হুগলি: এক কিলো টম্যাটোর দাম এক টাকা। মাঠ থেকে টম্যাটো তোলার খরচ উঠছে না। তাই জমিতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। চাষিরা বলছেন, গাছ কেটে ফেলতে হবে। অসময়ে চাষের পরামর্শ দিল উদ্যান পালন দফতর।
হুগলি জেলায় টম্যাটো চাষ হয় ১৪ হাজার ১১ হেক্টর জমিতে। টম্যাটো উৎপাদন হয় প্রায় পঁচিশ হাজার মেট্রিক টন। বলাগড়, পাণ্ডয়া, পোলবা-দাদপুর,চণ্ডীতলা-সহ জেলার বিভিন্ন ব্লকে এখন ফলন্ত টম্যাটো গাছে ভর্তি।
হুগলির টম্যাটো বাইরের রাজ্যেও যায়। তবে এখন সেই টম্যাটো যাচ্ছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
চাষিদের মতে, এক বিঘা টম্যাটো চাষ করতে পঁচিশ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ টম্যাটো বিক্রি করে দশ হাজার টাকাও উঠছে না। বর্তমানে যা অবস্থা, জমিতে ফলন্ত গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। কারণ টম্যাটো তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচ উঠছে না। টম্যাটোর মতো হাইব্রিড শশা ২ টাকা কিলো, সিম, মটরশুঁটি, লাউ -সব সব্জির পাইকারি দাম এতটাই কম, চাষির চাষের খরচ উঠছে না।
এবারে শীতকালীন সব্জি চাষের জন্য ভাল আবহাওয়া ছিল। ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়নি। যার ফলে উৎপাদন বেশি হয়েছে।
জেলা উদ্যান পালন দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর শুভদীপ নাথ বলেন, “যাঁরা সব্জি চাষ করেন সারা বছর, তাঁদের অসময়ের চাষে উৎসাহী করা হচ্ছে। এছাড়া পলি হাউস তৈরি করে চাষ করার কথা বলা হচ্ছে। এই পলি হাউসে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে ৫০ শতাংশ। দু’রকম পদ্ধতিতে আমরা কৃষকদের বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করছি। খোলা মাঠে চাষ এবং আচ্ছাদনের মধ্যে চাষ। যাতে অসময়ে চেষ্টা করে কৃষক ফসলের উপযুক্ত মূল্য পান। পাশাপাশি যাঁরা সফলভাবে চাষ করছেন, সেখানে নিয়ে গিয়ে কৃষকদের হাতেকলমে বিষয়টা দেখানো।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী ২০ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে হর্টি ফুট ফেস্টিবল হবে। সেখানে আমরা হুগলি জেলা থেকে আড়াইশো চাষিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি। সেখানে অসময়ের চাষ সম্পর্কে আলোচনা হবে। সেটা যাতে কৃষকরা জানতে পারেন, তার জন্য এই চেষ্টা। আলুর ক্ষেত্রে অনেক সময় তাই দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চাষ করা হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে কৃষক অনেক সময় দাম পাচ্ছেন না। আমরা বলছি আলু চাষের জমির পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে মজুদ করা যাবে এরকম কিছু ফসল চাষ করতে। যেমন হাইব্রিড গাজর খুব লাভজনক চাষ। যেটা আলুর সঙ্গে সঙ্গে উঠবে এবং পুজোর সময় বিক্রি করা যাবে। এটা আলুর থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হবে। আমরা কৃষকদের বলছি, যেকোনও ফসল চাষের ক্ষেত্রে আগাম চাষের চেষ্টা করুন, আর না হয় সিজনের শেষের দিকে চাষ করুন।”
রাজ্যের মধ্যে একমাত্র হুগলি জেলার কৃষি খামারে সবজি উৎকর্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে কৃষকরা গাছের চারা যেমন সংগ্রহ করতে পারেন, পাশাপাশি তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।