নয়া দিল্লি: স্ত্রীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারলেন না প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াত (Bipin Rawat)। তামিলনাড়ু(Tamil Nadu)-তে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় (Helicopter Crash) সস্ত্রীক বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুতে যখন গোটা দেশ শোকাতুর, সেই সময়ই তাঁর দিদিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিলেন বিপিন রাওয়াতের শ্যালক যশবর্ধন সিং। আগামী বছরই মধ্য প্রদেশে (Madhya Pradesh) যাওয়ার কথা ছিল বিপিন রাওয়াতের, সেখানে স্ত্রীর পূর্বপুরুষের ভিটে ঘুরে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। একইসঙ্গে কথা দিয়েছিলেন সেখানে সৈনিক স্কুল (Sainik School) তৈরি করার। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর পূরণ করা হল না। অভিশপ্ত এম-১৭ ভি৫ হেলিকপ্টারই কেড়ে নিল দম্পতির প্রাণ।
গতকাল দুপুরেই একটি ফোন আসে মধুলিকা রাওয়াতের ভাই যশবর্ধন সিংয়ের কাছে, সেই ফোনেই দিদি ও জামাইবাবুর দুর্ঘটনার খবর পান। সেই সময় তিনি ভোপালে ছিলেন, তবে সেনাবাহিনীর তরফে তাঁকে বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি দিল্লিতে পৌঁছে যান।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দিদির অকালমৃত্যুর খবর পেলেও অশতীপর বৃদ্ধা মাকে জানানোর সাহস পাননি যশবর্ধন সিং। বুধবার বিকেলেই তিনি বলেন,”আমার মা শাহদোলে থাকেন, তাঁর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। জবলপুর থেকে সেনাবাহিনী তাঁকে দিল্লিতে আনার ব্যবস্থা করছে, রাতের মধ্যেই তিনি দিল্লিতে পৌঁছে যাবেন। এখনও অবধি মাকে দুর্ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। আমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা বাড়ি যাচ্ছেন, তারাই মাকে সব কথা জানাবে।”
দিদি মধুলিকা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন যশবর্ধন। তিনি জানান, ১৯৮৬ সালে মধুলিকার সঙ্গে বিপিন রাওয়াতের বিয়ে হয়েছিল। সেই সময় তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদে ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি শেষবারের মতো শাহদোলে এসেছিলেন। তবে দিদি ক্রমাগত জেদ করায় জেনারেল রাওয়াত কথা দিয়েছিলেন, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসেই মধ্য প্রদেশের শাহদোলে তারা আসবেন। ওই জেলার পিছিয়ে পড়া শিশুদের সাহায্যের জন্য একটি সৈনিক স্কুল স্থাপন করার কথাও ভেবেছিলেন বিপিন রাওয়াত। সৈনিক স্কুলে সঠিক শিক্ষা লাভের মাধ্যমেই পরবর্তী প্রজন্ম সেনাবাহিনীতে যোগদানে আগ্রহী হবে বলে মনে করেছিলেন তিনি।
বিপিন রাওয়াতের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যশবর্ধন বলেন, “সম্প্রতি দিল্লিতে দশেরার সময় ওনার (বিপিন রাওয়াত) সঙ্গে শেষবার দেখা হয়েছিল। সেই সময় আমার মেয়ে দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে বিশ্ব শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার পর দেশে ফিরেছিল।”
আগামী প্রজন্মের কথা কতটা ভাবতেন বিপিন রাওয়াত, তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শেষবারও যখন দেখা হয়েছিল, উনি বলেছিলেন ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি অবশ্যই শাহদুলে আসবেন। একইসঙ্গে জেলায় আদিবাসী জনজাতির উন্নতির জন্য একটি সৈনিক স্কুল তৈরির কথাও বলেছিলেন। কাজে সুবিধার জন্য আমি যেন স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রীদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে রাখি, সেই কথাও বলেছিলেন তিনি।”
বুধবার দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ সুলুর থেকে ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিস কলেজের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে অত্যাধুনিক এম-১৭ ভি৫ হেলিকপ্টার (M-17 V5 Helicopter)। নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চলের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ই কুন্নুরের কাছে ঘন জঙ্গলে ভেঙে পড়ে হেলিকপ্টারটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মাঝ আকাশেই আগুন লাগে হেলিকপ্টারে, এরপরই পাক খেতে খেতে মাটিতে আছড়ে পড়েছিল সেনা হেলিকপ্টারটি। দুপুর ১২টা ২০ মিনিট নাগাদ ভেঙে পড়ে হেলিকপ্টারটি। ১৪ জন যাত্রীর মধ্যে সস্ত্রীক বিপিন রাওয়াতও ছিলেন। এদের মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু হয়, বেঁচে যান কেবল গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং।