রায়গঞ্জ: শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ এ রাজ্যে নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরে দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত রাজ্যের শিক্ষা দফতর। আর এবার একটি ক্যাগ (CAG) রিপোর্টে নতুন করে প্রশ্ন উঠল শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি! উপাচার্যের বাংলো থেকে শুরু করে পুকুর সংস্কার, গাড়ি কেনা থেকে সিসিটিভি! লক্ষ লক্ষ টাকার কোনও হিসেব নেই! শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
ক্যাগ (CAG) এর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টে এবার দেদার গরমিলের অভিযোগ উঠল রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের। কোটি ছাড়িয়েছে দুর্নীতির অঙ্ক। মাস কয়েক আগে ক্যাগের এই রিপোর্ট প্রকাশ্য়ে আসে। প্রাথমিক পর্যায়ে যে অভিযোগগুলি উঠে এসেছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর সংস্কারে আর্থিক তছরুপ। ক্যাগের খাতায় দুর্নীতির অভিযোগের তালিকা বেশ লম্বা।
পুকুর সংস্কার: ক্যাগ রিপোর্টে ধরা পড়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরের সংস্কারে ২৮ লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ঠিক কী সংস্কার হয়েছে, কেন এত টাকা খরচ করতে হল, তা অডিট কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হয়ে জানতে চেয়েছে। তাতে বিশেষ কোনো সদুত্তর মেলেনি বলেই অভিযোগ।
ভিসি-র বাংলো: ক্যাগের রিপোর্টে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে ভিসি-র বাংলো নিয়েই। সেখানে বলা হয়েছে, রায়গঞ্জের কর্নজোড়ায় উপাচার্যের বাংলো তৈরির জন্য বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাকে ২৫ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, আরও অভিযোগ উঠেছে, এই বাংলো নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনও থার্ড পার্টিকে ৫৫ লক্ষ টাকা অগ্রিম প্রদান করা হয়েছিল। আর সেই অ্য়াডভান্স দেওয়া পুরোপুরি অবৈধ বলেই ক্যাগ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
টেন্ডার ছাড়াই গাড়ি ক্রয়: সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কোনও টেন্ডার না করেই নাকি ৪৩ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা খরচ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি কেনা হয়েছে। একইভাবে গাড়ি কিনতে আরও প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা বাড়তি খরচ করা হয়েছে কোনও টেন্ডার প্রক্রিয়া না করেই। যারও কোনও হিসেব মেলেনি বলেই অভিযোগ।
সিসিটিভি ও বায়োমেট্রিক: গাড়ি-বাড়িতেই শেষ নয়। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম বসাতে প্রায় ৪৪ লক্ষ ৮০ হাজার ১৬৫ টাকা খরচ, সেই হিসেবেও যথেষ্ট গরমিল পেয়েছে ক্যাগ (CAG) টিম। রিপোর্ট অনুযায়ী, GeM সংক্রান্ত কোনো তথ্যা পাওয়া যায়নি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু আধিকারিক ও Webel এর প্রতিনিধিরা সার্ভে করে উচ্চ শিক্ষা দফতরের বরাদ্দ টাকায় ওয়েবেলকেই টেন্ডার দেওয়া হয়। যা অবৈধ বলেই মনে করছে ক্যাগ কমিটি।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলকাতা ভবনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ডিনের বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়, যার বিনিময়ে কয়েক লক্ষাধিক টাকাও মাসে খরচ হয়। কিন্তু তারপরও কলকাতায় শিক্ষাভবনে কাজে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীরা অন্যত্র বাড়ি ভাড়া নিয়ে থেকেছেন। যাতে খরচ হয়েছে বিপুল টাকা। দু’দফায় ভাড়া করা বাড়ি থাকতে কেন বাইরে থেকে অর্থ অপচয় করলেন কর্মীরা?
এমন সব অভিযোগে কার্যত চক্ষু চড়কগাছ সকলের। আদতে ২০১৫ সালে তৈরি হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে কখনও ক্যাগ অডিট হয়নি। এবার ক্যাগের তরফে জবাব চাওয়া হয়েছে এবং উত্তর দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে উপাচার্য জানিয়েছেন। উপাচার্য দীপক কুমার রায় বলেন, “সব নতুন বিশ্ববিদ্যালয়েই তদন্ত হওয়া উচিত। সব হিসেব খতিয়ে দেখা হবে।”
এই নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। বিজেপির দাবি, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অবৈধভাবে পিএইচডি পাইয়ে দেওয়া উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিল ভুইঁমালি রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছেন। বিজেপির জেলা সম্পাদক ফাল্গুনী চক্রবর্তী বলেন, ‘এখন রাজ্যপাল মনোনীত উপাচার্য আসায় তদন্ত শুরু হয়েছে।’ তবে তৃণমূলের স্পষ্ট বক্তব্য, এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি অরিন্দম সরকার বলেন, ‘যেটা হয়েছে তা আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুরাহা করা হবে।’