কলকাতা: ভবানীপুরের উপনির্বাচনের (Bhabanipur Bypoll) মতো ‘হাইভোল্টেজ বাই-ইলেকশন’ নজিরবিহীন। ভোট ঘোষণার দিন থেকে রবিবার ভোটের ফলাফল প্রকাশ ইস্তক প্রত্যেকটা মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আট ওয়ার্ডের এই বিধানসভা ক্ষেত্র। ফল প্রকাশের পর দেখা গেল বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ আগামী পাঁচ বছর মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর আসন পাকা। তবে মমতার এই ভোট লড়াইয়ে যিনি নিরন্তর ময়দানে নেমে সামনে থেকে যুঝেছেন, তিনি নিঃসন্দেহে ফিরহাদ হাকিম। তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট সেনাপতি। প্রথম থেকেই ফিরহাদ বলেছিলেন, মোট ভোটের ৮০ শতাংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই পাবেন। ভোটের ফল প্রকাশের পর এক অন্য মুডে ধরা দিলেন ফিরহাদ। একেবারে ‘সুপার কুল’। আত্মবিশ্বাসী তো ছিলেনই, এবার গলায় একটা তৃপ্তিরও ছোঁয়া, ‘কেউ বলল ভবানীপুরকে নন্দীগ্রাম করে দেব, অত সোজা না। নন্দীগ্রামের তুমি হতে পার, তবে চেতলা, খিদিরপুর, আলিপুরে ববি হাকিম আছে।’ একই সঙ্গে আবেগে টইটম্বুরও। ফিরহাদ বললেন, তাঁর মৃত্যুর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দেহের উপর যেন দলীয় পতাকাটা রাখেন। সেটাই হবে পরম পাওয়া।
ওরা হিন্দু-মুসলিমের মতো বাঙালি-অবাঙালিও ভাগ করে
এবার ভোটে ‘ওয়ার্ড রেকর্ড’ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আটটার আটটাতেই জয়ী তৃণমূল। আগের ভোটেও এই সাফল্য তিনি ছুঁতে পারেননি। কিন্তু কোন জাদুমন্ত্রে এই রেকর্ড এল, তার জবাবে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম সব ওয়ার্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিড পাবেন। ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটের শতাংশ কম হয়েছে। তবু তাতেও লিড হয়েছে। বিজেপি শুধু হিন্দু-মুসলমান ভাগ করে না, বাঙালি-অবাঙালিও ভাগাভাগি করে। সেটা আমার বহু অবাঙালি বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি। সে কারণেই আমি সকালে বাঙালি এলাকায় ডোর টু ডোর করেছি, বিকেলে অবাঙালি ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা প্রত্যেকে আমাকে বলেছিলেন, ‘আমরা যে ভাষাতেই কথা বলি না কেন আমরা নিজেদের বাঙালিই ভাবি। তাই ভোটটা দিদিকেই দেব’।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিলাম, নন্দীগ্রামের বদলা নিলাম
এদিন নন্দীগ্রামে মমতার হারের প্রসঙ্গ উঠতেই ফিরহাদ হাকিম কিছুটা কটাক্ষের সুর চড়ান সেখানকার বিধায়কের প্রতি। ফিরহাদের কথায়, “ভবানীপুরের মানুষ প্রথম থেকেই একটা মানসিকতা রেখেছিলেন, মমতাকে ভোট দিয়ে ভবানীপুরের বদলা নেব। আমাদের দলের যিনি সেনাপতি ছিলেন ওখানে, উনি তো পাল্টি খেয়ে কারচুপি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন। ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিরা বেইমানি জানি না, বিশ্বাসঘাতকতা জানি না, আমরা নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে লড়তে জানি, লড়েছি।”
শুভেন্দু অনেক কারসাজি করেছিল
ভোট প্রচারে গিয়ে বার বারই নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, নন্দীগ্রাম যা করে দেখিয়েছে, ভবানীপুরও তা করে দেখাবে। এদিন তার প্রত্যুত্তরে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “ও অনেক কারসাজি করেছিল। বার বার এসেওছিল এখানে। কিন্তু নন্দীগ্রামের তুমি হতে পার, চেতলা-খিদিরপুর-আলিপুরে ববি হাকিম আছে।”
আমার যেদিন মৃত্যু হবে উনিই যেন দলীয় পতাকাটা দেন
ভোটের ফল প্রকাশের পর একেবারে আবেগে টইটম্বুর ফিরহাদ হাকিম। রেকর্ড মার্জিনে মমতার জয়ের খবর আসতেই ফিরহাদ বললেন, “আমি মেয়র থাকলাম নাকি মন্ত্রী হলাম সেটা বড় কথা না। আমার মৃতদেহের উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতে পতাকা রাখবেন, সেটাই আমার পাওয়া হবে। আজ আমি একেবারে নিশ্চিন্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেমন ভবানীপুরের মানুষ ভালবাসেন, আমারও তাঁরা মুখ রক্ষা করেছেন। ওনাদেরও অসংখ্য বাসিন্দা।”
আরও পড়ুন: Bhabanipur Bypoll Results 2021: ‘যা হওয়ার তাই হয়েছে, ব্যতিক্রমী কিছু আশা করিনি’