নয়া দিল্লি: বায়ুদূষণ (Air Pollution) নিয়ে ফের একবার সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court)-র তীব্র ভৎসর্নার মুখে পড়ল কেন্দ্র (Centre)। এ দিন দিল্লিতে বায়ু দূষণ নিয়ে মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, “পাঁচতারা-সাততারা হোটেলে বসে কৃষকদের দোষারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু বাজি পোড়ানো তাদের চোখে পড়ছে না।”
এ দিন প্রধান বিচারপতি এনভি রমণ (NV Ramana) বলেন, “দিল্লিতে পাঁচতারা-সাত তারা হোটেলে বসে সকলে নিন্দা করছেন যে কৃষকরা কীভাবে দূষণ বাড়াচ্ছে। আপনারা ওনাদের জমি প্রতি আয় দেখেছেন? আমরা এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাচ্ছি যে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বাজি পোড়ানো হচ্ছে। নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে। সবকিছু আদালতের নির্দেশে করা সম্ভব নয়। আমরা কৃষকদের জরিমানা করতে চাই না। আগেই কেন্দ্রকে বলা হয়েছিল কৃষকদের কাছে গিয়ে তাদের গোটা বিষয়টি বোঝাতে এবং অন্তত এক সপ্তাহের জন্য যাতে ন্যাড়াপোড়া বন্ধ রাখা হয়, তার অনুরোধ করতে।”
এ দিন মামলার শুরুতেই কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, সরকারি অফিসগুলিতে “ওয়ার্ক ফ্রম হোম” (Work From Home) দেওয়া সম্ভব নয়। এরফলে কাজে প্রভাব পড়ে। তার বদলে কর্মীদের জন্য বিশেষ গাড়ি বা কার পুলিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। শীর্ষ আদালতেক তরফে জানতে চাওয়া হয়, “কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলিতে ১০০ শতাংশ কর্মীই কি দরকার?”, জবাবে সলিসিটর জেনারেল জানান, দিল্লি সরকার বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দিলে তার প্রভাব কেবল দিল্লিতে পড়বে, কিন্তু কেন্দ্র একই নির্দেশ দিলে তার প্রভাব গোটা দেশেই পড়বে। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমলাতন্ত্র সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।”
বিচারপতি সূর্যকান্তও বলেন, ” আপনারা এমন কোনও এক বা দুটি দিন বেছে নিচ্ছেন না কেন, যেদিন অফিসগুলি বন্ধ রাখা যাবে, যানচলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া যাবে?” দিল্লি সরকারের তরফে হাজির আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন,”পাঁচ রাজ্যের মধ্যে কেবল আমরাই ১০০ শতাংশ বাড়ি থেকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছি। প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্যও করেছি আমরা।”
এদিকে, ন্যাড়াপোড়া বা ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানো(Stubble Burning)-কে কেন্দ্র করে রাজ্য বনাম কেন্দ্রের মধ্যে যে বিরোধ শুরু হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, “সংবাদ মাধ্যমগুলিতে বিতর্কসভা থেকেই সবথেকে বেশি দূষণ ছড়াচ্ছে। প্রত্যেকের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। আমরা এখানে একটি সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি।” বিচারপতি সূর্যকান্তও এই প্রসঙ্গে বলেন, “তথ্য যাই-ই বলুক না কেন, কৃষকদের ভর্তুকি প্রয়োজন বিকল্প পথ খোঁজার জন্য। আমাদের কৃষকদের উপরে তৈরি চাপটাও বুঝতে হবে যে, কেন তারা ফসলের অবশিষ্ট অংশ পুড়িয়ে দিচ্ছেন? পাঁচতারা হোটেলে বসে দোষারোপ করলেই হবে না। তাদের জমির আয়তন দেখুন। আপনারা যে মেশিনের কথা বলছেন, তা কেনার ক্ষমতা রয়েছে কৃষকদের?”
শুনানির শুরুতেই কেন্দ্রের তরফে হাজির সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, একাধিক সংবাদ মাধ্যমে তাঁর নামে খারাপ কথা বলা হচ্ছে। তথ্য বিকৃত করে বলা হচ্ছে যে ন্যাড়াপোড়ার কারণে ৪ থেকে ৭ শতাংশ দূষণ হয়। আমরা হলফনামায় স্পষ্ট জানিয়েছি যে অক্টোবর মাসের পর থেকে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানোর কারণে দূষণ বৃদ্ধি পায়।
এর জবাবে প্রধান বিচারপতি এনভি রমণ বলেন, “এই সংখ্যাতত্ত্বগুলি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমরা দূষণ কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে চিন্তিত। সরকারি পদে থাকলে সমালোচনার মুখে পড়তেই হবে। এই বিষয়ে ভুলে যান।” এরপরই দিল্লি সরকারের পক্ষে হাজির আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সফর(SAFAR)-র তথ্য নিয়ে কথা বলতে গেলেই প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনি যদি আজকের সংবাদপত্র দেখেন, তবে প্রতিটি সংবাদপত্রে আলাদা আলাদা তথ্য পরিসংখ্যান পাবেন।”
পাল্টা জবাবে আইনজীবী সিংভি বলেন “রাজনীতি ভুলে যান। আমাদের দায়িত্ব হল আপনাদের বলা যে ন্য়াড়াপোড়ার কারণে দূষণ হয়, যা শূন্য থেকে ৫৮ শতাংশ অবধি যেতে পারে মাসের উপর ভিত্তি করে। সলিসিটর জেনারেল হয়তো ৪ বা ৬ মাসের পরিসংখ্যান নিয়ে হিসাব করে গড় পরিসংখ্যান জানিয়েছিলেন।”