Tapas Paul: অনুতপ্ত ছিলেন তাপস, আমি স্ত্রী হিসেবে কোনওদিন সমর্থন করিনি সেই মন্তব্য: নন্দিনী

Tapas Pal Anniversary: 'আমি চন্দননগরের মাল' মন্তব্য নিয়ে তাপস পাল সমালোচিত হয়েছিলেন সমাজের নানা স্তরে। নিজেও অনুতপ্ত ছিলেন অভিনেতা। পরবর্তীতে বলেছিলেন, "আমার বউ-মেয়েকে নোংরা ভাষায় হাজারবার রেপ করব বলা হলেও আমার চুপ থাকাই উচিত ছিল!"

Tapas Paul: অনুতপ্ত ছিলেন তাপস, আমি স্ত্রী হিসেবে কোনওদিন সমর্থন করিনি সেই মন্তব্য: নন্দিনী
তাপস পাল এবং নন্দিনী মুখোপাধ্যায় পালের বিবাহবার্ষিকী...
Follow Us:
| Updated on: Jul 08, 2023 | 7:23 PM

স্নেহা সেনগুপ্ত

২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চির ঘুমের দেশে চলে যান অভিনেতা-রাজনীতিক তাপস পাল। ’৮০ এবং ’৯০-এর দশকের সুপারস্টার তাপস পাল। যাঁর সম্পর্কে বলতে গেলে গৌরচন্দ্রিকার প্রয়োজন হয় না। আজ, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩, একাকী স্ত্রী নন্দিনী মুখোপাধ্যায় পাল তাঁদের ৩৮তম বিবাহবার্ষিকীতে প্রয়াত স্বামীর স্মৃতি আঁকড়ে বসে আছেন সকাল থেকে। TV9 বাংলার সঙ্গে তাঁর একান্ত কথোপকথনের অংশ তুলে ধরা হল। তুলে ধরা হল এমন কিছু কথা যা নন্দিনীর মতে, তিনি বলতে চেয়েছেন বহুবার। কী সেসব কথা?

৩৮তম বিবাহবার্ষিকী কেমন কাটাচ্ছেন একাকী নন্দিনী?

এখন আর সেভাবে অর্থাৎ আলাদা করে এই দিনটা কাটানোর নেই। তাপসের স্মৃতি সঙ্গে নিয়েই কাটাই। এখন বেশির ভাগ সময় চুপচাপ থাকতেই ভালবাসি। তাপসের ফুল গাছের শখ ছিল। সেই গাছগুলো থেকেই ফুল তুলে এনে এসে ওঁকে দেব আজ। আমার সারা বাড়িতে তাপসের ছবি ছড়ানো। ওঁর সঙ্গে গল্প করি। আজও তাই-ই করব। মনে হয়, এই তো সেদিনের কথা।

বিয়ের সময়ের গল্প…

আমি যখন তাপসকে বিয়ে করেছিলাম, অনেক ছোট ছিলাম। মাত্র ১৬ বছর বয়স ছিল আমার। ক্লাস টেনের পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়েছিল। সুতরাং, বাবা-মায়ের কাছে ১৬ বছর কাটিয়েছি। আর তাপসের কাছে কাটিয়েছি ৩৫টা বছর। আজ আমাদের ৩৮ বছরের বিবাহবার্ষিকী।

প্রেম নাকি সম্বন্ধ করে বিয়ে?

প্রেম-ভালবাসা তো বটেই। আমার কাজ়িনের বন্ধু ছিল তাপস। আমাদের একসঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হত। তারপর যা হওয়ার হল। আমার চেয়ে তাপস ছিল প্রায় ৯-১০ বছরের বড়। তখনও আমাদের বিয়ে হয়নি। আমাদের বাড়িতে নিয়মিত আসতেন আমার হবু শ্বশুরমশাই। আমার সঙ্গে কথা বলতেন। চাইতেন ছেলে (তাপস) সেটল্ করুক। ছেলে বলল, “না, আমি একেই (পড়ুন নন্দিনীকে) বিয়ে করব।” সেই সময় শ্বশুরমশাই-ই বলেছিলেন, আমাকে লেখাপড়া শেখাবেন। সেই ভাবেই আর কী আমার সব কিছু হয়েছে… লেখাপড়া, চাকরি। সবই হয়েছে আমার বিয়ের পর।

তাপস ছিলেন অভিভাবকের মতো…

আমার থেকে যেহেতু অনেকটাই বড় ছিল তাপস, আমি তাই ওঁকে সমীহ করে চলতাম। শ্রদ্ধা-ভক্তি করতাম। ওই তো আমাকে বড় করেছে। আমাকে মানুষ করেছে। বাবা-মায়ের আসনেই বসিয়েছিলাম তাপসকে। আমাকে কোনও কিছুতেই আটকায়নি তাপস। আমার লেখাপড়া, চাকরি… যতটা করতে চেয়েছি, সবই করতে পেরেছি তাপস ছিল বলে। স্কুলে পড়িয়েছি। তাপস একটা সময় আমার সঙ্গে ছিল। এখনও সঙ্গে আছে। আমার মনে হয়, আমি খারাপ থাকলে ও-ও খারাপ থাকবে। আমি ভাল থাকলে, ও-ও ভাল থাকবে। আমার মধ্যেই বাস করে তাপস। এভাবেই আমি আমার অনুভূতির সঙ্গে বেঁচে আছি। তাপসের কোনও ছবিতে আমি মালা পরাইনি আজ পর্যন্ত। এগুলোয় আমি বিশ্বাস করি না।

তাপসের নায়িকাদের নিয়ে ঈর্ষা?

আমার এ সব একেবারেই হত না। কারণ, আমার শ্বশুরবাড়িতে সকলে ডাক্তার ছিলেন। অনেক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞও ছিলেন। বাজ়ির যে সব মেয়ের বেবি হবে, তাঁদের তো তাঁরাই দেখতেন। তাঁদের ইন্টারনাল চেক-আপ করতেন। সেটা তো তাঁদের পেশা। তাতে কি তাঁরা অন্তরঙ্গভাবে লিপ্ত হতেন? সেই একই ভাবে দেখতে গেলে, তাপসের পেশাতেও তো নায়িকাদের সঙ্গে রোম্যান্টিক সিন ছিল। অনস্ক্রিন সেই সব সিন দেখে আমার কোনওকালেই অসুবিধা হয়নি। এবার বিষয় হল, কোনও মানুষ যদি ব্যাভিচারী হন, তখন খারাপ লাগা আসে।

মহিলা ফ্যান-ফলোয়াদের ‘কীর্তি’

মহিলা ফ্যান-ফলোয়ার কেন থাকবে না! তাপসের তো প্রচুর ছিল। সেটাই তো তাঁর প্রাপ্তি। সবাই পাগলের মতো ওঁর পিছনে ঘুরবে, কিন্তু আমি ছাড়া কেউ পাবে না, এটাই তো মজা। তাপসকে রক্ত দিয়ে চিঠি লিখতেন মহিলারা। আমার কাছেই আসত সেই সব চিঠি। আমিই খুলে পড়তাম। যখন ক্লাস ৭-এ পড়ি, তাপসের সঙ্গে আলাপ। তখনও দেখতাম মহিলাদের পাগলামি। আমি কিন্তু হিংসা করিনি। তাপস দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যেত। বলত, কেন যে হাত-পা কাটে!

তাপসের ‘আমি চন্দননগরের মাল’ মন্তব্য নিয়ে নন্দিনী…

যা হয়েছিল, সেটা অনভিপ্রেত। সে দিন তাপস যা বলেছিল, সেটা ক্ষমা করা যায় না একেবারেই। সেটা তাপস নিজে মুখে বলে গিয়েছে যে, ও কতখানি অনুতপ্ত। ক্ষমা চেয়ে গিয়েছে। আজ যদি আমি বলতে যাই, কী পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সে দিন সেই কথাগুলো তাপস বলেছিল, তাহলে ওর সেই বক্তব্যকে সমর্থন করা হয়ে যাবে। আমি জাস্টিফাই করব না। তাপস নিজে সেটার জন্য নিজেকে ‘অপরাধী’ বলে গিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ও চলেও গিয়েছে।

তাপসের মানসিক যন্ত্রণা

‘আমি চন্দননগরের মাল’ এই মন্তব্য করার পর মনে-মনে শেষ হয়ে গিয়েছিল তাপস। সে দিন কিন্তু তাপসের একটা আউটবার্সট হয়েছিল। ওর মা-মাসি-স্ত্রী-মেয়ে সবাইকে নিয়ে কু-কথা শুনতে হয় তাপসকে। ওকে শুনতে হয়েছে, ওর স্ত্রীকে-মেয়েকে রেপ করে দেওয়া হবে। কিন্তু তাতেও আমি জাস্টিফাই করব না। বলব, যতই তাতানো হোক, ওর কিন্তু চুপ থাকাই উচিত ছিল। এটা কিন্তু একা আমার কথা নয়। তাপসও সেটাতেই বিশ্বাস করে বলে গিয়েছে। ও বলেছিল, “আমার বউকে নোংরা ভাষায় হাজারবার রেপ করব বলতে পারে, আমার মেয়ের নাম নিয়ে বলতে পারে। কিন্তু আমার চুপ থাকাই উচিত! আমার দাঁতে-দাঁত চেপে সব শুনে সহ্য করা উচিত ছিল বিষয়টা।”

তাপসের অপরাধকে ক্ষমা করেননি স্ত্রী

আমরা আজও তাপসের এই অপরাধকে ক্ষমা করিনি। তাপস নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনি। কিন্তু অন্য দিকের ঘটনা কী ঘটেছিল, সেটা কি কখনও মানুষ বিচার করতে গিয়েছিল কোনওদিন? আমরা তো কেবল তাপসেরই মন্তব্য শুনি। ও তো পাগল নয়, যে ওভাবে চিৎকার করে ওই কথাগুলো বলবে। এটাই কিন্তু আমার একমাত্র প্রশ্ন…

তাপসের স্ট্রোক

২০১৪ সালের ৩০ জুলাই তাপস এই মন্তব্য করেছিল। তার একমাসের মধ্যেই তাপসের স্ট্রোক হয়। অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়ে মানুষটা। তীব্রভাবে ক্ষতি হয়ে যায় ওর। তীব্র প্রভাব পড়ে শরীরে। আর আমরা বড্ড তাড়াতাড়ি হারিয়ে ফেলি ওকে।

তাপস পালের রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত কি ঠিক ছিল?

তাপস একেবারেই ডিপ্লোম্যাটিক মানুষ নয়। ও নিজে মুখে বলেছে, “এটা আমার জায়গা নয়। অভিনয় ছাড়া আমি কিছুই জানি না আর।” আসলে কাউকে কোনওদিনও না বলতে পারেনি মানুষটা। ১৯৯৮ সালে রাজনীতিতে আসে তাপস। তখন তৃণমূল কংগ্রেস তৈরিও হয়নি ঠিক করে। তাপস পাল তখন সুপারস্টার। সেই সময় তাপসের তৃণমূলের থেকে কী পাওয়ার ছিল বলতে পারেন? তাঁর কী স্বার্থ ছিল, বলুন তো! তবে আমি আজ মনে করি, ‘না’ বলতে হয়। না হলে ওর মতো সহজ-সরল মাটির মানুষ আর গ্রামের ছেলেকে শেষ হয়ে যেতে হয়। আর আমরা যাঁরা ওকে জড়িয়ে বেঁচে আছি, আমরাও মরে বাঁচি…