লুসেইল : একটা গোলের অপেক্ষায়, সময় বয়ে যায়। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার (Argentina) পরিস্থিতি ছিল তেমনই। কাতার বিশ্বকাপে (Qatar World Cup 2022) নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। হারলে বিদায় নিশ্চিত। জিতলে টিকে থাকা। প্রয়োজন ছিল বিশেষ কিছুর। কিন্তু মেক্সিকোর রক্ষণ ভাঙা সহজ ছিল না। গোলরক্ষক ওচোয়া অবধিও বল পৌঁছলো না। দ্বিতীয়ার্ধে ডি মারিয়ার পাস, একটা জমিঘেষা শট এবং…। লুসেইলের গ্যালারিতে সে সময় কান পাতা দায়। লিওনেল মেসির (Lionel Messi) ম্যাজিক্যাল গোল। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার লাইফ লাইন বাড়াল। বিশ্বকাপেও যেন প্রাণ ফিরল। এখানেই ইতি নয়। তরুণ ফুটবলার এনজোর অনবদ্য শট তখনও বাকি…। মেসির পাস থেকেই বল পেয়েছিলেন এনজো। মেসি-নেইমার-রোনাল্ডোদের সমতুল্য কাতারে আর আছেই বা কী! আচ্ছা মেসিকে এমন আবেগ প্রবণ, এমন উচ্ছ্বাসে ভাসতে কি সচরাচর দেখা যায়! বরাবর শান্ত। তবে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে গোল করে তাঁর উচ্ছ্বাস ছিল নজরকাড়া। ঠিক তাঁর পারফরম্যান্সের মতোই। ম্যাচের বিস্তারিত রিপোর্ট TV9Bangla-য়।
লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, নেইমার মাঠে নামলে প্রতিপক্ষের একটাই লক্ষ্য থাকে। এঁদের আটকে দিতে হবে। নেইমারের ক্ষেত্রে সেটা কাজে লাগেনি। তাঁর দলে আরও অনেক বিকল্প। রোনাল্ডোর দলও জিতেছে। মেসির ক্ষেত্রে রাস্তা কঠিন হয়েছে প্রথম ম্যাচ থেকেই। মেক্সিকোর যেন একটাই লক্ষ্য ছিল, জিততে না পারি, আর্জেন্টিনাকে জিততে দেব না। মেসি যেখানে যান, তিনজন অন্তত ছায়াসঙ্গী। দু-দল প্রথমার্ধে সম্মিলিত ভাবে শট নিয়েছে ৪টি! স্কোর লাইন প্রথমার্ধে গোলশূন্যই। বরং শেষ দিকে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ছিল আর্জেন্টিনাই। বিরতির ঠিক আগে। ফ্রি-কিক পেয়েছিল মেক্সিকো। ভেগার ফ্রি-কিক লক্ষ্যেই ছিল। আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ দারুণ গ্রিপ করেন। না হলে, সে সময়ই পিছিয়ে পড়তো আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনা ২ (লিওনেল মেসি ৬৪’, এনজো ফার্নান্ডেজ ৮৭’)
মেক্সিকো ০
গত ম্যাচের একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন করেন আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি। বিশেষত চার ডিফেন্ডারের মধ্যে তিনজনকেই পরিবর্তন করেন। মাঝমাঠেও বদল এনেছিলেন। কিন্তু সুযোগ তৈরি হল কোথায়! এই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের আগে অবধি ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত ছিল, সেটা বুঝতেই যেন অস্বস্তি হচ্ছিল। এ দিন মেসি নজির গড়লেন। বিশ্বকাপে ম্যাচের সংখ্যায় ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনাকে ছুঁলেন লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপে ২১ নম্বর ম্যাচে নেমেছিলেন। বিশ্বকাপের মঞ্চে তাঁর সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ। লুসেইলে ব্রাজিল-সার্বিয়া ম্যাচও প্রথমার্ধ গোলশূন্য ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাজিক দেখা যায়। এমন কিছুরই প্রত্যাশায় ছিল আর্জেন্টিনা শিবির। ৫০ মিনিটে মেসিকে বক্সের সামনে ফাউল করেন গুতিরেজ। ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসিই ফ্রি-কিক নিলেন, তবে ক্রসবারের অনেকটা উপরে।
এ যেন ঠিক ব্রাজিল ম্যাচের মতোই। প্রথমার্ধ গোল শূন্য। দ্বিতীয়ার্ধে অনবদ্য একটা গোল। বিশ্বকাপ এবং গুইলেরমো ওচোয়ার দারুণ একটা সম্পর্ক রয়েছে। গত ম্যাচেও পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে পেনাল্টি বাঁচিয়ে নায়ক হয়েছিলেন। এ দিন মেক্সিকো রক্ষণ পেরোতেই ঘাম ছুটছিল। ওচোয়াকে তেমন পরীক্ষার সামনে পড়তেই হয়নি। তবে ৬৪ মিনিটে ডি মারিয়ার ছোট্ট পাস, মেসির চকিত শট, ওচোয়া শুয়ে পড়েও লাভ হয়নি। দ্বিতীয় গোলের ক্ষেত্রেও কারিগর ক্য়াপ্টেন মেসিই। তাঁর পাস থকে হাওয়ায় ভাসানো অনবদ্য শট এনজো ফার্নান্ডেজের। ওচোয়া বাজপাখির মতো ঝাঁপালেও লাভ হয়নি।
প্রথম ম্যাচে সৌদির কাছে লজ্জার হার, বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের ঘণ্টা বাজছিল। খাদের কিনারা থেকে অনবদ্য প্রত্যাবর্তন লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার।