Politics: রাজনীতির মাত্র ৭টা ফর্মুলা! মেনে চললেই ভোটে বারবার জিতে ফেরা কেউ আটকাতে পারবে না
Politics: বইয়ে দেখানো হয়েছে, ক্ষমতার আসার সমীকরণ সব দেশে, সব দেশে একইরকম। ক্ষমতায় আসা, ক্ষমতায় থেকে যাওয়া, ভোটে জেতা ও সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা - এটার ম্যানেজমেন্টই হল রাজনীতি।
আজ, শনিবার মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ। ধরা যাক, মহারাষ্ট্রে ‘মহাযুতি’কে সরিয়ে মহা বিকাশ আগাড়ি জোট ক্ষমতায় এল অথবা ঝাড়খণ্ডে জেএমএম-কংগ্রেসকে সরিয়ে রাজ্য দখল করল এনডিএ শিবির! যদি সেটাই হয়, তা হলে কী প্রমাণ হবে? ক্ষমতাসীন জোট জনগণের প্রত্যাশা পূরণ না করাতেই হারতে হল? নাকি জাত-পাতের সমীকরণের কাছে হার?
তবে এর কোনওটাই আসল কারণ নাও হতে পারে। ভোটে কোন দল, কেন জেতে, কেন পরপর দুই-তিন এমনকী চারবারও ক্ষমতায় ফেরে একই দল? ভোটাররা বারবার কেন একটি বিশেষ দল বা নেতাকেই ভোট দিয়ে ক্ষমতায় ফেরান? বহু, বহু বছর ধরে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন ভোট-পণ্ডিতরা। উত্তর খুঁজছেন রাজনীতির কারবারিরাও। খুব একটা কিছু লাভ হয়নি।
২০২৪ সালের নভেম্বরে হঠাত্ করে দুনিয়া জুড়ে এই নিয়ে নতুন করে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। আলোড়ন একটা বইকে নিয়ে। ‘দ্য ডিক্টেটরস হ্যান্ডবুক’। হোয়াই ব্যাড বিয়েভিয়ার ইজ অলমোস্ট অলওয়েজ গুড পলিটিক্স – এই বইটা সেই প্রশ্নটার উত্তর কিছুটা হলেও দিয়েছে। বইটি লিখেছেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক। এই দু’জন ৮০টি দেশের রাজনৈতিক কাঠামো, ভোটের ইতিহাস যাচাই করেছেন। তাঁরা প্রমাণ দিয়ে দেখাচ্ছেন যে, একজন শাসক, একজন রাজনেতা বারবার ভোটে জিততেই পারেন। যদি সাতটা ফর্মুলা তাঁর জানা থাকে এবং তিনি সেটা ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলেই কেল্লাফতে।
বইতে দাবি করা হয়েছে, সাত ফর্মুলা কাজ করলে একজন মুখ্যমন্ত্রী বারবার পদে ফিরবেন। একজন প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টও বহু বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভোট হবে, মানুষ ভোট দেবেন এবং শাসক বারবার ক্ষমতায় ফিরবেন। উন্নয়নের কথা না ভাবলেও চলবে! কারণ উন্নয়ন বা জনতার ভাল করা মানেই ক্ষমতার থাকার গ্যারান্টি নয়।
বইয়ের নামে ডিক্টেটর কথাটা থাকলেও বইটা কিন্তু ডিরেক্টরদের নিয়ে নয়। রাজনীতিবিদ, এবং আরও ভাল করে বললে রাজনীতির সমীকরণ নিয়ে। বইয়ে দেখানো হয়েছে, ক্ষমতার আসার সমীকরণ সব দেশে, সব দেশে একইরকম। ক্ষমতায় আসা, ক্ষমতায় থেকে যাওয়া, ভোটে জেতা ও সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা – এটার ম্যানেজমেন্টই হল রাজনীতি।
ওই বই-তে গবেষকদের বক্তব্য, শাসককে ঘিরে যে কোর গ্রুপ থাকে, সেই গ্রুপই আসল ক্ষমতার উত্স। যিনি নিজের কোর গ্রুপকে ঠিকঠাক সামলাতে পারেন, তিনি বহু বছর ক্ষমতায় থাকেন। কোর গ্রুপের হাতে পরই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হল ‘মানি ম্যানেজমেন্ট’। যিনি মানি ম্যানেজমেন্টে যত দক্ষ, তিনি তত বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবেন। বৈধ-অবৈধ পথে শাসকের হাতে যে টাকা আসে, সেটার ভাগ-বাঁটোয়ারা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রীতিমতো কেস স্টাডি করে সেটা দেখানো হয়েছে। কোথা থেকে টাকা আসছে? কার মাধ্যমে আসছে? আর সেই টাকা কোথায় যাচ্ছে? শাসককে জানতেই হবে।
বইয়ের দুই লেখক বলছেন, সরকার সাদা পথে আয় করে বটে, তবে শাসক বা ক্ষমতাসীন দলের সেই দায় নেই। তাঁদের রোজগারের বহু পথ আছে। সেই রোজগারের রাস্তাগুলোর ক্ষমতা শাসককে নিজের হাতেই রাখতে হবে। এটা না হলে টাকা-পয়সার জোগানে সমস্যা হবে এবং শাসকের গদি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। পাশাপাশি শাসকের নিজস্ব একটা সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেই সুবিধাভোগী শ্রেণীর সংখ্যা নিয়মিত ভাবে বাড়িয়ে যেতে হবে।
বইতে বলা হচ্ছে, মোট ভোটারদের ২৫ শতাংশকে সুবিধাভোগী শ্রেণিতে পরিণত করলেই শাসক অনেকটা নিশ্চিত। বারবার জিতে আসা আর আটকাবে না। আর এই ফর্মুলা নাকি সব দেশে, সব জায়গায় কমবেশি সমান কার্যকর। বইতে আমেরিকা, ইতালি, হাঙ্গেরি, ঘানা এমনকী ভারতের উদাহরণ দিয়েও বোঝানো হয়েছে। এই ৭ ফর্মুলা নিয়ে দুনিয়া জুড়ে জোর আলোচনা চলছে। কেউই পুরোপুরি এই সাত ফর্মুলাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছেন না।