কলকাতা: পথ দেখিয়েছিল শুরুর দিনেই। আইপিএলের হাত ধরে বদলে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের খোলনলচে। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সাপ্লাই লাইন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। এখান থেকেই জন্ম হয় আগামী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের। বছরের পর সেই ট্রেন্ড বজায় রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে। প্রত্যেক বছরই নতুন তারার জন্ম দেয় আইপিএল। এ বারও তাই। একঝাঁক ক্রিকেটার যাঁরা প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে বেছে নেন আইপিএল নামক প্ল্যাটফর্মকেই। আর সেখান থেকেই হয়ে ওঠেন ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম কাণ্ডারি। জসপ্রীত বুমরা, ঋষভ পন্থ, ঈশান কিশান, সূর্যকুমার যাদবদের উত্থান এই টুর্নামেন্টেই। এ বারও হঠাৎ করেই সাফল্যের আকাশে ঝলমলে হয়ে উঠেছেন একঝাঁক ক্রিকেটার। যাঁদের হাতে আগামীর ব্যাটন তুলে দেওয়ার কথা ভাবনা চিন্তা করতে পারেন নির্বাচকরা। তেমনই রয়েছে কিছু পুরনো মুখ, যাঁরা নতুন করে ঝলমলে আলো ছডিয়েছেন। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
শুভমন গিল- এ বারের আইপিএল শুভমন গিলের নতুন জন্ম দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে আইপিএলে খেললেও ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি। ২০২৩ আইপিএল বদলে দিয়েছে গিলের ক্রিকেট দর্শন। আগের চেয়ে অনেক ধারাল, অনেক শান্ত। ক্রিকেটীয় শটে বিপক্ষ বোলারদের ঘুম কেড়েছেন। এ বছর কমলা টুপির মালিক শুভমন গিল। ১৬ ম্যাচে ৮৫১ রান করে শীর্ষে। ঝুলিতে তিনটে সেঞ্চুরি, চারটে হাফসেঞ্চুরি। এ বছরই দেশের মাটিতে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ওপেনার গিল ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাপ্তি।
যশস্বী জয়সওয়াল- অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট থেকে উত্থান হলেও আইপিএলের মঞ্চে সাড়া জাগান যশস্বী জসওয়াল। এ বারের আইপিএলে যশস্বী দেখিয়েছেন ধারাবাহিকতা। ১৪ ম্যাচে ৬২৫ রান করেছেন যশস্বী। পাঁচটা হাফসেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে একটা সেঞ্চুরিও। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের স্কোয়াডে স্ট্যান্ড বাই হিসেবে ঢুকে পড়েছেন যশস্বী। ভারতীয় ক্রিকেটে পাকাপাকি ভাবে জায়গা পেতেই পারেন যশস্বী।
রিঙ্কু সিং- এ বারের আইপিএল এক নতুন ফিনিশারের জন্ম দিয়েছে। তিনি রিঙ্কু সিং। আইপিএলের ১৬তম সংস্করণে ১৪ ম্যাচে ৪৭৪ রান করেছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ঝুলিতে যে ক’টা পয়েন্ট এসেছে, তার অন্যতম কাণ্ডারি রিঙ্কু। অভাবনীয় উত্থান। গুজরাটের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে ৫ বলে ৫ ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতানো ইনিংস আইপিএলের রেকর্ড বুকে ঢুকে পড়েছে। কয়েক বছর ধরেই একজন প্রকৃত ফিনিশারের খোঁজ চালাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট। আর সেই ফিনিশারের নাম যদি রিঙ্কু সিং হয় তাহলে অবাক হওয়ার থাকবে না।
তিলক বর্মা- মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মিডল অর্ডার ব্যাটার অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। গত আইপিএলে আভাস দিয়েছিলেন। এ বারে আরও ঝলমলে হয়ে ওঠেন তিলক। বেশ কয়েকটা ম্যাচেই মুম্বইকে জিতিয়েছেন। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবেও কার্যকরী ভূমিকা নেন।
আকাশ মাধওয়াল- কে ভেবেছিল আইপিএলের আসরে এক নতুন আকাশের জন্ম হবে! হঠাৎ করেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে সুযোগ পেয়ে যান আকাশ মাধওয়াল। তাঁর উপর ভরসা করে যে ভুল করেনি টিম ম্যানেজমেন্ট তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। লখনউয়ের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট নিয়ে শোরগোল ফেলে দেন আকাশ। ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন তারা হয়ে ওঠার আভাস দিলেন আকাশ।
সাই সুদর্শন- ২১ বছরের এক তরুণ বাঁ-হাতি আইপিএলের আসরে নিজেকে মেলে ধরেছেন। গুজরাট টাইটান্সের হয়ে বেশ কয়েকটা প্রশংসনীয় ইনিংস খেলেছেন। মিডল অর্ডারে দলকে ভরসা দিয়েছেন। আগামীর নায়ক হয়ে ওঠার সমস্ত রসদই মজবুত রয়েছে সাই সুদর্শনের মধ্যে।
মোহিত শর্মা- আইপিএল অনেক হারিয়ে যাওয়া তারার খোঁজ দেয়। তেমনই এক তারার খোঁজ মিলল এ বারের আইপিএলে। তিনি মোহিত শর্মা। জাতীয় দলের জার্সিতে এর আগে খেললেও সে ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। গুজরাটের জার্সিতে একেবারে নতুন ঘরানায় ফিরে এলেন মোহিত। আশিস নেহরার হাতে পড়ে যেন বদলে গিয়েছেন তিনি। ২৪ উইকেট নিয়ে বেগুনি টুপির লড়াইয়েও চলে এসেছেন মোহিত শর্মা।
তুষার দেশপান্ডে- দীপক চাহার ছাড়া চেন্নাই সুপার কিংসে তেমন কোনও হেভিওয়েট বোলার নেই। ধোনির দলে হেভিওয়েট হয়ে ওঠার আভাস দিলেন তুষার দেশপান্ডে। গত আইপিএলে খেললেও, এ বারের আইপিএলে তিনিই যেন সিএসকের প্রধান বোলার। ঝুলিতে ইতিমধ্যেই ২১ উইকেট। নির্বাচকদের ভাবনাতেও ঢুকে পড়েছে তুষারের নাম।
পীযূষ চাওলা- ৩৪ বছরেও কামব্যাক। এও সম্ভব! আইপিএলে এমন ইতিহাস এর আগেও হয়েছে। লেগস্পিনার পীযূষ চাওলা আবারও সেই সন্ধান দিলেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে এ বারের আইপিএলে ২২ উইকেট নেন। হঠাৎ করেই আইপিএলে সাফল্যের আকাশে নিজেকে ধরা দিলেন পীযূষ চাওলা।