বগটুই: ২৪ ঘণ্টা পার হয়েছে। বগটুইতে কান পাতলে বোধহয় কাক-পক্ষীর আওয়াজ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। তল্পিতল্পা নিয়ে গ্রাম ছেড়েছেন মানুষ। মধ্যরাতে ওই ১০ জনের আর্তনাদ কারা শুনেছিল, সেই উত্তর দিতে সাহস পাননি কেউ। আর ওই ১০ জনের মধ্যেই ছিল নবদম্পতি সাজিদ-মর্জিনা। সোমবার সকালেই নানুর থেকে বগটুই পৌঁছেছিলেন তাঁরা। রাতে এক বন্ধুকে ফোনও করেছিলেন সাজিদ। বিপদে পড়েছেন বুঝতে পেরেই সম্ভবত পুলিশ নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। তবে সেটাই যে সাজিদের শেষ কথা হবে, তা ভাবেননি বন্ধু, পরিজনেরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফোন বন্ধ পেয়েই বাড়ে দুশ্চিন্তা। তারপর খবর পেয়ে রামপুরহাট হাসপাতালে ছুটে যান আত্মীয়রা। ততক্ষণে সব শেষ। সাজিদের এক বন্ধু জানিয়েছেন, ‘মাথার খুলিটুকু ছাড়া লাশগুলো চেনাই যায়নি।’
মাস দুয়েক আগেই বিয়ে হয়েছিল সাজিদের। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি বিয়ে হয় কাজি সাজিদুল রহমান ও মার্জিনা খাতুনের। নানুরের দান্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাজিদ। স্ত্রীর বাপের বাড়ি বগটুইতে যাওয়ার জন্য সোমবার বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। সাজিদুল ও স্ত্রী মার্জিনা সোমবার সকাল ৯ টা নাগাদ নানুরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সেই মতো দুপুর ১২ টা নাগাদ রামপুরহাটে বগটুই গ্রামে পৌঁছান তাঁরা। বাড়িতে ফোন করে পৌঁছে যাওয়ার কথাও জানান। তারপর মঙ্গলবার রাত ৯ টা সময় এক বন্ধুকে ফোন করেছিলেন সাজিদ। বলেছিলেন পুলিশ নিয়ে আসতে। তারপর আর কথা হয়নি। তারপর মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিবার ও বন্ধুরা সাজিদকে ফোন করলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সাজিদের বাবা কাজি নুরুল জামাল জানিয়েছেন, বন্ধুর কাছে যে ফোন এসেছিল সে কথা তাঁরা শুনেছিলেন। কিন্তু পরিনতি যে এমন হতে পারে সে কথা ভাবতেও পারেননি তাঁরা। সাজিদের এক বন্ধু জানান, তিনি জানতে পেরেছিলেন রাত ৯ টার পর আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে সকাল ১০ টার সময় বেরিয়ে রামপুরহাট হাসপাতালে যাই। গিয়ে যা দেখলাম, লাশ চেনা যায়নি। মাথার খুলিটুকু শুধু আছে, আর কিছু নেই।’
রামপুরহাটের বগটুইয়ের ‘হত্যাকান্ড’ নিয়ে কার্যত তোলপাড় রাজ্য। গোটা ঘটনায় সন্ত্রস্ত বগটুইয়ের বাসিন্দারা। একে একে গ্রাম ছেড়েছে বহু পরিবার। রামপুরহাট পরিণত হয়েছে আতঙ্কপুরীতে। জনশূন্য গ্রামে মঙ্গলবার রাতে দলা পাকানো দেহগুলি নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের শেষকৃত্যও সম্পন্ন হয়েছে। মৃতদের মধ্যে শিশু ও মহিলা রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। সোমবার রাতে খুন হন তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই ঘটনা। একাধিক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত অনেকের। দমকলবাহিনী বলছে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। ঘটনার তদন্তে সিট গঠন করেছে রাজ্য।
আরও পড়ুন : Bagtui Massacre: ‘পুলিশের সামনেই দরজায় তালা ঝুলিয়ে আগুন’, বিস্ফোরক দাবি প্রত্যক্ষদর্শীর