একটা সেল ফোন কেনার প্রসঙ্গ যখন ওঠে, তখন আম আদমির থেকে কয়েদিদের কয়েকটি বিশেষ জিনিসের চাহিদা থাকে। আপনি যখন ফোন ক্রয় করার সময় তার মেমোরি দেখে নিচ্ছেন, দেখে নিচ্ছেন তা ডিসপ্লে, রেজ়োলিউশন, ক্যামেরা থেকে শুরু করে আরও কত কী, ঠিক তখনই বন্দিদের সঠিক ফোনের সন্ধানে থাকে একটাই চাহিদা – কত ছোট সেই ফোন, শরীরের যে কোনও অঙ্গে সেটি আদৌ ঢুকিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে তো? মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক সংস্থা জ়্যাঙ্কো (Zanco) আজ থেকে অন্তত ছয় বছর আগে পৃথিবীর সবথেকে ছোট সেল ফোন (World’s Smallest Phone) নিয়ে হাজির হয়েছিল, যার নাম জ়্যাঙ্কো ফ্লাই। তার ঠিক পরের বছরই ২০১৭ সালে তার থেকেও ছোট আর একটি ফোন নিয়ে আসে জ়্যাঙ্কো টাইনি টিওয়ান (Zanco Tiny T1) নামে। এখনও পর্যন্ত সেটিই পৃথিবীর সবথেকে ছোট মোবাইল ফোন। আর সেই ফোনটি সবথেকে বেশি ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে কয়েদিদের মধ্যেই। এমনকি আজও বহু কয়েদি শরীরের গোপনস্থানে ঢুকিয়ে রেখে বহাল তবিয়তে জেলের ভিতরে জ়্যাঙ্কো টাইনি টিওয়ান ফোনটি ব্যবহার করে থাকেন।
ফোনটির বিশেষত্ব কী
জ়্যাঙ্কো টাইনি টিওয়ান-এর বিশেষত্ব হল, এটি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের থেকেও আকারে ছোট। ফোনটি মাত্র ৪৬.৭ মিমি দীর্ঘ এবং ওজন মাত্র ১৩ গ্রাম। আকার এবং ওজনের দিক থেকে ঠিক যেন একটা ইউএসবি ড্রাইভের মতোই। এই ফোন থেকে আপনি কল করতে পারবেন, পাঠাতে পারবেন টেক্সট মেসেজ বা এসএমএস-ও। মোট ৩০০টি ফোন নম্বর এবং ৫০টি পর্যন্ত এসএমএস-ও স্টোর করে রাখতে পারবেন এই ফোনে। জ়্যাঙ্কো টাইনি টিওয়ান ফোনের স্ক্রিনের পরিমাপ মাত্র ১২.৫ মিমি। তবে হ্যাঁ, ইন্টারনেট কানেক্ট করার কোনও অপশন ছোট্ট এই ফোনটিতে নেই।
কাদের দরকার এই ধরনের ফোন?
এই ডিভাইস যাঁরা তৈরি করেছেন, তাঁরা দাবি করছেন, খুব জরুরি ক্ষেত্রে এই ফোনটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তার থেকেও বড় কথা হল, এই ফোনে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি ব্যাটারি রয়েছে। তিন দিন পর্যন্ত ব্যাকআপ ধরে রাখতে পারে সেই ব্যাটারি। যদিও. লাগাতার ৩ ঘণ্টা কথা বলে গেলে তৎক্ষণাৎ তার ব্যাটারি শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে জ়্যাঙ্কো টাইনি টিওয়ান ফোন ব্যবহার করে গেলে তিন দিনই এটি ব্যাটারি ব্যাকআপ ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
কারা ব্যবহার করছে এই ফোন?
হিতের বিপরীত হয়েছে আর কী! ফোন তৈরি করা হয়েছিল এক উদ্দেশ্যে, আর এক অসৎ উদ্দেশ্যে ফোনটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেছে সংবাদমাধ্যম ভাইস ইন্ডিয়া। সেই পোস্টে বলা হয়েছে, নিতম্বের ভিতরে ভরে এই ফোনটি জেলের ভিতরে প্রবেশ করছে কয়েদিরা। ভাইস ইন্ডিয়া-র কাছে একজন প্রাক্তন কয়েদি দাবি করেছে, “অ্যামাজনে এই ধরনের ফোন ১০০ শতাংশ প্লাস্টিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর সেই ভাবে ফোনটি ব্যবহার করলে মেটালও ডিটেক্ট করতে পারে না।” একটু মজার ছলেই তিনি আরও যোগ করে বলেছেন, “আমার তো পায়ু সংক্রান্ত কোনও সমস্যা নেই। ধন্যবাদ বন্ধুরা!”
ভাইস ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই প্রাক্তন বন্দি বলেছেন, “জেলের অন্দরে সর্বস্ব ফোন, যেখানে নজর যাবে, সেখানেই ফোন। কর্মীরা ফোনগুলি নিয়ে আসে, অথবা আপনি অন্য বন্দির কাছ থেকে তাদের একটি উপকার করে বা তাদের কিছু দিয়ে এমনতর একটি ফোন কিনতে পারেন। লোকেরা সাধারণত তাদের নিজস্ব সেলেই এগুলি ব্যবহার করে। তবে এটি এমন পর্যায়ে চলে যায়, যেখানে তারা কেবল জিম চেঞ্জিং রুমেও সেগুলি ব্যবহার করে, ঠিক যেমনটা বাইরের বিশ্বে হয়ে থাকে।”
ভাইস ইন্ডিয়া-র সেই পোস্টেই বলা হয়েছে, কয়েক দিন আগেই এক ব্যক্তির চুলের খোঁপা থেকে চারটি মোবাইল, চারটি সিম কার্ড এবং চারটি চার্জার পাওয়া গিয়েছিল। তারপরে সেখানে একজন বন্দিও ছিল, যার মলদ্বার থেকে দুটি মোবাইল ফোন, দুটি ব্যাটারি, প্লায়ার বা প্লাস, দুটি ড্রিল, একটি করাতের আটটি টুকরো, পাঁচটি পেরেক এবং তিনটি সিম কার্ড পাওয়া গিয়েছিল৷
ব্যান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল একটা সময়
২০১৭ সালে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যম আইটিপ্রো-র একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, এই ধরনের ফোন নিষিদ্ধ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বিচার সচিব ডেভিড লিডিংটন ডিসেম্বরের শেষ দিকে অনলাইন খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রি বন্ধ করার আহ্বান জানানোর পরে এই জাতীয় ছোট ফোনগুলি নিষিদ্ধ করা হতে পারে। লিডিংটন দাবি করেছিলেন যে, ফোনটি এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে সহজেই কারাগারে পাচার করা যেতে পারে এবং তাতে আখেরে অপরাধের সুবিধার্থে ব্যবহার করে অপরাধের মাত্রাই আরও বেড়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: বিএসএনএল ভ্যানিটি নম্বরের তুঙ্গে চাহিদা, আপনারও দরকার নাকি? কী ভাবে পাবেন?
আরও পড়ুন: এই মুহূর্তে দেশে ২৭ ইঞ্চির সেরা ৬ গেমিং মনিটর, রিয়্যালিস্টিক করে তুলবে যে কোনও গেম!
আরও পড়ুন: ওয়াটার প্রুফ এই নতুন ইয়ারবাডস লঞ্চ হয়েছে ভারতে, দাম কত? আর কী কী ফিচারই বা রয়েছে…