clashes in Bhatpara: বাতাসে বারুদের গন্ধ, ৫ বছরেও বদলায়নি ভাটপাড়া!

clashes in Bhatpara: বাতাসে বারুদের গন্ধ, ৫ বছরেও বদলায়নি ভাটপাড়া!

সঞ্জয় পাইকার

|

Updated on: Nov 13, 2024 | 10:39 PM

Clashes in Bhatpara: ভোট হল নৈহাটিতে, লাশ পড়ল ভাটপাড়ায়! চায়ের আড্ডায় চলল বুলেট। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল সন্ত্রাস তো নতুন কিছু নয়, পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের কয়েকদিন আগে থেকে যে অশান্তি শুরু হয়েছিল তা মাঝে কয়েকবার বন্ধ থাকলেও গন্ডগোল থামছে না।

কলকাতা: ভোট হচ্ছে নৈহাটিতে। আর তার থেকে মাত্র পাঁচ কিমি দূরত্বে ভাটপাড়ায় সকাল সকাল শ্যুটআউট। ভোটকেন্দ্রে জোরদার নিরাপত্তা, তৎপর রাজ্য পুলিশও, তারপরও গুলি-মৃত্যু? পর পর ৪টি গুলি, মৃত্যু হয় ভাটপাড়া পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অশোক সাউয়ের। গুলি চলল চায়ের দোকানে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই। কিন্তু কেন? নতুন কমিশনারেট, বার বার সিপি বদল তবু কেন সামলানো যাচ্ছে না এই এলাকা? এই এলাকার মানুষকে কেন মৃত্যুকে সঙ্গে করেই রোজ চলতে হবে? আপাত শান্ত এলাকা কবে থেকে অশান্ত অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠল?

সকাল সকাল সবে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছে নৈহাটি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপ। ভোট শুরু হতে না হতেই বুলেটের আওয়াজ নৈহাটি লাগোয়া ভাটপাড়ায়। যে ভাটপাড়া, গত কয়েক বছরে গুলি-বোমা-হানাহানির পাড়া হয়ে উঠেছে। বুধবার সকালে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন তৃণমূল নেতা অশোক সাউ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পালঘাট রোডে চায়ের দোকানে রোজকার মতো গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা। সেই সময় মোটরবাইকে করে দুই দুষ্কৃতী এসে চার রাউন্ড গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন অশোক। গুলি লাগে তৃণমূল নেতার পিঠে। টোটোয় চাপিয়ে ভাটপাড়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেত শেষ!

আবার খুনোখুনির রাজনীতি ফিরল ভাটপাড়ায়। কথায় কথায় চলছে গুলি! ব্যারাকপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের যুক্তি, তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে গন্ডগোলে এই খুন। আর শাসক দল, তারা এই খুনে অর্জুন সিংয়ের ষড়যন্ত্র দেখছে।

তাহলে কী দাঁড়াল? ভোট হল নৈহাটিতে, লাশ পড়ল ভাটপাড়ায়! চায়ের আড্ডায় চলল বুলেট। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল সন্ত্রাস তো নতুন কিছু নয়, পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের কয়েকদিন আগে থেকে যে অশান্তি শুরু হয়েছিল তা মাঝে কয়েকবার বন্ধ থাকলেও গন্ডগোল থামছে না।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সন্ত্রাস-

৪ অক্টোবর, ২০২৪: অর্জুনের বাড়ির সামনে গুলি, বোমাবাজির অভিযোগ
২৮ অগস্ট, ২০২৪: বিজেপি নেতা প্রিয়াঙ্কু পাণ্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে ‘গুলি-বোমা’
২১ জানুয়ারি, ২০২৩: নয়াবাজার এলাকায় উদ্ধার ১৫০ তাজা বোমা
২৪ অক্টোবর, ২০২২: কালীপুজোর মণ্ডপে গুলি, জখম যুব তৃণমূল নেতা
২৫ অক্টোবর, ২০২২: বল ভেবে বোমায় লাথি! বিস্ফোরণে মৃত শিশু
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২: ক্লাস চলাকালীন টিটাগড়ে স্কুলের ছাদে বিস্ফোরণ
২৭ জুলাই, ২০২১: হুমকি চিঠি দিয়ে তৃণমূল নেতাকে গুলি !
৭ জুন, ২০২১: অর্জুন সিংয়ের বাড়ির কাছে বোমাবাজি
৪ অক্টোবর, ২০২০: টিটাগড় থানার কাছে খুন অর্জুন ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯: কাঁকিনাড়া স্টেশনে বোমাবাজি, যুবকের মৃত্যু
জুলাই, ২০১৯: ভাটপাড়া থানার সামনেই বোমাবাজি, সংঘর্ষ
জুন, ২০১৯: গন্ডগোলের জের, থানা উদ্বোধন না করে ফেরেন ডিজি
২১ মে, ২০১৯: এলোপাথাড়ি বোমাবাজি, গুলি কাঁকিনাড়া স্টেশনে

তার মানে সেই ২০১৯ থেকে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেল। ভাটপাড়ার ছবি বদলাল না এতটুকু। এলাকার অনেকেই বলেন, অর্জুন সিংয়ের শিবির বদলের পর থেকেই শুরু হয় অশান্তি। এলাকার রাজনৈতিক ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে চলে টক্কর। শুরু হয় বোমা-গুলির লড়াই। খুনোখুনি।

এই অঞ্চলের রাজনীতিতে এক সময়ে অর্জুন সিংহই ছিলেন শেষ কথা। বাম আমল থেকে তিনি দীর্ঘ দিনের তৃণমূল বিধায়ক। ভাটপাড়ার পুরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায় ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে থেকে। সে বার ভোটে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে টিকিট চেয়েছিলেন অর্জুন। রাজি হননি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মার্চের শেষ দিকে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ব্যারাকপুরে প্রার্থী হন অর্জুন। বিজেপির টিকিটে জিতে সাংসদ হলেও, বছর দুয়েক পর আবার তৃণমূলে ফেরেন। তারপর অবশ্য খানিকটা পরিস্থিতি বদলায় ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। গন্ডগোল কমতে থাকে ধীরে ধীরে। ২০২৪-এ লোকসভা ভোটে আবার তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে ফেরেন। ফের শুরু হয় গন্ডগোল।

খোদ অর্জুন সিংয়ের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে। তার ঘনিষ্ঠদের বাড়িতেও হামলা হয়। এবার তা খুনোখুনির পর্যায়ে পৌঁছে গেল। প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের জন্যই কি এত গন্ডগোল ব্যারাকপুর কমিশনারেটে?