মুম্বই: ছোট থেকেই চোখ টানত গ্ল্যামার। ঝোঁকের বশেই অল্প বয়সে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেখান থেকে ছাত্রনেতা হিসাবে উত্থান। সেখান থেকেই দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর রাজনীতিতে। বিধায়ক, মন্ত্রী পদ সামলেছেন দীর্ঘ সময়। তাঁর এমনই দাপট যে এক কথাতেই উঠত-বসত বলিউড। এটাই পরিচিতি বাবা সিদ্দিকির। শনিবার, দশমীর দিনে ছেলের অফিসের সামনেই গুলিবিদ্ধ হন বাবা সিদ্দিকি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া রাজনৈতিক ও বলিউড জগতে। রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান সলমন খান, সঞ্জয় দত্তের মতো অভিনেতারা। আসেন মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীস সহ অন্যান্য নেতারাও।
বাবা সিদ্দিকির পুরো নাম হল বাবা জিয়াউদ্দিন সিদ্দিকি। ১৯৫৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মুম্বইয়েই তাঁর বেড়ে ওঠা। ১৯৭৭ সালে, কৈশোরেই কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (কংগ্রেসের যুব শাখা)-র হয়ে একাধিক মিটিং-মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাবা সিদ্দিকি। সেখান থেকেই উত্থান।
১৯৮০ সালে বান্দ্রা তালুকের যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন। দুই বছরের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট পদে বসেন। ১৯৮৮ সালে মুম্বই যুব কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট হন বাবা সিদ্দিকি। এরপর, চার বছর বাদে মুম্বই পুরসভা নির্বাচনে অংশ নেন এবং জয়ী হয়ে কাউন্সিলর হন। একটানা ১০ বছর ধরে কাউন্সিলর ছিলেন তিনি।
১৯৯৯ সালে বান্দ্রা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৪ ও ২০০৯ সালের নির্বাচনেও একই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে বিধায়ক হন। ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত, যখন বিলাস রাও দেশমুখ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় বাবা সিদ্দিকি খাদ্য, শ্রম ও ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী ছিলেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে, সকলকে চমকে দিয়েই কংগ্রেসের সঙ্গে দীর্ঘ ৪০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে অজিত পওয়ারের এনসিপি-তে যোগ দেন।
বলিউডের সঙ্গে রাজনীতির যোগ দীর্ঘদিনের। বাবা সিদ্দিকির ক্ষেত্রেও তেমনটাই ছিল। বিলাসরাও দেশমুখের সময় থেকেই বলিউডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে বাবা সিদ্দিকির। বাবা সিদ্দিকির বিশেষ পরিচিতি ছিল তাঁর ইফতার পার্টি, যেখানে বলিউড ও রাজনীতি মিলেমিশে যেত। বলিউডের সমস্ত নামকরা সেলেবরাই হাজিরা দিতেন বাবা সিদ্দিকির ইফতার পার্টিতে। এমনই এক পার্টিতে শাহরুখ-সলমনের ভাঙা সম্পর্কও জোড়া লাগিয়েছিলেন বাবা সিদ্দিকি।
ফারহা খানের পার্টিতে চড় মারাকে কেন্দ্র করে বলিউডের দুই খানের মধ্যে যে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়েছিল, তা বহু মানুষ চেষ্টা করেও মেটাতে পারেননি। কিন্তু বাবা সিদ্দিকির ইফতার পার্টিতে ইচ্ছাকৃতভাবেই সলমনের বাবা সেলিম খানের পাশে বসানো হয়েছিল শাহরুখ-কে। এরপরই কথাবার্তার মাধ্যমে বরফ গলে দুই খানের মধ্যে। গত বছরও বাবা সিদ্দিকির ইফতার পার্টিতে দেখা গিয়েছিল সলমন খানকে। এমনকী, গতকাল তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনেই শুটিং বন্ধ রেখে ছুটে আসেন সলমন খান। মাঝরাতে হাসপাতালে আসেন সঞ্জয় দত্তও।