Manmohan Singh: সোনালি অক্ষরে লেখা রয়েছে কি ‘মনমোহন এরা অফ ইকোনমি’?

Jan 12, 2025 | 9:59 AM

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ মোটামুটি ৫ বছর ভারতের অর্থমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। তাঁর প্রয়াণের পর দেখা গিয়েছে এই ৫ বছরকে বলা হয়, মনমোহন এরা অফ ইকোনমি। এর পাশাপাশি আরও একটা ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Manmohan Singh: সোনালি অক্ষরে লেখা রয়েছে কি মনমোহন এরা অফ ইকোনমি?
মনমোহন সিং

Follow Us

চৌত্রিশ বছর আগে ফিরে গেলে ভারতীয় অর্থনীতির এক অন্য গল্প উঠে আসবে। ১৯৯১ সালের ৭ জানুয়ারি। জরুরি তলব পাঠিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকে আসতে বলা হয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে। ভারতের ভাঁড়ারে তখন মাত্র ৭ দিনের তেল আমদানির মতো ডলার পড়ে আছে। এই অবস্থায় কী করা উচিত? প্রশ্ন করলেন তত্‍কালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা। RBI গভর্নর এস বেঙ্কটরামনন বললেন, ‘আরবিআইয়ের ভাঁড়ারে থাকা সোনা বিদেশি ব্যাঙ্কে জমা রেখে ডলার ধার নেওয়া যেতে পারে।’ আর্থিক উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীকে ঠিক সেটাই বললেন। ২০ হাজার কিলো সোনা গচ্ছিত রেখে ২০ কোটি ডলার ধার নিয়েছিল কেন্দ্র। নির্দেশ ছিল, এই খবর যেন কাকপক্ষীতেও জানতে না পারে। কিন্তু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাংবাদিক শঙ্করণ সেটা জেনে খবর করে দেন। ২০০৬ সালে সেই সোনা দেশে ফিরিয়ে আনা শুরু। যিনি সোনা জমা রেখে ডলার ধার নেওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন, তিনি মনমোহন সিং। তখন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের আর্থিক উপদেষ্টা। আর যিনি সোনা ফিরিয়ে আনা শুরু করলেন, তিনিও মনমোহন সিং। তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ মোটামুটি ৫ বছর ভারতের অর্থমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। তাঁর প্রয়াণের পর দেখা গিয়েছে এই ৫ বছরকে বলা হয়, মনমোহন এরা অফ ইকোনমি। এর পাশাপাশি আরও একটা ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯১ সালে আইএমএফের থেকে প্রথমবার ঋণ নিতে হয়েছিল ভারতকে। তার জন্য চন্দ্রশেখর মন্ত্রিসভার বাকিদের রাজি করানোর ভার ছিল মনমোহনের উপর। এমন একটা পরিস্থিতিতেই ১৯৯১ সালের, ২৪ জুলাই বাজেট পেশ করেছিলেন মনমোহন। সেই সময় ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বাজেট। বহু বছর ধরে সেই বাজেটের উপর ঐতিহাসিক তকমা বসে গিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, মনমোহনের প্রথম বাজেট ছিল জানলা-দরজা খোলার বাজেট। বিদেশি লগ্নি টানতে ভারতের বাজার খুলে দেওয়ার বাজেট।

মনমোহনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অর্থনীতিবিদ মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়া দাবি করেন, ভারত যে আজ দুনিয়ার অন্যতম সেরা আর্থিক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে, তার পিছনে ইঞ্জিন বলতে ১৯৯১ সালের বাজেট। ফের একটা ঘটনার কথা না বললেই নয়। ১৯৯১ সালের ২১ জুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন মনমোহন। একেবারে আচমকা, তিনি যে মন্ত্রী হবেন, বা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, ঘুনাক্ষরেও জানতেন না। তত্‍কালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসীমা রাও তাঁর উপর ভরসা রেখে গুরুদায়িত্ব দিয়েছিলেন।

মনমোহন যখন প্রথম বাজেট পেশের প্রস্তুতি শুরু করছেন, সেই সময় তাঁকে একটা চিঠি দেন পিভি। চিঠির কয়েকটা লাইন খুবই অর্থবহ। সেখানে উল্লেখ ছিল, ‘অর্থমন্ত্রী হিসেবে আপনার ভাগ্যটা খুব-খুব খারাপ। আপনি বয়স্ক, পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক রোগীর অস্ত্রোপচারের ভার পেয়েছেন। আপনি রোগীকে সুস্থ করতে পারবেন বলেই আমার বিশ্বাস। আপনি যাই করুন না কেন, তাতে আমার সমর্থন থাকবে। এখন যা করার সময়, সেটা না করলে আমাদের ক্ষতি, দেশেরও। এ ছাড়া আর আপনাকে বলার মতো কিছুই নেই।’

বাজেট পেশের সময় ভিক্টর উগোর উদ্ধৃতি দিয়ে মনমোহন বলেছিলেন, ‘নো পাওয়ার ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ক্যান স্টপ দ্য আইডিয়া, হুজ টাইম হ্যাজ কাম।’ যে ভাবনা বাস্তবায়িত হওয়ার সময় এসেছে, পৃথিবীর কোনও শক্তিই তাঁকে আটকে রাখতে পারে না। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে চর্চার মধ্যে পিভির সেই সকল কথাও স্মৃতিতে ভেসে ওঠার মতোই।

Next Article