উত্তর দিনাজপুর: হাতে গোছ করা লাঠি। সেই লাঠি দিয়ে এক তরুণীকে রাস্তায় ফেলে তাঁর পশ্চাতদেশে, আন্ডার আর্মে সপাটে মারের পর মার। চিৎকার করছেন তরুণী। গড়াগড়ি খাচ্ছেন রাস্তায়। পাশেই রাস্তায় পড়ে এক যুবক। তাঁকেও মারা হয়ে ওই একই ভাবে। কালো টি শার্ট পরিহিত এক যুবক! গোটা দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখছে আম জনতা। কেউ আটকানোর চেষ্টাও করছেন না। যুবক যুবতীকে নৃশংশ ভাবে মারধর সালিশি সভায়। ঘটনাটি ঘটেছে চোপড়ার লক্ষ্মীপুর গ্রামে দীঘলগাঁও এলাকায়। মারধরের গোটা ঘটনা এক ব্যক্তি মোবাইল বন্দি করেছেন। সেই ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করিনি TV9 বাংলা। ওই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের বাসিন্দা আক্রান্ত যুবক যুবতী। ওই গৃহবধূ বিবাহিত। যে যুবককে ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে ওই যুবতীর। গ্রামে বিষয়টি জানাজানি হতেই থাকার জেরে সালিশি সভা ডাকা হয়। আর তাতে মুখ্য ভূমিকায় এলাকার বাহুবলি নেতা ‘জেসিবি’। যাঁকে ভিডিয়োতে মারতে দেখা যাচ্ছে। তিনি সেই সালিশি সভার নাম দেন ‘ইনসাফ সভা’। অভিযোগ, আর সেই সালিশি সভায় প্রকাশ্যে প্রচুর লোকের মাঝখানে ওই যুবক যুবতীকে বেত জাতীয় লাঠি দিয়ে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারা হয়।
জানা যাচ্ছে, জেসিবির দাপটে এলাকায় পুলিশ কিংবা সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনেও মুখ খুলতে নারাজ স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার বিকালের ওই নৃশংস অত্যাচারের পরে সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও যেতে পারেনি ওই যুবক যুবতী। ওই দু’জনকে আর্থিক জরিমানা করা হয় বলেও অভিযোগ। জেসিবির ভাষায় ওই সালিশি সভার নাম ‘ইনসাফ সভা’ বলেও জানা গেছে। এলাকায় ওই ধরনের সালিশি সভা কিছুদিন পর পরই হয় বলে খবর।
তবে প্রশ্ন উঠছে এধরণের তালিবানি শাসনের অবসান কবে হবে? জানা যাচ্ছে, যিনি মোবাইলে এই ছবি তুলেছিলেন, তিনিও ঘটনার পর থেকে পলাতক।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি কানহাইয়া লাল বলেন, “পুলিশ প্রশাসনকে ফোন করে বলছি, বিষয়টা দেখছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে। জেসিবি যেই হোক না কেন।” তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বিধায়ক হামিদুর রহমানের বক্তব্য, “আমি হোয়াটসঅ্যাপে এই ভিডিয়ো দেখেছি। ১ ঘণ্টা আগে ভিডিয়োটা দেখেছিলাম। আমি জেসিবি-দের ডেকে পাঠিয়েছি। শুনতে হবে কী হয়েছিল আসলে। সবাই তৃণমূলের। এটা নিয়ে তিলকে তাল করছেন কেন?”
বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “বাংলায় এ ধরনের অজস্ত্র ঘটনা ঘটে। কিন্তু অপরাধগুলোকে চেপে দেওয়া হয়। বারাসতের একটি ছেলে বিয়ে করেছিল ভিন ধর্মের মেয়েকে। সে যখন এক বছরের শিশুপুত্রকে দেখতে শ্বশুরবাড়িতে গেল, তাঁকে জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভ্যানচালক তাঁকে তুলি নিয়ে গিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করান। এখন হাইকোর্টে মামলা চলছে। এই ধরনের ঘটনা ঘটছেই। বিধায়ক তাঁকে চিনবেই। ব্যক্তিগত মানসিকতার কারণে হয়নি।”