‘ভুতু’কে কেউ ভুলতে পারেন না। কিন্তু জানেন কি ভুতু নিজেই ভুতুকে ভুলে গিয়েছে। ২০১৫ সালে সম্প্রচারিত ‘ভুতু’ সিরিয়ালের ভুতুই সেই ছোট্ট ভূত, যাকে দেখার জন্য সব কাজ ফেলে টিভির পর্দার সামনে বসে পড়তেন দর্শক। ইংরেজি ভূত ক্যাসপারের আদলে তৈরি হয়েছিল বাংলা সিরিয়ালের এই দুষ্টুমিষ্টি শিশু ভূত ভুতু। অসামান্য অভিনয় করেছিল আর্শিয়া মুখোপাধ্য়ায়। যে আর্শিয়া এখন ক্লাস সেভেনের ছাত্রী। ভুতু এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, হিন্দিতেও তৈরি হয়েছিল সিরিয়ালটি। মা ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়েছিল বাচ্চা মেয়েটা। তারপর কলকাতায় ফিরে আসে আবারও ‘রানু পেল লটারি’, ‘মীরা’র মতো সিরিয়ালে অভিনয় করেছিল। দেবের সঙ্গে ‘ককপিট’ ছবিতেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। ছোট্ট তারকা পেয়েছিল বহু পুরস্কারও। কিন্তু এখন তাঁর সে সব কিছুই মনে নেই মেয়েটার। অবাক করা কথা বলেছে সদ্য বয়ঃসন্ধিতে পা দেওয়া আর্শিয়া।
মাত্র ৬ বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা শুরু করে আর্শিয়া। রাতদিন এক করে শুটিং করেছিল বাচ্চাটা। হাতা গোটানো লম্বা শার্ট, মাথা ভর্তি লম্বা অগোছালো চুল এবং গালে টোল নিয়ে ২২ মিনিট পর্দায় ছেয়ে থাকা ভুতু। রাতের বেলায় শুটিং করার সময় ঘুমিয়ে পড়ত ফ্লোরেই। আর পাঁচটা বাচ্চা যেমন পড়ে। শুটিংকে গুলি মেরে মায়ের কোল খুঁজত মেয়েটা। কিন্তু পেত না। পেত না কারণ, যে সে ভুতু। আর পাঁচটা বাচ্চার জীবন তার হতেই পারে না। তারই অপোক্ত কাঁধে অনেক বড় দায়িত্ব চাপানো যে। দর্শক মনোরঞ্জনের দায়িত্ব বাচ্চাটার উপর চাপিয়ে টিআরপি ঊর্ধ্বমুখী করেছিল চ্যানেল। তার যাতে ঘুম না পায়, তাই গোটা স্টুডিয়ো স্কুটি করে চক্কর কাটিয়ে তাঁকে জাগিয়ে রাখা হত। সামান্য চিপস এবং চকোলেটের লোভে মেয়েটা রাতের পর-রাত জেগেছে। না, এগুলো তার কিছুই মনে নেই। সব মায়ের মুখে শোনা। এটাও তাঁর শোনা যে, সে পুরস্কারও পেয়েছে, দেবের মতো সুপারস্টারের কোলে পিঠে চেপে অভিনয় করেছে।
কীভাবে সিরিয়ালে আসা আর্শিয়ার?
আর্শিয়ার দিদি একটি সিরিয়ালে অভিনয় করত। সেই সিরিয়ালের সেটে বেড়াতে যেত আর্শিয়া। সেই সিরিয়ালের পরিচালক আর্শিয়াকে কাস্ট করে ‘পটলকুমার গানওয়ালা সিরিয়াল’-এর জন্য। সেখান থেকে ‘ভুতু’র জন্য কাস্ট করা হয় আর্শিয়াকে।
ফেলে আসা দিন কিছুই মনে নেই আর্শিয়ার
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, অভিনয় দিনের স্মৃতি কী-কী মনে আছে আর্শিয়ার। অভিনেত্রীর সাফ জবাব, “আমার কিচ্ছু মনে নেই। আমি সব ভুলে গিয়েছি। সবই মায়ের কাছে গল্প শুনেছি। দেবদার সঙ্গেও আমার অভিনয়ের কথা কিছু মনে পড়ে না আর। আমার অ্যাওয়ার্ডগুলো দেখে মা বলে পুরনো দিনের কথাগুলো। আমার কিছুই বিশ্বাস হয় না। নিজেই অবাক হয়ে যাই কী-কী করেছিলাম ভেবে।”
তবে ফের অভিনয় করতে চায় আর্শিয়া। হতে চায় স্পেস সায়েন্টিস্টও। টাইমমেশিনে চেপে ফিরে যেতে চায় ২০১৫ সালে, দৌড়ে বেড়াতে চায় সিরিয়ালের সেটে। ভুতু কিন্তু না-পাওয়া শৈশবটা ফিরে পেতে চায়নি!