ঢাকা: তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০১ সালে ক্ষমতা হারান। ২০০৯ সালে ফের বাংলাদেশের মসনদে বসেন। তারপর থেকে নির্বাচনে হারেননি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনে জিতে ফের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সেই শেখ হাসিনা জানিয়ে দিলেন, ক্ষমতা ধরে রাখতে কখনওই দেশের সম্পদ বিক্রি করবেন না তিনি।
শুক্রবার পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা। সেই অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি যাঁরা জমি দিয়েছেন তাঁদেরও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০২২ সালের ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হয়েছিল। এরপর কয়েকমাস আগে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এবার নদী ভাঙন প্রতিরক্ষা ও বিদ্যুৎ সংযোগ কাজ শেষ হয়ে গেল।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বের ধারণা পাল্টে দিয়েছে। আগে যারা কথায় কথায় খবরদারি করত, পদ্মা সেতু নির্মাণের পর তাদের মানসিকতা বদলে গেছে। এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করেছে। তিনি বলেন, “যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, বিদেশে গেলে বাংলাদেশের নাম শুনলে কেউ জিজ্ঞেস করত, এটা কি ভারতের কোনও অংশ? বলত, এই দেশে তো শুধু ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে। যেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট ও ব্যথার ছিল।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “পদ্মা আমাদের গর্বের সেতু। একটা সিদ্ধান্ত বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে দিয়েছে। অনেক ঝড়-ঝাপ্টা পার করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। সাধারণত কোনও প্রকল্প শেষ হলে সেই প্রকল্প শেষ হওয়ার অনুষ্ঠান হয় না। বাংলাদেশের জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, যাঁরা জমি দিয়েছেন তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এটি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানোর অনুষ্ঠান।”
এরপরই দেশের সম্পদ কখনও না বিক্রি করার কথা বলেন হাসিনা। দেশের সম্পদ বিক্রি করতে না চাওয়াতেই ২০০১ সালে পরাজিত হন বলে মন্তব্য করেন। দৃঢ়কণ্ঠে মুজিবুর-কন্যা বলেন, “বাংলাদেশের সম্পদ না বেচায় যদি ক্ষমতায় না আসি, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। শেখ মুজিবুরের মেয়ে কখনও দেশের সম্পদ বেচে ক্ষমতায় আসতে চায় না।”
দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। আর সেই স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদা থাকবে না, আমরা মাথা তুলে কথা বলতে পারবো না, আমাদের আত্মমর্যাদাবোধ থাকবে না, এটা কি ধরনের বাংলাদেশ? যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, বিদেশে গিয়ে শুনতে হয়েছে, এদেশে তো শুধু ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে। দরিদ্র হিসেবে আমাদের হিসেব করা হত। যেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট, ব্যথার ছিল।”