কলকাতা: পার্থ চট্টোপাধ্যায়র (Partha Chatterjee) বাড়িতে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার দুপুরে প্রয়াত হন পার্থবাবুর মা শিবানী চট্টোপাধ্যায়। খবর পেয়ে তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতা সেখানে পৌঁছন। প্রথমেই নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবনে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর একে একে অন্যান্যরাও পৌঁছন সেখানে। এরইমধ্যে হন্তদন্ত হয়ে সেই বাড়িতে ঢুকতে দেখা যায় বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আট মিনিট মত সেখানে ছিলেন রাজীব। বেরোনোর সময় বলে গেলেন, “আজ কোনও কথা নয়।”
ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেন তৃণমূলের এক সময়ের মন্ত্রী-বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। যেদিন তিনি দল ছেড়েছিলেন, হাতে ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, চোখে জল। এরপর রাজনীতির হাত ধরে সে জল গড়িয়েছে আরও অনেকটা। ভোটপ্রচারে রাজীবের মুখে শোনা গিয়েছে তৃণমূলের সমালোচনাও। কিন্তু সে সবকে দূরে ঠেলে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যে সরকার গড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপি সেই সরকারের সমালোচনায় যখন ব্যস্ত, সম্প্রতি তখন অন্য সুর শোনা গিয়েছে রাজীবের গলায়। দেড় মাসের একটা সরকারের সমালোচনা না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিজেপি নেতাদেরই। এমনকী ৩৫৬-এর জুজু না দেখাতেও বলেছেন তিনি। এরপরই শুরু হয় জল্পনা। তবে কি রাজীবও মুকুল রায়ের মতই ঘরে ফিরতে চাইছেন।
শনিবার কুণাল ঘোষের বাড়িতে গিয়ে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ও সেরে এসেছেন রাজীব। যে গাড়িতে তিনি গিয়েছিলেন, তার সামনে ড্যাশ বোর্ডের উপরে উজ্জ্বল উপস্থিতি ‘মা মাটি মানুষ’ লেখা, ঘাসফুলের প্রতীক আঁকা তেরঙ্গা কাপড়ের। শোনা যাচ্ছে তৃণমূলের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় রাজীব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুমতি দিলেই ‘ঘরে’ ফিরবেন তিনি। যদিও ইতিমধ্যেই রাজীবকে নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভের সুরও দেখা গিয়েছে। হাওড়ার তৃণমূল নেতা অরূপ রায়, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজীবকে ফেরাতে মোটেই আগ্রহী নন, কথায় কথায় তা বুঝিয়েও দিয়েছেন। তবে রাজীব কিন্তু সে সব মোটে আমল দিচ্ছেন না। মনে হচ্ছে, ‘ঘরের ছেলে’ ঘরে ফেরার জন্য মরিয়া।
আরও পড়ুন: মাকে হারালেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শোক জানাতে নাকতলার বাড়িতে অভিষেক
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজীবের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ ভাল। সেই সম্পর্কের জোর থেকেই বিজেপি যোগের আগে একাধিকবার নাকতলার এই বাড়িতেই পার্থ তাঁকে ডেকেছিলেন। কিন্তু সে সময় রাজীবও বিজেপিতে যেতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। তাঁকে আটকানো যায়নি। রবিবার আবারও সেই বাড়িতেই রাজীব। আট মিনিট ছিলেন সেখানে। বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আজ তিনি বলবেন না। তবে মুখে যতই তিনি কুলুপ আটুন না কেন, পুরনো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছেন তা স্পষ্ট। বিপদের দিনে পাশে দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছেন, ‘রাজদ্বারে শ্মশানে চ য তিষ্ঠতি স বান্ধবঃ।’ একইসঙ্গে জোরাল হচ্ছে গুঞ্জন, আগামী সপ্তাহেই কি তবে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন রাজীবেরও?