কলকাতা: হাইকোর্টে ধাক্কা শিক্ষা দফতরের। শিক্ষকদের বাড়তি বেতন ফেরত চাওয়ার সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ কলকাতা হাইকোর্টের। গত ১৫ বছর ধরে পেয়ে আসা বর্ধিত বেতন। যা হঠাৎ স্কুল শিক্ষা দফতর (School Education Department) ফেরত চায়। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হন অভিযোগকারী শিক্ষকরা। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি ছিল। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, আপাতত বর্ধিত বেতন ফেরত চাওয়ার সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ জারি করা হল। কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) এই মামলার নিষ্পত্তি না হওয় পর্যন্ত বর্ধিত বেতনের কোনও অংশ কাটা যাবে না বলেও নির্দেশ দেয় আদালত।
২০০৪, ২০০৫, ২০০৬ অর্থাৎ ১৫ বছরেরও আগে নিযুক্ত হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে স্কুল শিক্ষা দফতরের এই নির্দেশ মাথায় বাজ পড়ার মতো। যেখানে বলা হয়, সময়ের সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। মূল্যবৃদ্ধির অনুপাতে এই বেতন বৃদ্ধি আদতে ইনক্রিমেন্ট। ১৫ বছর ধরে পেয়ে আসা এই বর্ধিত টাকা এখন স্কুল শিক্ষা দফতরকে কড়ায় গণ্ডায় ফিরিয়ে দিতে হবে। যা নিয়ে মহা ফাঁপড়ে পড়েন শিক্ষকরা। চাকরি পাওয়ার পর বিভিন্ন সময় এই টাকা বেড়েছে। কিন্তু এ ভাবে হিসাব করে সেই টাকা ফেরানো যে এক কথায় অসম্ভব তেমনটাই দাবি মামলাকারীদের। একই সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, এ ভাবে বর্ধিত টাকা কী ভাবে স্কুল শিক্ষা দফতর ফেরত চাইতে পারে? এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা।
এদিকে কেন এভাবে আচমকা টাকা ফেরত চাইছে স্কুল শিক্ষা দফতর? তাদের যুক্তিটাই বা কী? নিয়ম ছিল, চাকরি পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ ডিগ্রি নিতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। কিন্তু বিভিন্ন আইনি জটিলতায় সেই প্রশিক্ষণ না নেওয়ায় স্কুল শিক্ষা দফতর বলছে, বর্ধিত টাকা ফেরানোর কথা। সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ, যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই দাবির আওতায় পড়ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ান।
স্কুল শিক্ষা দফতর স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ে প্রশিক্ষণ ডিগ্রি না করায় এই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ‘ইনক্রিমেন্ট’-এর টাকা ফেরত দিতে হবে। আর তা ফেরত না দিলে বেতনের সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ সুবিধার যে টাকা তাঁরা পাচ্ছেন, তা থেকেই টাকা বাদ দিতে বাধ্য হবে স্কুল শিক্ষা দফতর। এরপরই স্কুল শিক্ষা দফতরের এমন সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শিক্ষক শিক্ষিকারা। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। শুক্রবার শিক্ষকদের আবেদনের শুনানির পর শিক্ষা দফতরের সিদ্ধান্তে অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি।
এ রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক এমনকী এসএসকে, এমএসকে শিক্ষিকা নিয়োগ নিয়েও কম বিতর্কে পড়তে হচ্ছে না রাজ্য সরকারকে। এরই মধ্যে পনেরো বছর ধরে পেয়ে আসা বর্ধিত টাকা ফেরতের নির্দেশ আসতেই নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
আরও পড়ুন: West Bengal Primary: আদালতের তোপের মুখে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, সশরীরে সভাপতিকে হাজিরার নির্দেশ
আরও পড়ুন: ‘হারা প্রার্থীর বিরুদ্ধে হারা প্রার্থীকে দিয়েছি’, ফিরহাদের কটাক্ষে পাল্টা বাক্যবাণ দিলীপের