‘মমতার অহংকারের সামনে তুচ্ছ জনগণের স্বার্থ’, বিজেপির টুইট-ধারায় বিদ্ধ তৃণমূল নেত্রী

বিজেপির যাবতীয় দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন খোদ নেত্রী। তৃণমূল সূত্রে খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন যে, কলাইকুণ্ডায় নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে 'অপমানিত' হতে হয়েছে তাঁকেই।

'মমতার অহংকারের সামনে তুচ্ছ জনগণের স্বার্থ', বিজেপির টুইট-ধারায় বিদ্ধ তৃণমূল নেত্রী
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: May 28, 2021 | 8:30 PM

কলকাতা: ইয়াস পরবর্তী রিভিউ বৈঠক নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে বিজেপি বনাম তৃণমূলের রাজনৈতিক তরজা। যাবতীয় অভিযোগ খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই বৈঠকে তৃণমূল সুপ্রিমোর আচরণ নিয়ে লাগাতার একের পর এক তোপ দেগেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা থেকে শুরু করে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, সকলেই একের পর এক টুইটে নিশানায় নিয়েছেন মমতাকে। প্রত্যেকেই এক সুরে দাবি করেছেন, দুর্যোগের সময়ও ন্যক্কারজনক এবং সংকীর্ণ রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি অপমানজনক আচরণও করেছেন বলে অভিযোগ।

যদিও বিজেপির যাবতীয় দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন খোদ নেত্রী। তৃণমূল সূত্রে খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন যে, কলাইকুণ্ডায় নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ‘অপমানিত’ হতে হয়েছে তাঁকেই।

একনজরে দেখে নিন মমতাকে আক্রমণ করে কে কী বললেন…

বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা লিখেছেন, “যে সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইয়াস বিপর্যস্ত বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, সেই সময় মমতাজির উচিত ছিল নিজের অহংকার দূরে সরিয়ে রেখে মানুষের স্বার্থে এগিয়ে আসা। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে হত্যা করেছে।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সুসম্পর্ক নিয়ে ওয়াকিবহাল রাজনৈতিক মহল। তিনিও ছেড়ে কথা বলেননি মমতাকে। রাজনাথ টুইটে লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে আজ যা ঘটেছে তা স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো। মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী কোনও ব্যক্তি নন, বরং সংস্থা। দু’জনেই জনগণের সেবা করতে সংবিধানের শপথ নেন। দুর্গতদের সাহায্য করতে আসা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এই ধরনের আচরণ বেদনাদায়ক।”

পিছিয়ে ছিলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। তিনি টুইট করে লিখেছেন, “মমতাদির আজকের আচরণ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সাইক্লোন ইয়াস বহু সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি করেছে, এবং এই মুহূর্তে প্রত্যের উচিক তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। দুঃখের বিষয় হল, দিদি জনকল্যাণের থেকেও নিজের অহংকারকে এগিয়ে রেখেছেন। তাঁর আজকের আচরণ পুরোপুরি সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে।”

অলংকরণ- অভীক দেবনাথ

কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আজকের রিভিউ বৈঠকে হাজির ছিলেন। বৈঠক সেরে দিল্লি ফিরে টুইটে তিনি লেখেন, “পশ্চিমবঙ্গের ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত পর্যালোচনার বৈঠকে আজ যা ঘটল তা জনাদেশের এক বিরাট বড় অপমান। মমতা কি প্রত্যেকবার শুভেন্দুকে দেখে এ ভাবেই পালিয়ে যাবেন? জয় (নির্বাচনে) তো নম্রতা এবং ভদ্রতা নিয়ে আসে। দুঃখের বিষয় হল, দিদির কাছে থেকে শুধুমাত্র অহংকারী আচরণ পাওয়া গেল।”

আরও পড়ুন: কলাইকুণ্ডায় মমতার কারণে ‘অপ্রীতিকর’ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন মোদী, দাবি সূত্রের

টুইট করেছেন বিজেপি নেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি টুইট করে লেখেন, “ভারতের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর জন্য আজ একটি অন্ধকার দিন। যে নীতিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও একবার দেখিয়ে দিয়েছেন যে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের যন্ত্রণার প্রতি কতটা অসংবেদনশীল। মমতা দিদি আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করেছেন তাতে তাঁর স্বৈরাচারী মনোভাব এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধের অভাব প্রকাশ পেয়েছে। রাজ্যের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার পরিবর্তে উনি সংকীর্ণ রাজনীতির পথ বেছে নিয়েছেন। ওনার আজকের বৈঠক এড়িয়ে যাওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়।”

যদিও পালটা তৃণমূল সূত্রের দাবি, ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপির যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করে মমতা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীকে নয়, অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকেই। যা চূড়ান্ত ‘অপমানজনক’। যদিও এটাও তিনি বলেন যে আবহাওয়ার কারণে তাঁর কপ্টার ২০ মিনিট দেরিতে কলাইকুণ্ডায় নেমেছে। কিন্তু তিনি যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছন তখন তাঁকে জানানো হয়, বর্তমানে রিভিউ বৈঠক চলছে। তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত অবমাননাকর ছিল বলে দাবি করেছেন মমতা। যদিও এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট তাঁর হাতে তুলে দেন তিনি। এরপর রওনা দেন দিঘার উদ্দেশ্যে।

আরও পড়ুন: মোদী নন, ‘অপমানিত’ মমতাই! ব্যাখ্যা দিলেন নিজেই