কলকাতা: পুজো সকলের। উৎসবও। কালিকাপুরের এক হোমে শারোদৎসবে মেতেছেন রূপান্তরকামীরা। এ এক ভিন্ন ভাবনার শক্তি আরাধনা। রূপান্তরকামীদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি রয়েছে। তাঁদের অনগ্রসর তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু সমাজ এখনও ততটা উদার হয়নি। এখনও মূল স্রোতে রূপান্তরকামীদের স্বাগত জানাতে তৈরি নয় সমাজের একাংশ। তবে সেসব দূরে ঠেলে পুজোর চারটে দিন সকলে মিলে আনন্দে মেতে থাকাই আমাদের লক্ষ্য। একজনও যেন সেই আনন্দোৎসব থেকে বঞ্চিত না হন। ছিট কালিকাপুরের হোমে রঞ্জিতা সিনহা তাই নিজেই পুজোর আয়োজন করেছেন।
রঞ্জিতা জানালেন, “আমাদের যে প্রতীকী রূপটা অর্ধনারীশ্বরের। যে শিব, সে-ই পার্বতী। এই যে এত লিঙ্গ বৈষম্যের মুখে পড়তে হয় আমাদের, যারা এটা করেন তাঁদের আমরা বার্তা দিতে চাই ঈশ্বরের মধ্যেও অর্ধনারীশ্বর রূপ আছে। অর্ধাঙ্গ শিব, অর্ধাঙ্গ প্রকৃতি।”
এমনও অনেকে এবার পুজোয় অংশ নিয়েছেন, যাঁদের পুরো পরিবার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মা, ভাই বোন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়েই পুজোয় মেতেছেন তাঁরা। তাঁদের চোখে, মুখে এক অদ্ভূত পরিতৃপ্তি। অতল শান্তি। বলছেন, ‘প্রথমবার এ ভাবে এত ভাল করে পুজো কাটাচ্ছি।’
রায়ান সেনও রূপান্তরকামী। তিনি জানালেন, “এই প্রথমবার আমি সেই সত্বা নিয়ে মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি, যে সত্বায় আমি মন থেকে বিশ্বাসী।” রূপান্তরকামীদের এমন অনেকেই আছেন যাঁরা সমাজের একটা পোক্ত স্থানে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেখানে আইনজীবী আছেন, অধ্যাপক আছেন, পুলিশ কর্মী আছেন, শিল্পী আছেন, অভিনেত্রী আছেন। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা নিজেদের অন্তরের সত্বাকে প্রকাশ করলেও সমাজের ভ্রূকুঞ্চন উপেক্ষা করতে পারেননি এখনও।
যে সমস্ত রূপান্তরকামীদের পরিবার কিংবা স্বজন মেনে নেয় না, তাঁদের দু’হাতের উষ্ণ অভ্যর্থনায় গ্রহণ করে গরিমা গৃহ। সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে চলে এই গরিমা গৃহ। সেখানেই বাড়ির পুজো নিয়ে এসেছেন রঞ্জিতা সিনহা।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: ‘পশ্চিমবাংলায় তো একজনই পুজো উদ্বোধন করেন’, ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে বললেন দিলীপ