শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গের সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অন্যতম স্তম্ভ বলা যেতে পারে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ (North Bengal Medical College)। উত্তরের একাধিক জেলার মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য নির্ভর করেন এই মেডিক্যাল কলেজের উপর। নিত্যদিন প্রচুর রোগী আসেন পরিষেবার জন্য। কিন্তু যে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজকে উত্তরের জেলাগুলির জন্য সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কার্যত মেরুদণ্ড বলা যায়, সেখানেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে মেলে না চিকিৎসার সুযোগ। সেক্ষেত্রে যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে, তাঁদের নির্ভর করতে হয় বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপর। আর যাঁদের সেভাবে আর্থিক সামর্থ্য নেই, তাঁদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ছুটতে হয় কলকাতায়। এটাই বাস্তব দৃশ্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের। আর এইসব পরিষেবাগুলি না পাওয়ার ফলে অনেক রোগী ও তাঁর পরিজনদেরই চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
আজকাল যেভাবে সাধারণ মানুষজনের কাজের চাপ বাড়ছে, তাতে স্ট্রোক, হার্ট ব্লক ও সমজাতীয় সমস্যাও বাড়ছে। কিন্তু শিলিগুড়ি ও আশপাশের এলাকায় কারও হার্ট ব্লক বা সমতুল্য সমস্যার জন্য নির্ভর করতে হয় নার্সিং হোম ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপর। শিলিগুড়ির নার্সিংহোমগুলিতে অ্যাঞ্জিওগ্রাম ও অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির জন্য রোগীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। কেন এই অবস্থা? কারণ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে অ্যাঞ্জিওগ্রাম বা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির জন্য কোনও বন্দোবস্ত নেই। এই ধরনের কোনও সমস্যা নিয়ে রোগীরা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে গিয়ে হাজির হলে, তাঁদের কলকাতায় এসএসকেএমে পাঠানোর কথা বলে দেওয়া হয়। যাঁদের সামর্থ্য থাকে, তাঁরা তখন শিলিগুড়ির বেসরকারি নার্সিংহোমে রোগীকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান। অনেকে ধারদেনা করেও রোগীকে ভর্তি করান নার্সিংহোমগুলিতে। কারণ, এতটা দূরের পথ রোগীকে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চান না পরিজনরা। আর যাঁদের সামর্থ্য থাকে না, তাঁদের অগত্যা ঝুঁকি নিয়েই ছুটতে হয় কলকাতায়।
এদিকে শুধুমাত্র আঞ্জিওগ্রাম বা আঞ্জিওপ্ল্যাস্টিই নয়, আরও অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা রয়েছে। যেমন নিউরো সার্জারির ক্ষেত্রেও নিয়মিত পরিষেবা এখানে পাওয়া যায়নি। কিছু কিছু চিকিৎসা হয়েছে বটে, কিন্তু নিয়মিত পরিষেবা এখনও অমিল।
যদিও মেডিক্যালের কর্তারা বলছেন, যে কোনও হাসপাতালই, তা সে যতই উন্নত মানের হোক না কেন সেখানে কিছু না কিছু খামতি থেকেই যায়। আঞ্জিওগ্রাম বা আঞ্জিওপ্ল্যাস্টির সমস্যার কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁরা। বলছেন, যেসব রোগীদের আঞ্জিওগ্রাম বা আঞ্জিওপ্ল্যাস্টি প্রয়োজন, সেটি এখানে ক্যাথল্যাব চালু হলেই শুরু হয়ে যাবে। আপাতত এই ধরনের কেসগুলি কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেক্ষেত্রে দুই হাসপাতালের মধ্যে কথা বলে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।