আকছার দেখা যায়, ডায়াবেটিসের রোগীরা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। কিছু কিছু লোকের রক্তে সুগারের মাত্রা যেন কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসতে চায় না। আসলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের একটা যোগ রয়েছে। স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। ডায়াবেটিস থাকলে কিছু খাদ্য একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। একইসঙ্গে সঠিক খাদ্য গ্রহণ করার উপরেও জোর দিতে হয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত সুগার নার্ভ, চোখ, কিডনি, হার্টের সমস্যাও তৈরি করতে পারে। তবে ডায়াবেটিস থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত সঠিক ডায়েট মেনে চললে একাধিক সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। ডায়েটিশিয়ানরা বলছেন, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্ট মাত্রায় জল পান করুন।
এছাড়া প্রতিদিন রাত্রে এককাপ জলে মেথিবীজ ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে ওই জল ছেঁকে পান করলেও ডায়াবেটিসে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য মেলে। এছাড়া গোটা ২-৩টি আমন্ড দিয়েও দিন শুরু করা যায়। সকালে সাধারণ চায়ের বদলে পান করুন গ্রিন টি। এই চা বিপাকক্রিয়া বাড়ায়। ফলে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়। এমন ছোট ছোট পরিবর্তনগুলিই পারে আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে দরকার একটা সাতদিনের ডায়েট প্ল্যান। একটা দুর্দান্ত পরিকল্পনায় ডায়াবেটিসের রাশ থাকবে আপনার হাতেই।
সোমবার
ব্রেকফাস্ট: একবাটি ওটমিল, সঙ্গে আমন্ড বা আখরোটের মতো বাদামের দুই থেকে তিনটি টুকরো। ওটমিলে লো ফ্যাট দুধ ব্যবহার করুন। ওটস-এ আছে প্রচুর ফাইবার যা রক্তে দ্রুত শর্করা মিশতে বাধা দেয়।
লাঞ্চ: ১টি আটার রুটি অথবা এককাপ ব্রাউন রাইস। সব্জি দিয়ে তৈরি একবাটি চিকেন বা পনিরের তরকারি। ছোট একবাটি দই।
বিকেলের টিফিন: একটি আপেল বা বেরি এবং চেরি দিয়ে তৈরি মিক্সড ফ্রুট স্যালাড।
ডিনার: ১টি বা ২টি আটার রুটি। সঙ্গে একবাটি ডাল ও একবাটি ফুলকপি, মাশরুম, ব্রকোলি দিয়ে তৈরি সব্জি।
মঙ্গলবার
ব্রেকফাস্ট: ২টি সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশ। আটার রুটি দু’টি। একটি কমলালেবু অথবা পেয়ারা।
লাঞ্চ: ১ কাপ ব্রাউন রাইস বা ১টি চাপাটি। একটি ভাজা মাছ। একবাটি সব্জি। ছোট একবাটি দই।
বিকেলের টিফিন: একবাটি অঙ্কুরিত মুগ বা সেদ্ধ ভুট্টা।
ডিনার: ১ বাটি ডাল ও ১টি বা ২টি চাপাটি। একবাটি সেদ্ধ সব্জি।
বুধবার
ব্রেকফাস্ট: একবাটি পোহা কিংবা ওমলেট ও ব্রেড টোস্ট। একটি কমলালেবু।
লাঞ্চ: এক কাপ ব্রাউন রাইস। একবাটি সব্জির সঙ্গে চিকেন অথবা পনির। ছোট বাটি দই।
বিকেলের টিফিন: কয়েকটা খেজুর কিংবা রোস্টেড বাদাম কিংবা মাখানা।
ডিনার: গমের তৈরি পাস্তার সঙ্গে টস করা সব্জি।
বৃহঃস্পতিবার
ব্রেকফাস্ট: সব্জিতে স্টাফ করা পরোটা। একটি কমলালেবু বা পেয়ারা।
লাঞ্চ: পালং শাক, এগ কারির সঙ্গে ভাত।
বিকেলের খাবার: সব্জি দিয়ে তৈরি স্যুপ বা চিকেন-ধনেপাতার স্যুপ।
ডিনার: সব্জি দিয়ে তৈরি একবাটি দালিয়া।
শুক্রবার
ব্রেকফাস্ট: ডিমের পোচ দেওয়া ব্রাউনব্রেডের একটি স্যান্ডুইচ। একটি আপেল।
লাঞ্চ: চিকেন স্ট্যুয়ের সঙ্গে ভাত অথবা ১টি চাপাটি এবং দই।
বিকেলের টিফিন: রোস্টেড মাখানা অথবা ভেজিটেবল স্যুপ।
ডিনার: সেদ্ধ সব্জি বা মাশরুমের তরকারির সঙ্গে ১টি চাপাটি।
শনিবার
ব্রেকফাস্ট: উপমা, পোহা অথবা ইডলি। সঙ্গে একটি ফল।
লাঞ্চ: মাছভাজা বা ডিমের কারির সঙ্গে ভাত অথবা চাপাটি। এছাড়া থাকুক ভেজিটেবল স্যালাড।
বিকেলের টিফিন: পনির কাটলেট অথবা মশলা চাট দিয়ে ভুট্টা অথবা চানা।
ডিনার: পরোটা এবং চানা মশলা।
রবিবার
ব্রেকফাস্ট: সাধারণ ধোসা অথবা সব্জি দিয়ে দালিয়া। একটা তাজা ফল।
লাঞ্চ: ভাত অথবা চাপাটি খেতে পারেন একবাটি ডালের সঙ্গে। থাকুক একবাটি সব্জি স্যালাড।
বিকেলের টিফিন: করলা বা কলার চিপস।
ডিনার: সব্জি পোলাও অথবা ডিমের পোলাও।
মনে রাখবেন
আজ থেকেই অনুসরণ করতে পারেন ৭ দিনের ডায়েট প্ল্যান। তবে পরিমাণগুলি নিয়ে ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। কারণ সকলেরই যে প্রতিদিন একইরকম ক্যালোরি লাগবে তা নয়। কাজ, দৈহিক ওজন ও উচ্চতা অনুসারে খাদ্যের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। আর হ্যাঁ, আলাদা করে খাদ্যগুলিকে ‘ডায়াবেটিক মিল’ ভাবার কোনও কারণ নেই। সুষম এই খাদ্য বাড়ির সকলেই খেতে পারেন।
সুগার নিয়ন্ত্রণে বোনাস টিপস—
১) স্বাস্থ্যকর খাদ্য নির্বাচন করুন। অর্থাৎ চিনি, গুড়, মধু, মিষ্টি, কোল্ডড্রিংকস-এর মতো সরল কার্বোহাইড্রেট নয়, বরং খান ফাইবার সমৃদ্ধ গমের তৈরি খাদ্য। ভাতের জন্য বাছুন ব্রাউন রাইস বা ঢেঁকি ছাঁটা চাল। এছাড়া প্রোটিনের জন্য পাতে রাখুন ডাল, দই, মাছ, চিকেন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও ফাইবারের জন্য খান ফল ও শাকসব্জি।
২) নুন খাওয়ার পরিমাণ কমান। পাতে কাঁচা নুন নেবেন না। তাতে ব্লাডপ্রেশার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৩) ডায়েটে উপকারী ফ্যাটের মাত্রা বাড়ান। খান অলিভ অয়েল, নুন ছাড়া বাদাম, অয়েলি ফিশ।
৪) বিকেলের টিফিনের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস জরুরি। খেতে পারেন ইয়োগার্ট, অঙ্কুরিত মুগ, ছোলা। খাওয়া যায় সেদ্ধ ভুট্টা ইত্যাদি।
৫) প্রতিদিন এক্সারসাইজ করুন অন্তত ৪০ মিনিট। কিছু না পারলে হন হন করে হাঁটুন। সুস্থ থাকুন।