কলকাতা: প্রথম দফা নির্বাচনের ঠিক ৪৮ ঘণ্টা আগে ইস্তেহার প্রকাশ করছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতা অমিত মিত্র সাংবাদিক বৈঠকে ইস্তেহার প্রকাশ করেন। লোকসভা নির্বাচনের মুখে কেন্দ্রের বঞ্চনাকেই আরও একবার হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। ১০০ দিনের কাজের টাকা তো বটেই, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য সারা দেশে দলের কী নীতি নির্ধারিত হবে, তাও উল্লেখিত ইস্তেহারে। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি থেকে বিনা মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষা, প্রতি মাসে পাঁচ কেজি চাল…কী কী উল্লেখিত ইস্তেহারে?
দশটি শপথকে কেন্দ্র করে ১৫টি অধ্যায় রয়েছে।
১, নিশ্চিত সুশাসন, বাংলার উন্নয়ন।
২. আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি, বাংলার সমৃদ্ধি।
৩. শিল্পায়নের জোয়ার, উন্নয়ন সবার।
৪. অধিক উৎপাদন, কৃষকের উন্নয়ন সাধন।
৫. শিক্ষার অগ্রগতি, সমাজের প্রগতি।
৬. সুস্বাস্থ্যের অঙ্গীকার, সুষ্ঠ বাংলা সবার।
৭. পরিকাঠামো উন্নতি, দৈনন্দিন জীবনে অগ্রগতি।
৮. জাতীয় সুরক্ষায় আমরাই করব জয়।
৯. সাবলম্বী নারী, জয় জয়কার তাঁরই।
১০. যুবশক্তির বিকাশ, আগামীর আশ্বাস।
১১. সংখ্যালঘু ও তপসিলি, সকলে মিলে এগিয়ে চলি।
১২. বাংলাই গড়ে আজ, সুরক্ষিত নতুন সমাজ।
১৩. সংস্কৃতির প্রতিপালন, ঐতিহ্যের সংরক্ষণ।
১৪. সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পর্যবেক্ষণ, সবার সেরা বাংলা এখন।
১৫. জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষিত, পরিবেশ সুরক্ষিত।
তৃণমূল কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করা মাত্রই এই প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে। বললেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
দিদির শপথ ছয়: বর্ধিত আয় নিশ্চিত এবার, ফুটবে হাসি অন্নদাতার। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ভারতবর্ষের কৃষকদের জন্য ন্যূনতম গড় খরচের চেয়ে কম পক্ষে ৫০ শতাংশ বেশি ধার্য করা হবে।
দিদির শপথ সাত: স্বল্প মূল্য পেট্রো পণ্য, ভারতবর্ষে সকলে ধন্য। পেট্রল, ডিজেল, এলপিজি-র দাম সাশ্রয়ী মূল্যে সীমাবদ্ধ করা হবে। দাম ওঠানামার জন্য প্রাইজ় স্টেবিলাইজেশন ফান্ড করা হবে।
দিদির শপথ আট: নিশ্চিত ভবিষ্যত অর্জন, যুবশক্তির গর্জন। ২৫ বছর পর্যন্ত সকল স্নাতক ডিপ্লোমা হোল্ডারকে তাঁদের দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বাড়াতে এক বছরের শিক্ষানুবিশ প্রতিশিক্ষণ প্রদান করা হবে। শিক্ষানুবিশদের অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের সহায়তা করার জন্য মাসিক বৃত্তি প্রদান করা হবে। উচ্চ শিক্ষার শিক্ষার্থীদের ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড প্রদান করা হবে।
দিদির শপথ নয়: স্বচ্ছ আইন স্বাধীন ভারত। ধোঁয়াশা যুক্ত সিটিজেন্স অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বিলুপ্ত করা হবে। NRC ন্য়াশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্স বন্ধ করা হবে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড ভারত জুড়ে প্রয়োগ করা হবে না।
দিদির শপথ দশ: বাংলার লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব মহিলাকে মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আয়ুস্মান ভারত স্বাস্থ্য বিমাটির বদলে একটি উন্নতর স্বাস্থ্য সাথী বিমা হবে। যা ১০ লক্ষ টাকার বিমার সুবিধা প্রদান করবে।
অমিত মিত্র: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি উক্তি আমির কোট করছি। ওঁ লিখেছেন, “বাংলা ও দেশের স্বার্থ বিরোধী অপশক্তিকে দমন করব।” দিদির শপথ: ১০টি বক্তব্যে শপথ করেছেন দিদি।
প্রথম শপথ: বর্ধিত আয় শ্রমিকের সহায়। সমস্ত জব কার্ড হোল্ডারদের ১০০ দিনের গ্যারান্টিযুক্ত কাজ প্রদান করা হবে। সমস্ত শ্রমিকরা দেশ জুড়ে দৈনিক চারশো টাকা বর্ধিত ন্যূনতম মজুরি পাবেন।
দিদির শপথ দুই: দেশের জুড়ে বাড়ি, হবে সবারই। দেশের সমস্ত গরিব মানুষদের জন্য আবাসন নিশ্চিত করা হবে। প্রত্যেককে নিরাপদ ও পাকা বাড়ি প্রদান করা হবে।
দিদির শপথ তৃতীয়: জ্বালানির জ্বালা কমবে, দেশের জ্বালা ঘুচবে। প্রত্যেক বিপিএল পরিবারকে বছরে বিনা মূল্যে ১০টি সিলিন্ডার দেওয়া হবে। যাতে তারা পরিশ্রুত রান্নার জ্বালানি পেতে পারেন। এর মাধ্যমে পরিষেবা পরিবেশ বান্ধব রন্ধন প্রক্রিয়া ব্যবহারের অভ্যাস বাড়ানো হবে।
দিদির শপথ চতুর্থ: অনেক হয়েছে শাসন, এবার দুয়ারে রেশন। প্রতি মাসে প্রত্যেক রেশন কার্ড হোল্ডারকে পাঁচ কেজি বিনামূল্যে রেশন, চাল ডাল, শস্য প্রদান করা হবে। রেশন প্রত্যেক সুবিধাভোগীর দুয়ারে বিনা মূল্যে পৌঁছে দেওয়া হবে।
দিদির শপথ পাঁচ: আমাদের অঙ্গীকার, নিরাপত্তা বাড়বে সবার। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যুবকদের উন্নতির স্বার্থে অন্যান্য অনগ্রসর জাতি, তপসিলি জাতি, উপজাতি, উচ্চশিক্ষার বিস্তার করা হবে। বৃত্তি বাড়ানো হবে।
বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি খুঁজে পাবেন ইস্তেহারে। ইচ্ছাকৃত বঞ্চনা। তার সঙ্গে পাবেন এমন একটি মনোভাব, যা শুধু মানুষকে অসম্মান করার। বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকার মানুষের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, মৌলিক অধিকার, সেগুলো কীভাবে ছিনিয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নীতিগুলো কীভাবে বিজেপি ক্ষুণ্ণ করছে, কীভাবে বিরোধীদের কন্ঠ রোধ করছে, তার প্রতিচ্ছবি।