এক মাস হয়ে গেল পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপিত হয়েছিল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ (James Webb Telescope)। এবার সে নিজের গন্তব্যে পৌঁছে গেল, যা পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। অর্থাৎ ১৫ লক্ষ কিলোমিটার পথ পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ করার পরই তাকে পার্ক করা হয়েছে। সেখান থেকেই মহাশূন্যে নজর রাখবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। কী ভাবে এই ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছিল, তার নারী-নক্ষত্র তুলে ধরবে পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী টেলিস্কোপটি। এটি আসলে ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট বা এল২ (Lagrange point L2)। প্রসঙ্গত, ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট মহাকাশের এমনই একটি পয়েন্ট যেখানে কোনও বস্তুকে রাখলে তা নড়াচড়া করতে পারে না। দুটি বড় ভরের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কেন্দ্রাভিমুখী বলের সমান হয়ে যায় এই পয়েন্টে। এখানে স্পেসক্রাফ্টগুলি স্থির থাকতে পারে খুব সামান্য জ্বালানি শক্তিতে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার পর একটি ছবি (JWST Images) প্রকাশ্যে এসেছে।
পৃথিবী থেকে এই স্পেসক্রাফ্টের গন্তব্যে পৌঁছানোর পরের ছবিটি তুলেছে রোমের দ্য ভার্চুয়াল টেলিস্কোপ প্রজেক্ট ২.০। সিঙ্গেল ৩০০ সেকেন্ড এক্সপোজ়ারে ছবিটি তোলা হয়েছে। সেটি আনফিল্টার্ড, রিমোটলি সংগ্রহ করা হয়েছে একটি রোবটিক ইউনিটের মাধ্যমে। ছবিটি রিলিজ় করার সময় এই প্রজেক্ট টিমের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, “আমাদের রোবোটিক টেলিস্কোপ, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের আপাত গতি ট্র্যাক করেছে, যা কেন্দ্রে একটি তীর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে।”
গত বছরের শেষ দিকে ক্রিসমাসের দিন উৎক্ষেপিত হয়েছিল জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। তার ঠিক এক মাস পরে গন্তব্যে পৌঁছানোর পরক্ষণেই ছবিটি তোলা হয়। নির্দেশ অনুযায়ী, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ তার রকেট থ্রাস্টারগুলিকে প্রায় পাঁচ মিনিটের জন্য নির্ধারিত স্থানে সূর্যের চারপাশে কক্ষপথে ছুঁড়েছে।
পাঁচ মাসের দীর্ঘ সময়ব্যাপী কমিশনিং ফেজ়ে ঢুকতে চলেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। তাতে ওয়েব সায়েন্স কমিউনিকেশনের ডেপুটি প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট অ্যাম্বার স্ট্রন বলছেন, “আমরা আশা করছি যে, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের প্রথম বৈজ্ঞানিক ছবিগুলিও পাঁচ মাস পরই পেয়ে যাব।” নাসা-র তরফ থেকে বলা হচ্ছে, সমস্ত ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টেই মাধ্যাকর্ষণের সাম্য থাকে। যদিও সবক’টি পয়েন্টই স্থিতিশীল নয়।
প্রথম ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট বা এল১-এ বহু সোলার অবজারভেটরি রয়েছে। আর সেই কারণেই সেই জায়গা ওয়েব-এর জন্য সুরক্ষিত নয়। এল২ পয়েন্টই জেমস ওয়েবের জন্য সবথেকে সুরক্ষিত একটি জায়গা। কারণ এখানে মহাকাশের একই দিকে থাকে সূর্য, চাঁদ এবং পৃথিবী, যার ফলে টেলিস্কোপের অপটিক্স এবং অন্যান্য যন্ত্রাদি চিরস্থায়ী ভাবে ছায়ায় থাকতে পারবে। আর ছায়ায় থাকলে টেলিস্কোপটি ঠান্ডা থাকবে এবং ইনফ্রারেড সেন্সিটিভিটি বেশি ভাল ভাবে কাজ করবে।
১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে যখন প্রথম তারা ও ছায়াপথ তৈরি হয়েছিল, সেই সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নিয়ে যাবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। পরিসংখ্যান বলছে, এই বিগ ব্যাঙ থেকে ১০০ মিলিয়ন বছরের কাছাকাছি সময়, যখন এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রজেক্টের ম্যানেজার, কেইথ প্যারিশ, বলছেন, “ওয়েব আনুষ্ঠানিক ভাবে স্টেশনেই রয়েছে। উল্লেখযোগ্য একমাসের অপেক্ষাটা এর মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে গেল।”
এই ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের থাকার অর্থ হল, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বেরও চার গুণ বেশি দূরত্বে চলে গেল এটি। মনে করা হচ্ছে, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ সবথেকে ভাল অপারেট করতে এক দশকেরও বেশি সময় নেবে, হতে পারে তা দুই দশক। আর পুরো সময়টা গন্তব্যেই থেকে যাবে এটি।
আরও পড়ুন: এবার মহাকাশে স্থাপন করা হচ্ছে ফিল্ম স্টুডিয়ো, সঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে স্পোর্টস এরিনাও…
আরও পড়ুন: মহাকাশচারীদের জন্য টেকসই খাবারের আইডিয়ার খোঁজে NASA, পুরস্কারমূল্য ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার
আরও পড়ুন: ভুলে যাওয়া ভুল নয়, আসলে তা শেখারই অঙ্গ, দাবি বিজ্ঞানীদের