ঝড়-বৃষ্টির পরোয়া নেই, লোহার রড দিয়ে খুঁচিয়ে গিয়েছেন ড্রেন, ৩ দিন পর মিলল অবিনাশের নিথর দেহ

Child Rescue Operation: গত বৃহস্পতিবার ছেলে অবিনাশকে নিয়ে স্কুটারে করে বাড়ি ফিরছিলেন হীরালাল সরকার। জমা জলে গর্ত না দেখতে পেয়েই দুর্ঘটনা ঘটে। পাশেই ছিল খোলা ড্রেন। বাবার স্কুটার থেকে ছিটকে ওই ড্রেনের ভিতরে পড়ে যায় অবিনাশ।

ঝড়-বৃষ্টির পরোয়া নেই, লোহার রড দিয়ে খুঁচিয়ে গিয়েছেন ড্রেন, ৩ দিন পর মিলল অবিনাশের নিথর দেহ
স্নিফার ডগ নিয়ে চলছে তল্লাশি। মা-বাবাকে আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর। Image Credit source: Twitter
Follow Us:
| Updated on: Jul 07, 2024 | 12:37 PM

গুয়াহাটি: পরনে টি-শার্ট আর হাফ প্যান্ট। হাতে একটা লোহার রড। একের পর এক নর্দমা খুঁচিয়ে যাচ্ছেন হীরালাল সরকার। ঝড়-বৃষ্টি কোনও কিছুই আটকাতে পারছে না তাঁকে। কী খুঁজছেন ড্রেনে? নিজের একমাত্র ছেলেকে। তিনদিন আগে তাঁর সঙ্গেই বাড়ি ফেরার সময় ড্রেনে পড়ে গিয়েছিল ৮ বছরের ছোট্ট অবিনাশ। তারপর আর খোঁজ মেলেনি। ড্রেনে খোঁজাখুঁজি করে শুধু মিলেছে এক পাটি চটি! কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ হীরালালবাবু। আর তাঁর অদম্য চেষ্টা দেখেই গোটা শহরও নেমে পড়েছিল অবিনাশকে খুঁজতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জলাঞ্জলি হল সব আশা। খোঁজ পাওয়া গেল অবিনাশের, তবে জীবিত অবস্থায় নয়। উদ্ধার হল ৮ বছরের কিশোরের নিথর দেহ।

বন্যায় বিধ্বস্ত অসম। গত বৃহস্পতিবার ছেলে অবিনাশকে নিয়ে স্কুটারে করে বাড়ি ফিরছিলেন হীরালাল সরকার। জমা জলে গর্ত না দেখতে পেয়েই দুর্ঘটনা ঘটে। পাশেই ছিল খোলা ড্রেন। বাবার স্কুটার থেকে ছিটকে ওই ড্রেনের ভিতরে পড়ে যায় অবিনাশ। ছেলেকে ডুবে যেতে দেখে জলে ঝাঁপ দিয়েছিল বাবাও। কিন্তু হাত ফসকে ভেসে বেরিয়ে যায় অবিনাশ।

সেই দিন থেকেই হন্যে হয়ে ছেলের খোঁজ করছিলেন হীরালালবাবু। হাতে লোহার রড নিয়ে একের পর এক ড্রেনে আবর্জনা খুঁচিয়ে যাচ্ছেন তিনি শুধু এই আশায় যে যদি ছেলের দেখা মেলে। কিন্তু এক পাটি চটি ছাড়া আর কিছুই পাননি। সেই চটি তিনি তুলে দিয়েছিলেন পুলিশের হাতে।

হীরালাল বলেন, “আমি ছেলেকে খুঁজছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত শুধু এক পাটি চটিই পেয়েছি। রড দিয়ে খুঁজে হয়তো আমার ছেলেকে পাব না। সরকারের কাছে মেশিন আছে। আমার ছেলেকে খুঁজে দিতেই হবে।”

এদিকে, বন্যা পরিস্থিতির মাঝেও দুর্ঘটনার খবর শুনে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছিল রাজ্য সরকারের তরফে। স্নিফার ডগ থেকে শুরু করে সুপার সাকার, এক্সক্য়াভাটর ব্যবহার করে শহরের নর্দমাগুলির ভিতর থেকে ওই কিশোরকে উদ্ধার করার চেষ্টা চলে। নিখোঁজ কিশোরের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও। তিনি আরও জোরকদমে তল্লাশি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আজ, রবিবার গুয়াহাটির মূল শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে রাজগড় এলাকায় একটি নর্দমার ভিতর থেকে উদ্ধার হল তাঁর দেহ। দেহটি উদ্ধার করে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেহ শনাক্ত করার পর পরিবারের হাতে দেহটি তুলে দেওয়া হবে।