নয়া দিল্লি: ব্যর্থ সপ্তম দফার বৈঠকও। সোমবারের আলোচনাতেও কেন্দ্র ও কৃষক সংগঠন কৃষি আইন প্রত্যাহার এবং ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনী গ্যারান্টি নিয়ে একমত হতে পারলেন না। আগামী ৮ তারিখ ফের বৈঠকে বসবেন তাঁরা।
সোমবার বৈঠকের শুরুতে আশাবাদী ছিলেন আন্দোলনকারী কৃষকরা, ঢোকার সময় এক কৃষক নেতা বলেছিলেন, “নতুন বছরে হয়তো সমস্যার সমাধান হবে।” কিন্তু সেই আশা পূরণ হল না। কেন্দ্রের তরফে কৃষি আইন (Farm Laws) সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও কৃষক সংগঠনগুলির প্রধানরা আইন প্রত্যাহারের দাবিতেই অনড় রয়েছেন। সূত্র অনুযায়ী, কেন্দ্র এখনও কৃষকদের কৃষি আইনের উপকারিতা নিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।
বৈঠক শেষে কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির নেতা সারওয়ান পান্ঢের বলেন, “কৃষিমন্ত্রী এখনও কৃষকদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে কৃষি আইনগুলি কৃষকদের পক্ষে সহায়ক।” ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ তিকাইত বলেন, “কেন্দ্রের সঙ্গে ফের ৮ তারিখ আলোচনা হবে। আমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছি, আইন প্রত্যাহার না হওয়া অবধি বাড়ি ফিরব না।”
অন্যদিকে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার (Narendra Singh Tomar) বলেন, “আইন প্রত্যাহার করা কষ্টসাধ্য ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সরকার কৃষকদের পরামর্শ মতোই আইন সংশোধন করতে রাজি। আমরা কৃষক সংগঠনগুলিকে তিনটি আইনের প্রতিটি ধারা অনুযায়ী বিশ্লেষণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা আইন প্রতাহারের দাবিতেই অনড় রয়েছেন। আশা করছি আগামী বৈঠকে এই সমস্যার কোনও সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়া যাবে।”
Looking at today’s discussion, I hope that we will have a meaningful discussion during our next meeting and we will come to a conclusion: Union Agriculture Minister Narendra Singh Tomar https://t.co/qI6PmeHM07
— ANI (@ANI) January 4, 2021
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্প চালু করতে সম্মতি মমতার
সোমবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ বিজ্ঞান ভবনে বৈঠক শুরু হয়। প্রথমেই আন্দোলনকারী যে সকল কৃষকরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে দুই মিনিটের জন্য নিরাবতা পালন করা হয়। এরপর শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা।
গত বৈঠকের তুলনায় আজকের চিত্রটা ছিল একটু আলাদা। মধ্যাহ্নভোজনের সময়ও তা ধরা পড়ে। গত ৩০ ডিসেম্বরের বৈঠকে কৃষকদের সঙ্গেই ভোজন করেছিলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার, পীযুষ গোয়েলরা। তবে আজ দেখা যায়, কৃষকরা একাই খাবার খাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গ দিতে আসেননি কেন্দ্রের কোনও প্রতিনিধিই।
অন্যদিকে, গতকালই কৃষকরা জানিয়েছিলেন, আজকের বৈঠকে তাঁদের দাবি পূরণ না হলে আগামী ৬ তারিখ থেকে ট্রাক্টর মিছিলের (Tractor March) আয়োজন করবেন তাঁরা। পাশাপাশি একে একে বন্ধ করে দেওয়া হবে শপিং মল (Shopping Mall) ও পেট্রোল পাম্প (Petrol Pump)-গুলিও। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনও দিল্লিজুড়ে ট্রাক্টর মিছিল করবেন তাঁরা।
ষষ্ঠ দফার বৈঠকে কৃষকরা জানিয়েছিল, মূলত চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কৃষি আইন প্রত্যাহার ও ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (Minimum Support Price) আইনি গ্যারান্টি মূখ্য দাবি হলেও পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল প্রত্যাহার এবং খড়কুটো জ্বালানোর বিরুদ্ধে শাস্তি ও জরিমানা মকুবও করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বরের বৈঠকে বাকি দুটি বিষয় নিয়ে দুই পক্ষ সম্মতিতে পৌঁছালেও কৃষি আইন প্রত্যাহার বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনী গ্যারান্টি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
আজকের বৈঠকে কেন্দ্র ফের একবার আইন প্রত্যাহারের বদলে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেয়। তবে আগের মতোই এইবারও কৃষকরা তাঁদের দাবিতেই অনড় থাকে।
আরও পড়ুন: টিউবওয়েল ব্যবহারের ‘অপরাধে’ মারধর-জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি, ভয়ে গ্রামছাড়া দলিত পরিবার