ওয়াশিংটন: ১৯৬৯ সালে প্রথম হাতে চাঁদ পেয়েছিল মানুষ। চাঁদের এবড়োখেবড়ো মাটিতে পা রেখেছিলেন মার্কিন মহাকাশচারী নিল আর্মস্ট্রং। পরের কয়েক বছরে, চাঁদে বলা যেতে পারে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি শুরু করেছিল আমেরিকা। কিন্তু, ১৯৭২ অ্যাপোলো অভিযান বাতিল করা হয়েছিল। আর সেই সঙ্গে থেমে গিয়েছিল মার্কিনিদের চাঁদের যাওয়া। তারপর অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এর মধ্য মঙ্গলে গিয়েছে, চাঁদের কক্ষপথে গিয়েছে আমেরিকা, কিন্তু চাঁদের বুকে আর নামেনি। অবশেষে বৃহস্পতিবার, ৫০ বছরের বিরতি ভেঙে, ফের একবার চাঁদে নামল মার্কিনিরা। চাঁদে সফলভাবে সফট ল্যান্ড করেছে বেসরকারি সংস্থার তৈরি মহাকাশযান, ‘ওডিসিয়াস’। কেন এই অবতরণ ঐতিহাসিক? ৫০ বছর পর আমেরিকার চাঁদে ফেরার পাশাপাশি, এই প্রথম কোনও বেসরকারি সংস্থার তৈরি মহাকাশযান নামল চাঁদের মাটিতে।
ওডিসিয়াস মহাকাশযানটি তৈরি করেছে, ‘ইনটুইটিভ মেশিনস’ নামে এক বাণিজ্যিক মহাকাশ সংস্থা। সংস্থার সিইও স্টিভ অলটেমাস বলেছেন, “আমরা এখন চন্দ্রপৃষ্ঠে এবং সেখান থেকে তথ্য পাঠাচ্ছি। চাঁদে আপনাদের স্বাগত।” ল্যান্ডারটি ঠিক কী অবস্থায় আছে, তা এখনও বিশদে জানায়নি সংস্থাটি। তবে চাঁদে যে সেটি নেমেছে, তা নিশ্চিত করা গিয়েছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে মালাপের্ট নামে এক খাতের কাছে নেমেছে এই মার্কিন মহাকাশযান। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অগস্টে ভারতের চন্দ্রযান-৩-এর বিক্রম ল্যান্ডার, চাঁদের দক্ষিণ মেরু এলাকাতেই নেমেছিল। দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে প্রথম নিরাপদ ও সফল অবতরণ করেছিল ভারতীয় মহাকাশযানটিই। দক্ষিণ মেরুতে প্রজ্ঞান নামে একটি রোবোটিক রোভারও অবতরণ করেছিল। ওডিসিয়াসেরও একই রকমের একটি রোবোটিক রোভার রয়েছে, যার নাম নোভা সি।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, নাসা (NASA) জানিয়েছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চল অত্যন্ত উঁচুনীচু। বড় বড় গর্ত যেমন আছে, তেমনই রয়েছে উচ্চভূমিও। পৃথিবী থেকেও এলাকাটি দেখা যায়, যাকে আমরা চাঁদের কলঙ্ক বলে থাকি। দক্ষিণ মেরু থেকে মাত্র ৩০০ কিলোমিটার দূরেই নেমেছে ওডিসিয়াস। এলাকাটি তুলনামূলকভাবে সমতল এবং নিরাপদ বলে জানিয়েছে নাসা। চাঁদের পরিবেশ সম্পর্কে আরও জানতে চায় এই দুরূহ জায়গাটিকে অবতরণের জন্য জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। এই এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে, দক্ষিণ মেরু ্ঞ্চলের পরিবেশ ইত্যআদি বিষয়ে গবেষণা করা হবে। মহাকাশযানটি অবতরণের ঠিক আগের মুহূর্তে অবশ্য, যোগাযোগ নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ফলে, যে সময়ে নামার কথা ছিল, তার থেকে দেরিতে নেমেছে। ইটুইটিভ মেশিনস-এর ফ্লাইট কন্ট্রোলার বিভাগ জানিয়েছে, অবতরণের পর, ল্যান্ডারটি থেকে ফের সংকেত আসছে পৃথিবীতে।
১৫ ফেব্রুয়ারি, কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স সংস্থার তৈরি ফ্যালকন-৯ রকেটে চড়ে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ওডিসিয়াস। মহাকাশে প্রবেশ করার কয়েক মিনিট পর, রকেটটি থেকে মহাকাশযানটি বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। অ্যাপোলো অভিযানের সময় মার্কিনিরা যে পথে চাঁদে যেত, সেই একই পথে এগিয় গিয়েছিল ওডিসিয়াসও। মাত্র আট দিনে চাঁদে পৌঁছে গেল ওডিসিয়াস। ভারতের চন্দ্রযান-৩’এর সময় লেগেছিল অনেকটা বেশি। আসলে, ভারতের অভিযান ছিল অনেক কম খরচের। জ্বালানি বেশি খরচ না করে, পৃথিবীর কক্ষপথে কয়েক সপ্তাহ ধরে পাক খেয়ে অতিরিক্ত গতি তুলেছিল চন্দ্রযান-৩।