আজ সংবিধান দিবস। ভারতের সংবিধান রক্ষার ৭৫ বছর পূর্ণ হল ২৬ নভেম্বর ২০২৪। সেই উপলক্ষেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সরকার পক্ষের একাধিক নেতা থেকে লোকসভার বিরোধী দলনেতাও, সফলভাবে গণতন্ত্র রক্ষার ৭৫তম বর্ষ পূরণের উদযাপনের এই দিনে উপস্থিত ছিলেন।
সেন্ট্রাল হলে রাষ্ট্রপতির ভাষণে এই দিন উঠে আসে সংবিধান তৈরি করার যে কঠিন কাজ সেই কথা। তিনি বলেন, “এই সংবিধান সাংঘাতিক মেধা, এবং তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। স্বাধীনতা সংগ্রামের ফল এই সংবিধান। সেই অতুলনীয় আন্দোলনের আদর্শকেও সংবিধানে বিশেষ গুরুত্ব এবং স্থান দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের প্রস্তাবনাতেও সেই ভাবধারাকে সুস্পষ্ট রূপে সংক্ষিপ্ত ভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ন্যায়, স্বন্ত্রতা, ক্ষমতা এবং বন্ধুতা এই আদর্শের উপরেই তৈরি হয়েছে আমাদের সংবিধান। সংবিধানের প্রত্যেকটি গুণ একে অপরের পরিপূরক।”
রাষ্ট্রপতির ভাষণে স্বাধীনতার পর থেকে আর্থিক উন্নয়নের জন্য জিএসটি-এর ভূমিকার কথাও শোনা যায়। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে দেশের আর্থিক উন্নয়নের স্বার্থে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হল জিএসটি।” সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ‘নারীর ক্ষমতায়ন জরুরি বলেও জানান তিনি। রাষ্ট্রপতি মুর্মু আরও বলেন, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়মকে কার্যকরী করে সাংসদরা আধুনিক চিন্তা ভাবনার পরিচয় দিয়েছে।”
‘গরিব জনজাতি’র উন্নতির জন্য গত কয়েক বছরে অনেক কাজ করেছে বলেও জানান রাষ্ট্রপতি, তিনি বলেন, “গত কয়েক বছরে পিছিয়ে পড়া জাতির উন্নয়নের জন্য বিপুল কাজ করেছে সরকার। এখন গরিব মানুষ পাকা বাড়ি পাচ্ছেন। জল, বিদ্যুৎ, সড়কের মতো সাধারণ সুযোগ সুবিধাও উপভোগ করছেন। খাদ্য সুরক্ষা এবং চিকিৎসাও মিলছে। সমগ্র ও সমবেত বিকাশের জন্য এমন অনেক পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
এই দিন সেন্ট্রাল হলে সংবিধান দিবসে ভাষণ চলাকালীন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পাশেই উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার স্পিকার জগদীপ ধনখড়। তাঁর পাশেই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাজ্যসভায় সরকার পক্ষের নেতা জেপি নাড্ডা এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু।
অন্যদিকে, দ্রৌপদী মুর্মুর পাশেই ছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিং।
প্রসঙ্গত, সংবিধান দিবসে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ছাড়া আর কে কে ভাষণ দেবেন তা নিয়েও চাপানউতোর চলছিল সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে। কংগ্রেসের দাবি ছিল যদি প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন তাহলে বিরোধী দলনেতাকেও ভাষণ দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কংগ্রেসের বক্তব্য ছিল গণতন্ত্রের সম্মান এবং নিরপেক্ষতা রক্ষার্থেই সেই সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু শেষ অবধি কে কে ভাষণ দেবেন সেই সম্বন্ধে কিছুই জানা যায়নি। তবে এই দিন দেখা গেল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু একাই বক্তব্য রাখেন। এই দিন শ্রোতার আসনে উপস্থিত ছিলেন অমিত শাহ, শিবরাজ চৌহান সহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। বক্তব্যের শেষে সকলকে সংবিধান প্রস্তাবনার পাঠ পড়ান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।