মঙ্গলময়ের ইচ্ছায় তৃণমূল-শুভেন্দু সমস্যা মিটে যাক চেয়েছিলাম, এখন ভাল লাগছে: শিশির অধিকারী

শহরের এক গোপন স্থানে অতি সন্তর্পণে শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব (TMC Leadership)। সেই বৈঠকে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Avishek Banerjee) উপস্থিত ছিলেন

মঙ্গলময়ের ইচ্ছায় তৃণমূল-শুভেন্দু সমস্যা মিটে যাক চেয়েছিলাম, এখন ভাল লাগছে: শিশির অধিকারী
Follow Us:
| Updated on: Dec 02, 2020 | 2:07 PM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) নাকি কলকাতা এসেছেন! সন্ধে থেকে রাজনৈতিক মহলে এমনই গুঞ্জন চলছিল। রাত বাড়তেই জানা যায়, শহরের এক গোপন স্থানে অতি গোপনে শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব (TMC Leadership)। সেই বৈঠকে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Avishek Banerjee) উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হাজির ছিলেন সৌগত রায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও । সেখানেই শুভেন্দুর ক্ষোভ বিশদে শোনা হয়। বৈঠক অত্যন্ত ইতিবাচক হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাংসদ সৌগত রায়।

চোখ বন্ধ করেই বলা যায়, এই বৈঠক তৃণমূলের জন্য স্বস্তির। শাসক দলের দলের তরফে বিগত কয়েকদিন ধরেই বরফ গলানোর চেষ্টা করছিলেন সৌগত রায়। একাধিক বৈঠকও করেন। কিন্তু শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ায় বরফ গলেনি বলেই মনে হচ্ছিল। তবে এদিনের বৈঠকের পর কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে ঘাসফুল শিবির। তবে শুভেন্দু অধিকারী নিজে এখনও এই বিষয়ে মুখ খোলেননি। তাই তিনি দলে থাকছেন কিনা সেটা স্পষ্ট হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। শুভেন্দুর বাবা ও সাংসদ শিশির অধিকারী অবশ্য ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বৈঠক শেষে তাঁর শুভেন্দুর সঙ্গে কথা না হলেও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌগত রায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে বলে জানান। শুভেন্দু দলেই থাকার তৃণমূলের দাবিতে কার্যত সিলমোহর দিয়ে বলেন, ‘দল যখন বলছে ঠিকই বলছে। আমিও চেয়েছিলাম সমস্যাটা মিটে যাক। মনে হচ্ছিল এটা একটা কোথাও গিয়ে শেষ হবে। মিটে যাওয়ার পথে এগিয়েছে। সকলকে ধন্যবাদ।’

বলাই বাহুল্য, শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আজকের বৈঠক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। মন্ত্রিসভা থেকে সরে গিয়ে দলের ওপর তিনি যেভাবে চাপ তৈরি করেছিলেন, তা চিন্তায় রেখেছিল শাসক শিবিরকে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত বরিষ্ঠ সাংসদ যেভাবে তোপ দেগে যাচ্ছিলেন, সেটাও ছিল মাথাব্যথার বড় কারণ। কিন্তু দলের থিংকট্যাংক কখনোই হাল ছেড়ে দেয়নি।

সাংসদ সৌগত রায় লাগাতার বলেছেন, শুভেন্দু দল ছাড়েননি। সেই মতো মধ্যস্থতার চেষ্টাও করে গিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠক প্রায় তিন ঘণ্টা চলে। ফলে বৈঠক থেকে ইতিবাচক কিছু উঠে আসবে বলেই আশা করছে তৃণমূল। বৈঠক শেষে সৌগত রায় TV9 বাংলা-কে জানান, “শুভেন্দুর সঙ্গে অভিষেক-সহ সবার আলোচনা হয়েছে। সবাই ঠিক করেছে একসঙ্গে কাজ করবে। নির্বাচনে তৃণমূলকে জেতাবার জন্য সবাই পরিশ্রম করবে। ক্ষোভের কোনও প্রশ্নই আসছে না।”

শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছেন চারদিন হল। তবে তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত দলের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করনেনি। রামনগরের সভায় তাঁর যে আগ্রাসী মেজাজ দেখা গিয়েছিল, সেটাও নতুন করে দেখতে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে থেকে বিজেপি নেতারা শুভেন্দুকে গেরুয়া শিবিরে স্বাগত জানাতে শুরু করেন। এমন জল্পনাও শোনা যায় যে শুভেন্দু নাকি দিল্লি উড়ে যাবেন। আর এই অবস্থায় দিল্লি উড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য যে একটাই, তা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিলক্ষণ জানেন।

আরও পড়ুন: সারদা-তদন্তে দেবযানীকে সাহায্য করতে হবে আগে, তারপর জামিনের আবেদন শোনা হবে: হাইকোর্ট

তাই এদিনের বৈঠক শুভেন্দুকে ধরে রাখার শাসকদলের একপ্রকার ‘শেষ চেষ্টা’ হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে অভিষেক ও পিকে-র উপস্থিতির তাৎপর্য অনেকটাই। কেননা, তৃণমূল সুপ্রিমো কখনই শুভেন্দুর গোঁসার কারণ ছিলেন না বলে মত অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠদের। বরং তৃণমূলের যুবরাজ ও ভোটকুশলী পিকে-কে নিয়েই মূল সমস্যা ছিল প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী। আলোচনার মাধ্যমে সেই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলেই খবর। তবে তা আদৌ মিটেছে কিনা সেটা শুভেন্দুর পরবর্তী পদক্ষেপে আর কিছুদিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

শুভেন্দু অধিকারীর মতোই দলকে চিন্তায় রেখেছিলেন ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। বিগত কয়েকমাসে তাঁর উষ্মাও প্রকাশ পেয়েছে। এদিন সেই নিয়েই পিকে-র দলের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের অবস্থান অনড় থেকেছেন বলেই খবর। দলের কেউ না এসে ‘কর্পোরেট সংস্থার’ কর্মীদের এই উদ্যোগ তাঁর মন গলাতে পারেনি। চেষ্টা অবশ্য আরেকবারও হয়েছিল। সন্ধেবেলা শীলভদ্রবাবুর বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের খাদ্য মন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তবে ‘ক্ষুব্ধ’ বিধায়ক দেখা দেননি। সুতরাং শুভেন্দুর বিষয়ে সামান্য স্বস্তি এলেও চিন্তায় কারণ এখনও থাকছে তৃণমূলের।