Loksabha Election 2024: ১৬ বছর পর সিঙ্গুরে কান পাতলে শোনা যায়, ‘শিল্প হলে ভাল হত’
টাটার থেকে ফেরত পাওয়া জমি আজও চাষযোগ্য হয়নি। সেসব জমিতে ফুটে বুনোফুল। মরুভূমি না হলেও, ধূ ধূ ধুসর। মাটিতে মিশে কাঁকর, পাথর। জমিতে এখনও পড়ে সিমেন্টের স্ল্যাব। সে জমিতে আর যাই হোক সবুজের প্রাণ নজরে আসে না। আর টাটা কারখানার থেকে দূরত্ব বাড়ালেই নজরে আসে...
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। নেতা-মন্ত্রীরা ব্যস্ত নির্বাচনী প্রচারে। শাসক নেতাদের কথায় যেখানে বারবার উঠে আসছে মানুষের জন্য করা তাঁদের কাজের ফিরিস্তি। সেখানে বিরোধীদের বক্তব্যে আগামীর স্ট্রাটেজি, মানুষের জন্য ভাল আরও ভাল করার প্রতিশ্রুতি। আর আমরা ব্যস্ত, বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখতে। বাংলার নানা প্রান্তের আসল উন্নয়নের ছবি তুলে ধরতে। এবারের গন্তব্য হুগলির সিঙ্গুর। যে জায়গাকে বাদ দিয়ে বঙ্গ রাজনীতির চর্চা প্রায় অসম্ভব।
২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটার কারখানা তৈরির শুরু থেকে ২০০৮-এ বাংলা থেকে টাটা ন্যানোর বিদায়, সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের কথা কম-বেশি সকলেরই জানা। তৎকালীন বাম সরকারের আমলের এই জমি আন্দোলনের ফসলই ঘরে তুলেছিল তৃণমূল। ২০১১-তে সেই আন্দোলনের উপর ভিত্তি করেই সরকার গড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চাষযোগ্য জমিতে টাটা ন্যানোর কারখানা তৈরির প্রতিবাদে পথে নামেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ। আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশে ১৪ দিন ধরে ধর্নায় বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৎকালীন রাজ্যের বিরোধী নেত্রী। জয়ও হয়, ২০০৮-এর অক্টোবরে টাটার কর্নধার সিদ্ধান্ত নেন বাংলা থেকে ন্যানোর কারখানা সরিয়ে নেওয়ার। জমি দিতে অনিচ্ছুক চাষিরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তাঁদের চাষের জমিতে আবার ফলবে সোনার ফসল। এরপর ২০১১-তে পালা বদল। তৃণমূল প্রতিশ্রুতি দেয় সিঙ্গুরের টাটাদের তৈরি কারখানার ক্রংক্রিট সরিয়ে চাষযোগ্য করে দেবে বিঘের পর বিঘে জমি…।
২০২৪, দুর্গাপুর হাইওয়ে দিয়ে বর্ধমানের দিকে যেতে বাঁ দিকে সিঙ্গুরের দুই ছবি নজরে আসে। টাটার থেকে ফেরত পাওয়া জমি আজও চাষযোগ্য হয়নি। সেসব জমিতে ফুটে বুনোফুল। মরুভূমি না হলেও, ধূ ধূ ধুসর। মাটিতে মিশে কাঁকর, পাথর। জমিতে এখনও পড়ে সিমেন্টের স্ল্যাব। সে জমিতে আর যাই হোক সবুজের প্রাণ নজরে আসে না। আর টাটা কারখানার থেকে দূরত্ব বাড়ালেই নজরে আসে কচি সবুজ রং। এখন ধান চাষের পালা যে। সবুজের এই হেরফেরই শুধু ওখানের চাষিদের না সাধারণেরও বুক কাঁপে। টাটা কারখানার সেই জমির পাশের এলাকা দিয়ে হাঁটলে বুক হু হু করে। জমিতে হাল চললেই যে সংসারের চাকা গড়াবে সে তো সব চাষিরই জানা। তবু ২০০৬ সালে কিছু চাষি স্বপ্ন দেখেছিল কারখানার। স্বপ্ন দেখেছিল গ্রামের মানুষের রোজগারের। বহু চাষি তার বিরোধিতা করে, যার ফলস্বরূপ বিদায় নেয় টাটা। ১৬ বছর পেরিয়েছে, এলাকার ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক চাষি ও তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের গলার প্রায় এক সুর, কারখানাটা হলে ভাল হত…