সৌরভ গুহ ও প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: তাঁর একাধিক মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছিল দলকে। ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে তলব করে বিধানসভায় তলব করে তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি। জল্পনা চলছিল, তাহলে কি হুমায়ুনের বিরুদ্ধে বড় কোনও পদক্ষেপ করতে চলেছে? জল্পনা অবসান। সূত্রের খবর, আপাতত সতর্ক করেই এবারের মতো ছাড়া হল ভরতপুরের বিধায়ককে।
শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে হুমায়ুন বলেন, “বৈঠকে আমাকে কী বলা হল, তা জানতে শোভনদেববাবুর কাছে জিজ্ঞাসা করুন, উত্তর পেয়ে যাবেন।” সংবাদমাধ্যমকে দুষে হুমায়ুন বলেন, ” যে মন্তব্য ১২ তারিখে আমি করেছিলাম, ১১ তারিখ বিরোধী দলনেতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে, তা বৈদ্যুতিন কয়েকটি চ্যানেল গত ১৩ তারিখ থেকে দেখিয়ে এসেছে। সেই ব্যাপারটা ক্লোজ। আমাকে দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির তরফ থেকে ডাকা হয়েছে। খুব আলোচনা হয়েছে। ওনারা আমাকে কয়েকটি উপদেশ দিয়েছেন। আমিও ওনাদের কাছে কিছু আবেদন রেখেছি। ওনারা আমাদের কথা দিয়েছেন, আমার কথাটা গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন, আমিও কথা দিয়েছি, আগামী দিয়ে দলের শৃঙ্খলার প্রশ্নে আমি খুব সজাগ থাকব।”
তবে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, বৈঠকে হুমায়ুনকে সতর্ক করা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয়, এমন কোনও কথা বলা যাবে না। অভিযোগ থাকলে নির্দিষ্ট জায়গায় জানাতে হবে। বৈঠকে হুমায়ুনকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, দলের করলে, দলের যে নীতি আদর্শ তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এমন কথা বলা যাবে না, যাতে দলকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, হুমায়ুনকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার মাধ্যমে আসলে তৃণমূল দলের সমস্ত বিধায়কদের কাছেই একটা বার্তা পৌঁছে দিল, যে ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে কোনও ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করা যাবে না।
দলের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওকে অনেক বুঝিয়ে বলা হল। তুমি কিন্তু দলের বাইরে না। তোমার মনে ক্ষোভ থাকবে, দুঃখ থাকবে, অভিযোগও থাকবে, কিন্তু সেটা জানানোর জায়গা অন্য। কিন্তু পাবলিকলি একথা বলতে পারো না। ওকে প্রশ্ন করি, তুমি কি সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ হও নি? ও বলল, হ্যাঁ হয়েছি।তাহলে তো সংবিধান মেনে চলতেই হবে। সেটাই ওকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু অধিকারীকে পাল্টা আক্রমণ করতে গিয়ে হুমায়ুন বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন, “আমার জাতিকে আক্রমণ করবে, আমি বলব না। আমার কাছে আগে আমার দল না, আমার জাতি। আপনি লিখে দেন, আমি পরোয়া করি না। আমার জাতিকে আক্রমণ করবে, আর আমি ছেড়ে দেব?” হুমায়ুনের এই মন্তব্যের জেরেই তাঁকে শোকজ করে দল। কিন্তু তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট না হওয়ায়, তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, এদিনের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিতে ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ১২ মার্চের মন্তব্যের পরই দল যখন তাঁকে সতর্ক করেছিলেন, তখন হুমায়ুন বলেছিলেন, “উনি সঠিক কথাই বলেছেন। দলে থাকতে গেলে নিয়ম মানতেই হয়। কিন্তু সেটা কি শুধু আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? ববি দার ক্ষেত্রে বা বাকিদের ক্ষেত্রে নয়? নাকি দিদির বাড়ির ৬০০ মিটার দূরে বাস করে বলে শৃঙ্খলা মানতে হবে না!” যে ‘ববি দা’-র বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন, এদিন তাঁর সামনে বসেই জবাব দিতে হল তাঁকে।