মালদহ: রাত তখন তিনটে। হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে নাবালিকা। কোনও দিকে জ্ঞান নেই। মেয়েটাকে দেখে ডেকেছিল রাস্তার কুকুরও। তারপর থেকে আর পাত্তাই নেই। কোথায় গেল-কী করছে কিছুই জানা যায়নি এখনও। কার্যত ঘর থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে মেয়েটি। পরিবারের দাবি, সম্প্রতি তন্ত্র সাধনা, কালা জাদু নিয়ে চর্চা করছিল। হঠাৎ করেই অত্যাধিক ঈশ্বরভক্ত হয়ে উঠেছিল। আজ তিনদিন হয়ে গিয়েছে নিখোঁজ মেয়েটি। ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি। মেয়ের খোঁজে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছে তাঁর পরিবার। এ দিকে, ঘটনার খবর জানাজানি হতেই কার্যত শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়। ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদহে।
জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকা একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী। তার বাবা পেশায় ব্যবসায়ী। মা গৃহবধূ। এই বছরই ওই নাবালিকা একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। পরিবারের দাবি, সম্প্রতি অত্যাধিক ঈশ্বরভক্ত হয়ে উঠেছিল সে। অন্যরকম আচরণ করত। নিজের আলাদা ঘরে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি নিয়ে দিন কাটাত ৷ বাড়ির সবাইকে নিরামিষ খাবার খাওয়ার কথা বলেছিল ৷ তবে পরিবারের সদস্যরা তা মেনে না নেওয়ায় বাইরে থেকে নিরামিষ খাবার কিনে খেত ৷
নাবালিকার মা-বাবার দাবি, রবিবার রাত দুটো পঞ্চাশ মিনিট নাগাদ সে দোতলা থেকে কাপড় বেয়ে নীচে নামে। তারপর উধাও। গত তিনদিন ধরে খোঁজ মিলছে না তাঁর। ঘটনার তদন্তে নেমেছে মালদহ থানার পুলিশ। কী কারণে ওই কিশোরী নিজে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেল, নাকি এর অন্য কোনও কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দিকে, আবার এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দেখা যাচ্ছে রাত তিনটে নাগাদ সে একা বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে ৷ এমনকী তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজও অন্যরকম।
মেয়েটির বাবা বলেন, “রবিবার রাত্রিবেলা ও বাড়ি থেকে চলে যায়। পরের দিন সকালে ব্যাপারটা নজরে আসে। যেহেতু মেয়ে একা ঘরে ঘুমতো সেই কারণে প্রথমে বুঝতে পারিনি। মেয়ে একা আলাদা ঘরে ঘুমতো। কয়েকদিন ধরে ও নিরামিষ খাবার খাচ্ছিল ৷ বাড়ির সবাইকে নিরামিষ খেতে বলছিল ৷ এমনকী বাড়িতে রান্নার সব জিনিস পাল্টে দিতে বলছিল ৷ এত কিছু একসঙ্গে পাল্টাতে গেলে বড় খরচের বিষয় ৷ মেয়েকে বলেছিলাম, এই মুহূর্তে অত খরচ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ৷ সেকথা শুনে ও বাইরে থেকে খাবার কিনে খাচ্ছিল৷ প্রথমে ভেবেছিলাম,ও নিজের টাকা দিয়েই খাবার কিনে আনছে ৷ কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় আমি খাবারের দোকানে যাই ৷ জানতে পারি, বাইরের কেউ ইউপিআই করে মেয়ের খাবারের বিল মেটাচ্ছে ৷ মেয়ের কাছে কোনও ইউপিআই আইডি নেই ৷ আমি ওই আইডি নম্বর নিয়ে আসি ৷ আমার সন্দেহ, আমার মেয়ে কোনও চক্রের পাল্লায় পড়েছে ” তিনি আরও জানান, সম্প্রতি মালদার আরও এক মেয়ে অর্থাৎ আমার মেয়ের বান্ধবী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে ৷ মেয়েকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত পেতে চাই ৷ পুলিশের কাছে সেই আবেদন রাখছি।