বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দুর্দান্ত খলনায়িকা অনামিকা সাহা। একসময় ‘খল’চরিত্র থেকে বেরিয়ে এসে পর্দায় নিজের ইমেজ ভেঙে হয়ে উঠেছিলেন পরম মমতাময়ী। দর্শক তাঁকে নায়িকার চরিত্রে কোনওদিনও দেখেননি। দেখেছেন মা-জেঠিমা-ঠাকুমা-দিদিমার চরিত্রেই। মাত্র ২৯ বছর বয়স থেকে অভিনয় করেছেন সেই সব চরিত্রেই। নায়িকা হতে চাননি কোনওকালেই। কিন্তু কেন এমনটা চেয়েছিলেন অনামিকা? সে এক অদ্ভুত কাহিনি। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করবেন বলে ওজন বাড়িয়েছিলেন। TV9 বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পড়ুন অনামিকার মনের কথা।
নায়কদের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ
“অভিষেক চট্টোপাধ্য়ায় ৫৮ বছর বয়সে চলে গেল। আমার বর্তমান বয়স ৬৩ বছর। বেশিদিনের ছোট-বড় নই আমরা। কিন্তু আমি ওর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। ফলে ওরা সকলেই আমার বন্ধুর মতো। বুম্বা আমাকে ক্যামেরার সামনে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করত, তারপরই থাপ্পড় মারত। এ রকম মজাদার সম্পর্ক ছিল আমাদের। এ রকমই ৩-৪ বছরের ব্যবধান ছিল আমার সঙ্গে ওদের বয়সের। তাপস পাল ছিল আমার চেয়ে এক বছরের বড়।”
মাত্র ২৯-শেই মায়ের চরিত্রে অভিনয়
“যেহেতু আমি ২৯ বছর বয়স থেকে মোটাসোটা হয়ে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছি, লোকেরা ভাবছে আমার কত না-কত বয়স। কিন্তু আসলে তো তা নয়। শ্বশুরবাড়ি থেকে আর আমাকে ছবিতে কাজ করতে দিচ্ছিল না। কেবল বলত, ‘তোমার গলা সুন্দর, রেডিয়োতে নাটক করো’। তখন রেডিয়োতে আমি ৫,০০০-এরও বেশি নাটক করেছিলাম। মেয়ে হওয়ার পর আমার সেই কাজ আর ভাল লাগত না। মেয়ে আয়ার কাছে থাকত। আমার শ্বশুরমশাই আইনজীবী ছিলেন। বাবাকে গিয়ে বললাম, ‘আমাকে একটু অভিনয় করতে দিন না…!'”
শ্বশুরমশাইয়ের অনুমতি
“শ্বশুরমশাই আমাকে বললেন, ‘আমাদের কোনও প্রেজুডিস নেই, কিন্তু এমন কোনও চরিত্রে অভিনয় কোরো না, যেটা আমাদের বসে দেখতে খারাপ লাগে।’ আমি ভাবলাম, নায়িকা হলে বুকে জড়াজড়ি করতে হবে, বিছানায় শুতে হবে, ক্লোজ় সিন থাকবেই। তার চেয়ে আমি মা-মাসি-ঠাকুরমা-দিদিমার অভিনয় করব। তাহলেই আমি অভিনয় করতে পারব। আমি অভিনয়টাকে এতটাই ভালবাসি।”
পথ দেখালেন চিরঞ্জিত
“এই কথাগুলো আমি চিরঞ্জিতকে বলেছিলাম। আমরা একসঙ্গে থিয়েটার করতাম। চিরঞ্জিত আমাকে বুদ্ধি দিল, ‘তুই পান্তাভাত, ফ্যানাভাত খেয়ে ঘুমো। মুখটা খাটে ঝুলিয়ে দিয়ে ঘুমো’। কারণ, আমার গালটাল এরকম ফোলা ছিল না, ভাঙা ছিল। চিরঞ্জিত বলত, ‘দেখবি তোর মাংস এসে যাবে। তুই মোটা হয়ে যাবি’। ”
শরীরের ওজন বাড়িয়ে অভিনয়ে প্রত্যাবর্তন
“চিরঞ্জিতের কথা আমি শুনেছিলাম। সত্যি সত্যি দেখলাম তাই হল। আমার সিজ়ার বেবি হল। এক্সারসাইজ় করতাম না। বেল্ট পরতাম না। এই সব করে, মোটাসোটা হয়ে ফিরলাম অভিনয়ে। মোটা না হলে তো পাঠ করতে দিচ্ছিল না। আর অভিনয় না করে আমি থাকতেও পারছিলাম না। আমার ভাল লাগত না। মুম্বইয়ের যত হিরোইন এসেছিলেন, বিজয়েতা পণ্ডিত, জুহি চাওলা… সকলের ডাবিং আমিই করেছিলাম সেই সময়।”
টিকে থাকার লড়াই
“একদিন ডাবিং করে বেরচ্ছি, একজন এসে আমাকে বলল, আপনার সঙ্গে কিছু লোক কথা বলবে। জানলাম, ছবির অফার নিয়ে এসেছেন। ওদের আমার শ্বশুরমশাইয়ের কাছে গিয়ে অনুমতি নিয়ে আসতে বললাম। তিনি অনুমতি দিলেন। তারপর আমিও কাজ করতে শুরু করলাম। আমার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হল ৯০-এর ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ দিয়ে। সেই ছবির সাফল্যের রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি। ২০০০ সালে অভিনয় করলাম ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ ছবিতে। সেটাও সুপার-ডুপার হিট হল। তারপর থেকে আর বসে নেই আমি। একা হরনাথ চক্রবর্তীর ১০টি ছবিতে কাজ করেছি। সবগুলি দারুণ চলেছে। অনুপ সেনগুপ্তর সঙ্গে যখন কাজ করা শুরু করলাম, খলনায়িকার চরিত্র থেকে এক্কেবারে বেরিয়ে এলাম। সেখানেও সব ছবি সুপারহিট – ‘মায়ের আঁচল’, ‘পরিবার’, ‘জামাইরাজা’… এখন এই ভাবেই আমার জীবন চলছে। এখনও কাজ করছি এবং মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এভাবেই কাজ করে যেতে চাই।”
আরও পড়ুন: Sidharth Malhotra: অভিনয় ছেড়ে পুলিশের চাকরি নিলেন সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, টুইট করে জানিয়েছেন সেই কথা