কলকাতা: শক্রবার সকালে তিলোত্তমার ধর্ষণ করে খুনের বিষয়টা সামনে আসার পর থেকেই আরজিকরের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উঠছিল একাধিক অভিযোগ। চাপের মুখে শেষমেশ ইস্তফা দেন আরজিকরের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। কিন্তু পদত্যাগের সময়েও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলেন তিনি। তিলোত্তমা-র প্রকৃত নাম একাধিকবার মুখে নিলেন সন্দীপ ঘোষ। তাও আবার প্রেস মিট করার সময়েই। অভিযোগ উঠছে, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশও জানেন না সন্দীপ ঘোষ।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি কিংবা যৌন নিগ্রহের অভিযোগের ক্ষেত্রে নিগৃহীতার নাম, তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম প্রকাশ্যে আনা যায় না। সোমবার যখন নিজের ইস্তফার কথা ঘোষণা করছিলেন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, তাঁকে দৃশ্যত অত্যন্ত ‘কনফিডেন্ট’ লাগছিল। সাংবাদিকদের প্রতিটি প্রশ্নের জবাব, নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত জবাব অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দিচ্ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। কিন্তু সেকথা বলতে গিয়েই অন্তত তিলোত্তমার নাম একাধিকবার নিয়ে ফেললেন সন্দীপ ঘোষ।
প্রেক্ষাপট ছিল পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার আগে সন্দীপ ঘোষের প্রেস মিট। তিনি তখন বললেন, “এই ঘটনার নৈতিক দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়ে পদত্যাগ করলাম। আমার নামে যে অপপ্রচার হয়েছে, (ওঁ নির্যাতিতার নাম বলেছেন) তিলোত্তমা একা ছিল কেন, তিলোত্তমা (ওঁ আবারও নির্যাতিতার নাম বলেছেন) আত্মঘাতী হয়েছেন, এগুলো আমি কখনই বলিনি। আমার নামে মিথ্যা রটেছে। ডাক্তারদের মধ্যেও চোর ডাকাত রয়েছে, সেই মুখোশগুলো খুলে যাবে। আমি অর্থোপেডিক সার্জেন, আমার দুটো হাত রয়েছে, আমি কিছু করে খেতে পারব।” তাঁর কথায়, “আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে, আমি বাবা হিসাবে পদত্যাগ করলাম।” কিন্তু ‘বাবা’ হিসাবেও ‘নিগৃহীত’ মেয়ের নাম কীভাবে সামনে আনলেন, কীভাবে এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলেন, সেটাই প্রশ্নের।
আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, “নতুন যে ক্রিমিন্যাল ল এসেছে, সেখানেও নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া রয়েছে। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট বহুবার একাধিক কেসে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে নির্যাতিতার নাম প্রকাশ্যে বলা যায় না। ওঁ এক জন এত বড় উচ্চ পদাধিকারী, তিনি কীভাবে এতবার নাম বললেন! শুধুমাত্র অনৈতিক তা নয়, এটা বেআইনিও। বারবার অধ্যক্ষ যে মন্তব্য করেছেন, তা দায়িত্বজ্ঞানহীন। বুঝলাম না প্রথমেই সরকার কেন ব্যবস্থা নিল না, তাঁকে পদত্যাগ করার সুযোগ দিল। পদত্যাগের সময়েও আবার নির্যাতিতার নাম প্রকাশ্যে আনলেন! তিনি কী করতে চাইলেন বুঝলাম না।” চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটা বলেন, “এটা আমাদের লজ্জা। আমাদের দেশের লজ্জা। গোটা দেশের আইনের মুখ পোড়ালেন। ”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)