বায়ুদূষণ শহুরে মানুষের অন্যতম বড় এক শত্রু। আট থেকে আশি, সকলের বিরুদ্ধেই কলকাঠি নাড়ছে এই শত্রু। যদিও আমরাই বিভিন্ন ভাবে বায়ুদূষণকে কার্যত নিমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছি। বছরে গোটা পৃথিবীতে বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় প্রায় ৮ লক্ষ শিশু। আর যারা বেঁচে রয়েছে, তাদের উপর অন্যভাবে থাবা বসাচ্ছে বায়ুদূষণ।
বায়ুদূষণ নিয়ে বহুদিন রেই বহু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আলোচনা করে কাজের কাজ কিছুই সেভাবে হয়নি। দিনকয়েক আগে ইউনিসেফের State of Global Air Report-2024 প্রকাশিত হয়েছে। আর সেই রিপোর্ট দেখলে হাড়হিম হয়ে যেতে পারে যে কোনও মানুষের। সেখানে বলা হয়েছে ৫ বছরের কম বয়সের সবচয়ে বেশি শিশু গোটা পৃথিবীতে মারা যায় অপুষ্টির কারণে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিশু মৃত্যূর কারণ হচ্ছে বায়ুদূষণ।
বায়ুদূষণের কারণে ভারতে দৈনিক মৃত্যু হচ্ছে ৪৬৪ জন শিশুর। সংখ্যাটাকে ৩৬৫ দিনে গুণ করলে, অর্থাৎ বাৎসরিক বায়ুদূষণের কারণে মৃতু শিশুর সংখ্যাটা প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার। সারা বিশ্বে এই কারণে দৈনিক প্রায় ২ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়, বছরে ৮ লক্ষ। সারা বিশ্বে ৫ বছরের কমবয়সী যত শিশু মারা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে ৫ জনে ১ জন অর্থাৎ ২০ শতাংশ শিশুই বায়ুদূষণের শিকার। আর এই দূষণ কাটিয়েও যারা বেঁচে রয়েছে তাদের একটা বড় অংশ ছোট থেকেই ভুগছে ভয়াবহ সব রোগে, যার মধ্যে শ্বাসনালীর সংক্রমণ, নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাটা অনেক বেশি।
এই রিপোর্ট বলছে বিপদ কিন্তু শুরু হচ্ছে শিশুর জন্মের আগে থেকেই। অর্থাৎ মাতৃগর্ভে যখন রয়েছে শিশু, তখন থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে বিপদ। বিষাক্ত বায়ুতে যে মহিলা শ্বাস নিচ্ছেন। তাঁর গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুর অনেকক্ষেত্রেই হচ্ছে কম ওজনের। সেই শিশু অসুখ নিয়েই পৃথিবীর প্রথম আলো দেখছে। ইউনিসেফের রিপোর্ট বলছে বায়ুদূষণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকায়। বায়ুদূষণে শিশুমৃত্যুর সংখ্যায় ভারত বিশ্বে প্রথম। তারপরে রয়েছে নাইজিরিয়া, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া ও বাংলাদেশ। গোটা ভারতীয় উপ-মহাদেশটাই প্রায় একটা বিশাল গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে।