সদ্য বিয়ে হয়েছে গায়িকা ইমন চক্রবর্তীর। নব-বিবাহিতা ইমনের ‘দোষ’ বিয়ের পরপরই শাঁখা-পলা ‘খুলে’ তিনি হাজির হয়েছেন অনুষ্ঠানের খোলা মঞ্চে। ইমনের এই ‘দোষ’ চোখে পড়েছে তাঁরই একাংশের ভক্তদের। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সেই অনুষ্ঠানের ছবি পোস্ট করার পর ইমনের উদ্দেশে নেটিজ়েনদের একাংশের যেন এটাই প্রশ্ন: কেন কোনও এয়ো-চিহ্ন গায়ে রাখেননি গায়িকা? ‘নতুন বউ’ এমন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই নেটিজ়েনদের একাংশ বেজায় চটেছেন। তাঁদের নীতি-পুলিশিংয়ে ভেসে গেছে কমেন্ট-বক্স। সবারই একটাই অভিযোগ: বিয়ের পরপরই শাঁখা-পলাটা খুলে ফেলে ঠিক করেননি ইমন।
২০২১-এ দাঁড়িয়ে নেটিজ়েনদের এই মরাল-পুলিশিংয়ে আরও একবার প্রশ্নের মুখে তারকাদের ‘পাবলিক লাইফ’। সেই সঙ্গে প্রশ্ন, যতই উদার মনোভাবের কথা আওড়ানো হোক না কেন, পিতৃতান্ত্রিকতা সেঁধিয়ে গিয়েছে সমাজের মজ্জায়-মজ্জায়? নাকি এ নিছকই পিতৃতান্ত্রিকতার বেড়াজাল টপকে একজন তারকাকে অবাধে ‘টার্গেট’ করতে পারার মানসিক আনন্দকে তারিয়ে-তারিয়ে উপভোগ করার এক প্রবণতা? কী বললেন টলিউডের চার স্ত্রী-সেলেব? শুনল TV9 বাংলা।
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা (অভিনেত্রী, পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী): এ-কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে সমাজ এখনও পিতৃতান্ত্রিক। আর এই পিতৃতান্ত্রিকতার ধারক কিন্তু শুধু পুরুষরা নন, মহিলারাও। এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বড় হতে-হতে মহিলাদের মধ্যেও এই পিতৃতান্ত্রিকতা অজান্তে ঢুকে পড়েছে। তাই একজন মহিলা আরেকজন মহিলার শাঁখা-পলা পরা নিয়ে অনায়াসে আঙুল তুলতে পারেন। তবে পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতাটাই বিপজ্জনক। এই সময় দাঁড়িয়ে এই ধরণের মানসিকতা ঠিক নয়। বিয়ের পর কেউ সিঁদুর,শাঁখা-পলা পরবে কি পরবে না, এটা তাঁর একেবারেই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো উচিৎ।
তৃণা সাহা (অভিনেত্রী, সদ্য বিয়ে করেছেন অভিনেতা নীলকে): আমি ব্যক্তিগতভাবে বিয়ের পর কয়েকদিন শাঁখা-পলা, সিঁদুর পরার পক্ষপাতী। আমি নিজে পরতেও চাই। কিন্তু আমি পরতে চাই বলেই যে সবাই পরবে, এর তো কোনও মানে হয় না। বিয়ের পর কারও ইচ্ছে হতেই পারে শাঁখা-পলা খুলে ফেলার। এটা তো যাঁর-যাঁর ব্য়ক্তিবগত ব্যাপার। আজকের দিনে ব্যক্তি-স্বাধীনতা নিয়ে যখন আমরা এত কথা বলছি, সেই সময় এই ধরণের মানসিকতা আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে।
ত্বরিতা চট্টোপোধ্যায় (অভিনেত্রী, সদ্যই বিয়ে করেছেন তরুণ কুমারের নাতি সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে): কথায় বলে মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু! তা তো হবেই। আমাদের সমাজে মেয়েদের বেলায় তো অনেক বিধিনিষেধ। আর যে মেয়েরা নিজের বাড়িতে বা শ্বশুরবাড়িতে এই ধরণের বিধিনিষেধের মধ্যে দিন কাটায়, তারাই সব থেকে বেশি আঙুল তোলে। তাদের এই মানসিকতাই কাজ করে ‘আমি যখন করতে পারিনি,তুমিও পারবে না।’ এরাই শাঁখা-পলা পরা নিয়ে বেশি ভোকাল হয়। সেলিব্রিটি হোক বা পাশের বাড়ির মেয়ে, পান থেকে চুন খসলে এরা আঙুল তুলবেই। সেলিব্রিটিরা পাবলিক ফিগার বলে এটা নিয়ে লোক জানাজানি হয়। কিন্তু আসলে আমাদের মানসিকতাতেই ঘুণ ধরেছে। আমরা নিজেরা যদি না বদলাই, এটা কিন্তু চলতেই থাকবে। আজকের দিনে দাঁড়িয়েও যদি আমরা ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সম্মান করতে না পারি, সেটা দুঃখের।
দেবলীনা কুমার (অভিনেত্রী, সদ্য বিয়ে করেছেন উত্তম কুমারের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়কে): কিছু মানুষের মানসিকতা এখনও বদলায়নি। শাঁখা পলা পরা নিয়ে আমায় কিছু শুনতে না হলেও সম্প্রতি একটি ছবি পোস্ট করার পর আমায় শুনতে হয়েছে, “বাড়ির বউ এ রকম ছবি পোস্ট করে না।” আমি মনে করি এই সব ট্রোলের কারণে কষ্ট না পেয়ে তাদের যোগ্য জবাব ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। সবাই বলে ইগনোর কর। সেটাই হয়তো উচিত। জানি না। তবে আমার মনে হয় একই সঙ্গে প্রতিবাদটাও জরুরি।