ওয়াশিংটন: স্টার্টআপ সংস্থার মহিলা সিইও-র নিজের হাতে নিজের ছেলেকে হত্যা নিয়ে উত্তাল গোটা ভারত। একই সময়ে আরও এক এক মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল, তাঁর প্রেমিকের ১৮ মাসের কন্যা সন্তানকে ব্যাটারি, স্ক্রু এবং নেইলপলিশ রিমুভারের মতো জিনিস খাইয়ে বিষক্রিয়ায় হত্যা করার। এই ঘটনাটি অবশ্য ভারতের নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যের। নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছরের জুনে সন্দেহভাজন পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয়েছিল আইরিস রিটা আলফেরার। সম্প্রতি, তাকে হত্যার সন্দেহে অ্যালেসিয়া ওয়েন্স নামে এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অ্যালেসিয়া ওয়েন্স হলেন, মৃত আইরিসের বাবা, বেইলি জ্যাকবির প্রেমিকা।
এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছিল ২০২৩ সালের ২৫ জুন। বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে, আইরিস তাঁর মা এমিলি আলফেরা এবং তাঁর দাদু-দিদার সঙ্গে থাকত। তার বাবা বেইলি জ্যাকবির শুধুমাত্র তাঁকে দেখার অধিকার ছিল। যাইহোক, ঘটনার দিন বাবার সঙ্গে তাঁর নিউ ক্যাসলের বাড়িতে ছিল ছোট্ট আইরিস। প্রেমিকা অ্যালেসিয়ার কাছে মেয়েকে রেখে দোকানে গিয়েছিলেন বেইলি। কিছুক্ষণ পরই, তাঁকে ফোন করেছিলেন অ্যালেসিয়া। জানিয়েছিলেন, আইরিস কেমন একটা করছে। সবকিছু ফেলে বেইলি জ্যাকব বাড়িতে ছুটে এসেছিলেন।
বাড়ি ফিরে তিনি দেখেছিলেন তাঁর মেয়ে নড়াচড়াও করছে না। সঙ্গে সঙ্গে তিনি জরুরি পরিষেবার নম্বরে ফোন করেছিলেন। এর পর, জরুরি পরিষেবা বিভাগের কর্মীরা আইরিসকে নিউ ক্যাসেলের ইউপিএমসি জেমসন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় পিটসবার্গের ইউপিএমসি চিলড্রেন হাসপাতালে। জায়গাটি মিউ কাসল থেকে প্রায় এক ঘন্টা দূরে। সেখানে আইরিসের চিকিৎসা শুরু হয়, কিন্তু, চার দিন পরই মাল্টি অর্গান ফেইলিওর হয়ে আইরিসের মৃত্যু হয়েছিল। পুলিশ এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রেক্ষিতে একটা মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছিল।
সেই সময় অ্যালিসিয়া ওয়েন্স পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন, আচমকা আইরিসের শরীর কুঁকড়ে গিয়েছিল। তারপর সে বিছানা থেকে পড়ে গিয়েছিল। তাতে তার মাথায় আঘাত লেগেছিল। কিন্তু, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অন্য বিষয় ধরা পড়েছিল। দেখা গিয়েছিল, ১৮ মাসের শিশুটি মৃত্যুর কয়েক মাস আগে অসংখ্য ‘ওয়াটার বিডস’, বোতাম-আকৃতির ব্যাটারি এবং একটি ধাতব স্ক্রুয়ের মতো জিনিস খেয়েছিল। এই জিনিসগুলির বিষক্রিয়ায়, তার রক্তে অ্যাসিটোনের মাত্রা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। আর সেটাই শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়ায়।
কিন্তু, কোথা থেকে এই বিষাক্ত জিনিসগুলি খেল আইরিস? কে খাওয়াল তাকে? তদন্তের স্বার্থে অ্যালেসিয়া ওয়েন্সের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছিল পেনসিলভানিয়া পুলিশ। সেই ফোন ঘেঁটে তারা দেখেছিল, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে অ্যালেসিয়া গুগলে কিছু বিশেষ জিনিসের খোঁজ করেছিলেন। শিশুদের গুরুতর ক্ষতি বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে কোন কোন পারিবারিক পণ্যে, তার খোঁজ করেছিলেন তিনি। ওয়াটার বিডস, ব্যাটারি, নেইলপলিশ রিমুভারের মতো পণ্যগুলির কী প্রভাব পড়ে শিশুদের স্বাস্থ্যে, তা দেখেছিলেন তিনি। এছাড়া, কোন কোন প্রসাধনী পণ্য শিশুদের বিষাক্ত, কোন কোন ওষুধ খাওয়ালে শিশুদের দুর্ঘটনাজনিত বিষক্রিয়া হয়ে মৃত্যু হতে পারে, সেই সবের অনুসন্ধানও করেছিলেন তিনি। এরপরই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
পেনসিলভানিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল মিশেল হেনরি বলেছেন, “এই মামলা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এক অসহায় শিশুর ক্ষতি করার জন্য পদক্ষেপ করছেন, তারপর সেই ঘটনা সম্পর্কে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করছেন, এটা ভাবাই যায় না। তদন্তে দেখা গিয়েছে, আসামী কয়েক মাস ধরে কীভাবে নির্দিষ্ট কিছু পদার্থ শিশুদের ক্ষতি করে, সেই বিষয়ে গবেষণা চালিয়েছে। তারপর সেই গবেষণার ভিত্তিতে পরের পদক্ষেপ করেছে।”