যাটাকে প্রতিপক্ষ বোলারদের আত্মবিশ্বাস দুমড়ে মুচডে দেন। ৫৩ বলে হাফসেঞ্চুরি। বিশ্বকাপের মঞ্চে তাঁর প্রথম। কেরিয়ারে সপ্তম। পাঁচটি বাউন্ডারি এবং দুটি বিশাল ছয়ে হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছন। টার্গেট থেকে সরেননি। বোর্ডে বড় রান তোলাই লক্ষ্য ছিল। এর জন্য প্রয়োজন ছিল ক্রিজে থাকার। সেটাই করেন রিচা।
ওয়ান ডে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাজার রানের মাইলফলকও পেরিয়ে যান ভারতীয় দলের এই বিধ্বংসী কিপার ব্য়াটার। ৭৬ রানে তাঁর ক্যাচ ফসকান নাদিন ডি ক্লার্ক। প্রবল চাপের মুখে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। ফের ৮৩ রানে তাঁর ক্যাচ পড়ে। কিন্তু থার্ড টাইম আর সুযোগ এল না। নাদিন ডি ক্লার্কের ফুলটস, টেকনোলজি যা বলছে নো বল নয়, তাতে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন। ততক্ষণে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন ২৫১ রানে। চাপের মুখে, বিশ্বকাপের মঞ্চে রিচা ঘোষের ইনিংসের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।