কলকাতা: তন্ময় ঘোষের পর এবার আরও এক বিজেপি বিধায়ক যোগ দিলেন তৃণমূলে। মঙ্গলবার তৃণমূলে ‘ঘর ওয়াপসি’ হল বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের। এদিন তৃণমূলে যোগ দিয়ে বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য পরিবর্তন হয়েছিল। যা না হওয়াই উচিৎ ছিল। একজন জনপ্রতিনিধির কাজ এলাকার উন্নয়ন, মানুষের উন্নয়ন। তা করতে গেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বড় শক্তি আর কেউ নন। আমি ঘরের ছেলে, ঘরে ফিরে এসেছি। মানুষের পাশে থাকতেই এই সিদ্ধান্ত।” এদিন তৃণমূলে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, যাঁরা মানুষের জন্য কাজ করতে চান, তাঁদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প কেউ নেই।
বিতর্ক শুরু হয়েছিল গত ৮ ফেব্রুয়ারি। বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন ছিল সেদিন। প্রথা মেনে গ্রুপ ফটোসেশন সেরে লবি ধরে এগোচ্ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হঠাৎই লবিতে দেখা যায় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে। বিশ্বজিৎ সটান পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছিলেন মমতাকে। এরপর বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরেও যান তিনি। প্রায় ২০ মিনিট কথা হয় তাঁদের। সেই থেকে জল্পনার শুরু। ছ’ মাস পর অবসান হল সেই জল্পনার। ‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলেন’।
পুরনো দলে ফিরেই বিজেপির টিকিয়ে জয়ী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “ওই দলে কাজ করার কোনও পরিবেশই নেই। প্রতি নিয়ত তা শিরোনামেও উঠে আসে। দলের মধ্যেই কোনও একতা নেই। এ ওর নামে প্রকাশ্যে বিষোদগার করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসা করছে। এর পর কি আর সেই দলের কোনও জন প্রতিনিধি মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন? আর এটাও তো মাথায় রাখতে হবে, দল তো স্থানীয় নেতৃত্বের উপর গড়ে ওঠে। বহিরাগত নেতৃত্ব দিয়ে দল চলে না। বিশেষ করে যাঁদের ভাষাগত পার্থক্য এতটা প্রকট, সেই ভাষা তো মানুষ বুঝতেই পারবেন না।”
২০১৯-এ লোকসভা ভোটের পর হঠাৎ পদ্মশিবিরে ভিড়ে যান বিশ্বজিৎ দাস। রাজনীতির কারবারিদের কথায়, বিজেপি-তে যোগদানের পর বিশ্বজিৎ শুধু বিধায়ক হয়েই থেকে যান। সাংগঠনিক ভাবে তাঁর তেমন সক্রিয়তা দেখা যায়নি। বরং বনগাঁয় বিজেপির ‘একমেবদ্বিতীয়ম’ হয়েছেন শান্তনু ঠাকুর। যিনি এখন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও হয়েছে। প্রথম থেকেই শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে বিশ্বজিৎ দাসের সম্পর্ক নিয়ে অম্লমধুর কথা শোনা গিয়েছে। এরই মধ্যে একটু একটু করে পুরনো দলের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে।
এর আগে বিশ্বজিৎ দাসের তৃণমূল যোগের সম্ভাবনার আবহে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এমএলএ হস্টেলে গিয়ে বিশ্বজিৎ দাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি অভিযোগ তোলেন, একজন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলছেন ‘কি রে কিছু ভাবলি! বিধানসভাকেও এই দল এখন পার্টি অফিস ভাবতে শুরু করেছে।’ এদিন সেই প্রসঙ্গের উত্থাপন করা হলে বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “দেখুন কে কী বলেছেন, কোথায় দেখা করেছেন সেটা আলোচ্য নয়। তবে কেউ নিশ্চয়ই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বড় নন।” আরও পড়ুন: কাস্তে-হাতুড়ি, লাল আর নয়! বড় সিদ্ধান্তের পথে ফরওয়ার্ড ব্লকের