কলকাতা: এ এক ভারী মজার পেশা, পেশার থেকেও নেশা বলাই শ্রেয়। একজন সাংবাদিকের সমাজে ভূমিকা ঠিক ততটাই যতটা একজন শিক্ষকের ভূমিকা তাঁর ছাত্রের জীবনে। কারণ তাঁদের মাধ্যমেই সকালে ঘুম থেকে রাত্রে ঘুমাতে যাওয়া অবধি মানুষ জানতে পারে দেশ-কাল-সমাজে কী ঘটে চলেছে। গ্যাসের দাম কত বাড়ল, আবহাওয়া কেমন থাকবে, দেশের অর্থনীতির হালচাল কী, রাজ্য-রাজনীতির খবরাখবর, এসবই আমজনতার কাছে পৌঁছে দেন একজন সাংবাদিক।
তাই এই পেশার দায়িত্ব, ঝুঁকি যেমন অনেক, তেমনই সম্মানটাও রয়েছে বেজায়। কিন্তু ছোট থেকে অনেকেই সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও কী নিয়ে পড়লে সহজেই হতে পারে লক্ষ্য পূরণ তা বুঝতে গিয়ে দিশাহীন হয়ে পড়েন অনেক পড়ুয়া। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো, ডাক্তার হতে গেলে যেমন ডাক্তারি পড়তে হয়, ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলে যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হয় তেমন কোনও বাধ্যবাধকতা কিন্তু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নেই। অর্থাৎ, সাংবাদিক হতে গেলে আপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতা বা গণজ্ঞাপন বিষয়ে পড়তেই হবে, অথবা নিদেনপক্ষে ডিগ্রি লাগবেই এমন মাথার দিব্যি কোথাও দেওয়া নেই।
বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে সাংবাদিকতায় এসেছেন এমন অসংখ্য উদাহরণ আমাদের চারিপাশে রয়েছে৷ তবে কেউ যদি আগে থেকেই ঠিক করে রাখেন সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবেন তবে তার কাছে এই বিষয় নিয়ে চর্চা থাকাটা বা পড়াশোনা থাকাটা অবশ্যই বাড়তি সুবিধা প্রদান করবে। সহজ কথায় এই পেশা আসার ক্ষেত্রে অসংখ্য দিক খোলা রয়েছে।
তবে একজন সাংবাদিক হতে গেলে আপনার মধ্যেও কিছু কিছু বিশেষ গুণাবলী থাকা আবশ্যিক। যেমন সর্বাগ্রে বাংলা, ইংরেজি এবং হিন্দি এই তিনটি ভাষায় দখল থাকা আবশ্যিক। দ্বিতীয়ত দরকার, অনুসন্ধানী মন। কোনও বিষয়কে সাধারণ মানুষ যেভাবে দেখবে, একজন সাংবাদিক সেইভাবে দেখবে না। তার কাজই হল, দৈনন্দিন হাজারও বিষয়ের মধ্যে থেকে খবরের গুণাবলী আছে এমন তথ্যকে খুঁজে বের করা। আপনি যদি ইন্ট্রোভার্ট বা চুপচাপ প্রকৃতির মানুষ হন, তবে এই পেশা আপনার জন্য নয়। কেননা একজন সাংবাদিকের অন্যতম কাজ আমজনতার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। এছাড়াও কোনও বিষয়কে উপস্থাপন যোগ্য করে তোলা, নিমেষের মধ্যে ঘটনা বিবৃতি দেওয়ার দক্ষতা, লেখালিখির অভ্যাস এই পেশার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
আমাদের রাজ্যে মাধ্যমিক স্তরে সাংবাদিকতা পড়ানোর বিশেষ চল নেই, উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও হাতে গোনা কয়েকটি স্কুলে রয়েছে। কিন্তু স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে এই বিষয় নিয়ে পড়ার আগ্রহ এখন ক্রমেই বাড়ছে। সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন কলেজে এখন সাংবাদিকতা এবং গণজ্ঞাপন বিষয়টি পড়ানো হয়। আগে মিডিয়া বলতে লোকে ভরসা করে থাকতেন, রেডিও, টিভি এবং খবরের কাগজের উপরেই। কিন্তু এখন সে সমীকরণ বদলেছে। যতই দিন যাচ্ছে, তত মানুষের হাতের মুঠোয় ভরে দেওয়া হচ্ছে দুনিয়াকে।
তাই ডিজিটাল মাধ্যমেও সাংবাদিকদের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে৷ এক্ষেত্রে আপনার ফটোশপ, কম্পিউটার টাইপিং, এডিটিং সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে তা আপনার কাজের সুযোগ আরও বাড়াবে। সবশেষে একজন সাংবাদিকের হওয়া প্রয়োজন আদর্শবান, সৃজনশীল এবং যুক্তিবাদী। বই পড়ে সাংবাদিক হওয়ার থেকেও কাজ করতে করতে এই ক্ষেত্রে হাত আরও পোক্ত হয়। সেক্ষেত্রে কেরিয়ারের শুরুতে বিভিন্ন রকম ইন্টার্নশিপ করা যেতে পারে। এটি একটি উদীয়মান ইন্ডাস্ট্রি, তাই লেগে থাকলে এখানে কাজের সুযোগ অনেক। স্থায়ী ও অস্থায়ী মেয়াদে একজন সাংবাদিক প্রাথমিক স্তরে দশ থেকে কুড়ি হাজারের আশেপাশে আয় করে থাকেন। যত অভিজ্ঞতা বাড়বে, ততই বাড়বে বেতনের অঙ্কও।