Attack on Donald Trump: ৩৬ ঘণ্টা পার, ট্রাম্পের উপর হামলা নিয়ে অকূলপাথারে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস!
নিউ ইয়র্ক টাইমসের দাবি, ট্রাম্পের মাথা উড়িয়ে দিতেই আততায়ী গুলি চালিয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে সেটা স্পষ্ট। কিন্তু কেন? ট্রাম্পের উপর হামলার পর থেকে এটাই কোটি টাকার প্রশ্ন। এবং ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পরেও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস।
দিনে দুপুরে গুলি খেলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যিনি আবার আমেরিকায় হায়েস্ট ক্যাটেগরির নিরাপত্তা বলয়ে থাকা নেতা। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীও বটে। ভরা জনসভায় কিনা সেই ট্রাম্পকে লক্ষ্য করেই গুলি চলল। ভাগ্য ভাল বলে গুলিটা কান ঘেঁসে বেরিয়ে গিয়েছে। না হলে নাক বা কপাল ফুটো করে বেরিয়ে যেত।
গুলি চলল, আর ট্রাম্পের মুষ্টিবদ্ধ হাতের ছবিটা আইকনিক ছবি হয়ে গেল। এই ছবিই ট্রাম্পকে আরও একবার প্রেসিডেন্ট করে দিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সোমবার বিকেল পর্যন্ত রিপাবলিকান প্রার্থী জনপ্রিয়তা হু হু করে বেড়ে চলেছে। এই মুহূর্তে আমেরিকার ৬৯ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পকেই প্রেসিডেন্ট পদে চাইছেন। আসলে চারদিন আগে জো বাইডেন সাংবাদিক সম্মেলন করে গোলের পর গোল খেয়েছেন। কখনও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে পুতিন বলে বলেছেন, আবার কখনও নিজের সহকর্মী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলে অবলিলায় বক্তব্য রেখেছেন। সেই সময় জর্জ ক্লুনির মতো বাইডেন সাপোর্টারকেও বলতে হয়েছে, মিঃ বাইডেন, এবার আপনার রিটায়ার করা উচিত। সেই সাংবাদিক সম্মেলনের পর বাইডেনের জনপ্রিয়তা ৫০ শতাংশের নীচে নেমে গিয়েছিল। ট্রাম্পের উপর হামলার ঘটনায় সেটায় কার্যত ধস নামল।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের দাবি, ট্রাম্পের মাথা উড়িয়ে দিতেই আততায়ী গুলি চালিয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে সেটা স্পষ্ট। কিন্তু কেন? ট্রাম্পের উপর হামলার পর থেকে এটাই কোটি টাকার প্রশ্ন। এবং ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পরেও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস। উলটে প্রতি পদক্ষেপে সিক্রেট সার্ভিসের ব্যর্থতার যে সব অভিযোগ সামনে আসছে, তাতে অন্যদেশ হলে এতক্ষণে বড়কর্তার চাকরি নিয়ে টানাটানি হত। এমন ঘটনার ক্ষেত্রে সিক্রেট সার্ভিসের দিকেই অভিযোগ আঙুল ওঠে এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ট্রাম্পের ঘটনায় বিষয়টা কিছুটা হলেও আলাদা। এক্ষেত্রে কিন্তু সিক্রেট সার্ভিস টিমের চূড়ান্ত গাফিলতি ভিডিয়োতেই স্পষ্ট। কীরকম? ট্রাম্পের উপর হামলার ঠিক দু-মিনিট আগেও তার পিছনে পজিশন নিয়ে ছিলেন সিক্রেট সার্ভিসের স্নাইপার টিম। তাঁদের সঙ্গে শক্তিশালী দূরবীণ, প্রটেক্টেড লেন্স; সবই ছিল। পেনসিলভ্যানিয়ায় ট্রাম্পের মঞ্চ থেকে ১২০ মিটার দূরে একটি বাড়ির ছাদ থেকে গুলি চালায় আততায়ী। ছাদে ওঠে পজিশন নেওয়া ও গুলি চালানো, সবমিলিয়ে খুব কম করেও তিন থেকে পাঁচ মিনিট সময় লাগার কথা। এই তিন মিনিটে ঢিল ছোঁড়া দুরত্ব থেকেও আততায়ীকে স্পট করতেই পারেনি সিক্রেট সার্ভিস স্নাইপার টিম। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি যে আততায়ী স্নাইপার টিমের কারও নজরে পড়েনি। তাই বিনা বাধায় ট্রাম্পকে গুলির নিশানায় নিয়ে নেয় ২০ বছরের টমাস ম্যাথিউ কুক। সব অর্থেই মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের মুখে চুনকালি পড়ার মতো ঘটনা।
তবে এবারই তো প্রথম নয়, আমেরিকার এমন ঘটনা বারেবারে ঘটেছে। ২০০৫ সালে জর্জ ডবলিই বুশের সভা মঞ্চে গ্রেনেড বিস্ফোরণের চেষ্টা। রোনাল্ড রেগন, গেরাল্ড ফোর্ড, জন এফ কেনেডির মতো প্রেসিডেন্টদের হত্যা করতে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে। প্রতিবার মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস আশ্বাস দিয়েছে, এবারই শেষ আর এমন ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু সেই আশ্বাস রাজনীতিকদের আশ্বাসের মতোই হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে। রোনাল্ড রেগনের উপর হামলায় হামলায় প্রধান অভিযুক্ত ৪৫ বছর জেল খেটে খালাস হয়ে গিয়েছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো সংবাদপত্রের হেডলাইন তাই বোধহয় হেডলাইন করেছে, শেমফুল ফেলিওর অফ সিক্রেট সার্ভিস, এগেইন অ্যান্ড এগেইন। বাকি নিউজপেপার আর মিডিয়ার বক্তব্যও প্রায় একই রকম।
এখন প্রশ্ন হলো, ২০ বছরের এই যুবক, টমাস হঠাত্ করে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে গুলি করতে গেল কেন? পেনসিলভ্যানিয়ার বেথেল পার্কে বাড়ি। কলেজে পড়ার পাশাপাশি স্থানীয় হাসপাতালে কমিউনিটি কিচেনে পার্ট টাইম জব করতো। ট্রাম্পের পার্টি, অর্থাত্ রিপাবলিকান পার্টির সদস্য হতে পেনসিলভ্যানিয়ায় আবেদন করেছিল। পূর্ণ সময়ের সদস্যপদ না পেলেও ভলান্টিয়ার হিসাবে মনোনীতও হয়েছিল। সবকিছু ঠিকঠাক চললে নভেম্বর প্রথমবার প্রেসিডেন্টস নির্বাচনে ভোট দিত টমাস। নিজের বাবার নামে রেজিস্ট্রার্ড রাইফেল নিয়ে ট্রাম্পের উপর গুলি চালিয়েছিল সে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, গত ২০২১ থেকে টানা দেড় বছর পেনসিলভ্যানিয়ার সবকটি শুটিং ক্লাবে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেছে সে। ৭-৮টি ক্লাব প্রথমদিন দেখেই তার আবেদন বাতিল করে দেয়। বাতিলের কারণ মোটামুটি একইরকম। টমাস সাংঘাতিক খারাপ শুটার। দু-হাত দূরত্বে থাকা টার্গেটও মিস করে। টমাসকে দিয়ে আর যাই হোক, শুটিং জিনিসটা হওয়ার নয়। শেষ পর্যন্ত ক্লেয়ার্টন শুটিং ক্লাবে সুযোগ পেলেও কয়েক মাসের বেশি টিকতে পারেনি। তবে পড়াশোনায় টমাস রীতিমতো ভাল। পেনসিলভ্যানিয়ার স্থানীয় স্কুল থেকে ভাল নম্বর দিয়ে পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছিল। টমাসের ফাইনাল হাই স্কুল রিপোর্টও বেশ ইন্টারেস্টিং। এখানে লেখা রয়েছে, টমাস শান্তশিষ্ট, পড়াশোনায় মনোযোগী। সবসময় নিজের মধ্যে ডুবে থাকা টমাস ভবিষ্যতে গবেষণার জন্য তৈরি হচ্ছে। এখানে এমনকি কলেজেও টমাস মাথা গরম করতেও কেউ দেখেনি। তাঁর সোশাল মিডিয়া পোস্টে না আছে কোনও বিতর্কিত মন্তব্য, না আছে কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য। সদ্য টিন এজ পেরনো এমন এক আমেরিকান আর একটু হলেও দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের মাথা উড়িয়ে দিত। মার্কিন সিক্রেটের ব্যর্থতা নিয়ে এর পরেও প্রশ্ন উঠবে না? তবে শুধু ট্রাম্প নয়, মোক্ষম সময়ে বারবারই ফেল করে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস। ইতিহাস অন্তত তাই বলছে।