কাবুল: আফগানিস্তানের অধ্যায় শেষ করতে চলেছে আমেরিকা। শেষধাপের উদ্ধারকার্য চালাচ্ছে মার্কিন বাহিনী (US Force)। ইতিমধ্যেই দেশে ফিরে গিয়েছেন প্রায় এক হাজারেরও বেশি সৈন্যবাহিনী। বাকি চার হাজারও আগামিকালই দেশ ছাড়তে পারে বলে সূত্রের খবর। এ দিকে, মার্কিন সেনা কিছুটা পিছু হটতেই বিমানবন্দর দখল নিতে শুরু করেছে তালিবান বাহিনী (Taliban)।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিমানবন্দরে এক হাজারর কাছাকাছি মার্কিন নাগরিক দেশে ফেরার অপেক্ষায় বসেছিলেন। সোম ও মঙ্গলবারের মধ্যেই তাদের আমেরিকায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপরই মার্কিন সেনারাও আফগানিস্তান ছাড়বেন। এক মার্কিন সেনা আধিকারিক বলেন, “প্রত্যেক বিদেশী ও যাদের প্রাণ সঙ্কট রয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে আজই। উদ্ধারকার্য শেষ হলেই মার্কিন সেনাবাহিনীকেও দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তালিবানদের তরফে গত সপ্তাহেই সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়েছিল, “৩১ অগস্টের মধ্যেই দেশ ছাড়তে হবে। সমস্ত দেশকেই উদ্ধারকার্য শেষ করতে হবে ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য়ে। এর থেকে বেশিদিন সময় লাগালে পরিণতি খুব খারাপ হবে।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও জানিয়েছি্লেন, ৩১ অগস্টের মধ্যেই উদ্ধারকার্য শেষ করা হবে। যত সময় যাচ্ছে, ততই বিপদ বাড়ছে কাবুল বিমানবন্দরে। তবে যদি প্রয়োজন পড়ে, তবে উদ্ধারকার্য চালাতে ৩১ অগস্টের পরও মার্কিন সেনা সে দেশে থেকে যাবে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের আশঙ্কাই সত্যি করে বৃহস্পতিবার আত্মঘাতী হামলা চালায় আইসিস-কে। জোড়া বিস্ফোরণ ও গুলি চালনার ঘটনায় প্রাণ হারান প্রায় ২০০ নাগরিক। এরমধ্যে ১৩ জন মার্কিন সেনা ও ২৮ জন তালিবানও রয়েছে। এই হামলার পরই রবিবার বিকেলে ও এ দিন সকালেও একাধিক রকেট হামলার খবর মেলে।
আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের বিদেশমন্ত্রকের তরফে প্রায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৪০০ নাগরিককে আফগানিস্তান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এদের মধ্যে বহু আফগান নাগরিকও রয়েছে। তবে দেশ ছেড়ে যেতে যান, এমন কমপক্ষে ১০ হাজার আফগান নাগরিক এখনও বিমানবন্দরের বাইরেই অপেক্ষা করছেন।
অন্যদিকে, তালিবানের তরফে জানানো হয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই বিমানবন্দরের বেশ কিছু অংশ দখল নিয়েছে। আগামী এক-দু’দিনের মধ্যেই তালিব ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ানরা গোটা বিমানবন্দরের দখল নেবে। এক তালিব নেতা জানান, শান্তিপূর্ণভাবে বিমানবন্দরের দায়িত্বভার তালিবানের হাতে তুলে দিতে চায় মার্কিন বাহিনী। সেই কারণেই তারা মার্কিন বাহিনীর শেষ সম্মতির অপেক্ষা করছেন।
শুক্রবারই উদ্ধারকার্যে ইতি টেনেছে ফ্রান্স, জার্মানি। শনিবার রাতেই ব্রিটেনের শেষ উদ্ধারকারী বিমানও উড়ান নেয় হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। আপাতত অপেক্ষা কেবল মার্কিন উদ্ধারকারী বিমানগুলির উড়ান নেওয়ার। গতকালই এক মার্কিন আধিকারিক জানান, তালিবানরাও উদ্ধারকার্যে সাহায্য করছে। তারা মার্কিন নাগরিকদের বিমানবন্দরে পৌঁছতে নিরাপদ যাত্রাপথের ব্যবস্থা করছে।
প্রস্তুতি নিচ্ছে তালিবানও। শনিবারই তালিবান শীর্ষ নেতারা ব্যাঙ্ক খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দেশজুড়ে অর্থসঙ্কট দেখা দেওয়ায়। তবে টাকা তোলার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা বেধে দেওয়া হয়েছে। দিনে ২০০ ডলার অর্থাৎ আফগানি মুদ্রায় ২০ হাজার টাকার বেশি তোলা যাবে না। তালিবান মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশজুড়ে কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও একবার সরকার দখল হয়ে গেলে সমস্ত সমস্যাই দূর হয়ে যাবে। ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ৩৩টি জায়গাতেই গভর্নর ও পুলিশকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। একইসঙ্গে আমেরিকাকে সেনা প্রত্যয়াহারের পরও কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও পড়ুন: সকাল থেকেই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে একাধিক রকেট, ৪ জায়গায় বিস্ফোরণ, আতঙ্কে কাবুলবাসী