কলকাতা: কলকাতা পুরভোট সন্ত্রাসের অভিযোগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ সিপিএম-বিজেপি। তথ্য প্রমাণ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিলের আবেদন বিজেপির। মামলার অনুমতি চেয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা সরকার। দুটি মামলাই মঞ্জুর করেছেন প্রধান বিচারপতি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন আইনি লড়াই অনেকটাই কঠিন হবে। আগামী ২৩ তারিখ যে মামলা রয়েছে, সেটি মূল মামলা।
হাইকোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছিল, পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে না। কিন্তু যদি কোনও রকম অশান্তি কিংবা বিশৃঙ্খলার অভিযোগ সামনে আসে, তাহলে কৈফিয়ত নেওয়া হবে কলকাতা পুলিশ কমিশনার ও ডিজির কাছ থেকে। পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেও উত্তর দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। সেক্ষেত্রে এবারের পুরনির্বাচনে বিরোধীরা একাধিক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। বিরোধীরা রবিবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে ধর্না দিয়েছেন। বিরোধীদের কথায়, এই ভোট কোনওভাবেই শান্তিপূর্ণ নয়।
মূল মামলার শুনানি ২৩ তারিখ। সেই মামলার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে দেবলীনা সরকারের মামলা। তাঁর অভিযোগ, পুরভোটে সন্ত্রাস হয়েছে। এদিন তাঁর অভিযোগও শুনবে আদালত। উল্লেখ্য এদিনই আরও একটি মামলার শুনানি রয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরভোটগুলিতে কত দফায় ভোট হবে, কবে ভোট হবে, তা জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কমিশনকে। এদিন সেটিও শুনবে আদালত। পুরভোট নিয়ে কমিশনকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সিসিটিভি ফুটেজে যে সন্ত্রাসের ছবি ধরা পড়েছে, পুলিশ ভূমিকা ঠিক কী ছিল, তা নিয়ে কমিশন আদালতে কী বলে, সেটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
নির্বাচন কমিশনের তরফে দাবি করা হচ্ছে কোথাও ভোটে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। কোনও বুথে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়নি। বিরোধীদের দাবি নস্যাৎ করে জানায় কমিশন। পুনর্নির্বাচনের প্রয়োজন নেই, এমনটাই দাবি করেছে কমিশন।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে বিরোধীদের দরবার সত্ত্বেও পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা কম। বিজেপি ১৪৪টি ওয়ার্ডেই ফের ভোট চেয়েছে। বাম ও কংগ্রেসও পুনর্নির্বাচন চেয়েছে একগুচ্ছ ওয়ার্ডে। সেসব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তবে সূত্রের খবর, কোনও ওয়ার্ডেই সম্ভবত ফের ভোট নেওয়া হবে না। কমিশনের বক্তব্য, বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া পুরভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ৪৫৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৯৫ জনকে। বোমাবাজি হয়েছে দুই জায়গায়। সিসিটিভি নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কমিশন। তাদের বক্তব্য, কোথাও সিসিটিভি অচল ছিল না।
এ প্রসঙ্গে, বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, “পুনর্নির্বাচনের প্রথম থেকেই দরকার হবে না, সেই মতোই নির্ঘণ্ট তৈরি হয়েছিল। গতকাল নির্বাচন হয়েছে। আগামিকাল ফল ঘোষণা। রাত পর্যন্ত রিপোর্ট এসেছে। পুনর্নির্বাচন হবেটা কবে? নির্ঘণ্ট দেখেই বোঝা গিয়েছিল, নির্বাচন কমিশন রাজ্যের নির্দেশ মেনে পুনর্নির্বাচনের সময় রাখেনি। ইভিএম ভাঙা, মাটিতে পড়েছিল। সব বুথ ছে়ড়ে দিলেও, ওই বুথটাকেই যদি ধরি, তাহলে ওই বুথের গণনা কীভাবে হবে? সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য কী থাকবে?”
তাঁর আরও চ্যালেঞ্জ, “আমরা ৬ হাজার বুথের সিসিটিভি ফুটেজের ফরেনসিক অডিট চাইব। তাহলেই দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য আর টিকবে না।”
আরও পড়ুন: ‘কোথাও ভোট বন্ধ হয়নি’, পুনর্নির্বাচনের দাবি খারিজ করল কমিশন