বনগাঁ: উত্তর ২৪ পরগনা: বঙ্গে পৌরনির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। এরমধ্যে ফের বিতর্কিত মন্তব্য করলেন বনগাঁ সংসদীয় জেলার তৃণমূল সভানেত্রী (TMC Leader) আলোরানি সরকার। পুরভোটে কেউ গোঁজ প্রার্থী দিলে মেরে চামড়া গুটিয়ে নেবেন এমনটাই হুমকি দিয়ে জানান আলোরানি। পাল্টা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চাপ বলে কটাক্ষ পদ্ম শিবিরের (BJP)।
গাইঘাটার ডুমায় যোগদান অনুষ্ঠানে গিয়ে এদিন আলোরানি বলেন, “দলের কোনও সদস্য যদি কোনওরকম গোঁজ প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে তাঁদের চামড়া আমি গুটিয়ে নেব। দল ঠিক মতো সিদ্ধান্ত নেবে। গোঁজ প্রার্থী আমরা দিতে দেব না। দল স্বচ্ছ, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা আছে, এমন মানুষদের ভোটে দাঁড় করাবে। আমরাও তার হয়েই লড়াই করব, তাঁদের জিতিয়ে আনব।”
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, “কোনওরকম গোঁজ প্রার্থীকে বরদাস্ত করা হবে না। এমন কিছু কেউ যেন করার চেষ্টা না করে।” তারপর একটু থেমে তিনি নিজেই বলেন, “শঙ্কর ভাল ছেলে। ওর সঙ্গে কোনও সমস্যা নেই। ওকে একটু বুঝিয়ে বলতে হবে। কিন্তু, একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, দল যাকে টিকিট দেবে সেই প্রার্থী হবে। অন্য কেউ না। ”
এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে পুরসভার প্রাক্তন প্রশাসক শঙ্কর আঢ্যকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দলের উচ্চপদে থাকা নেতৃত্বের এই ভাষা হওয়া উচিত নয়। ভাষা সংযত করা দরকার। কে, কার চামড়া গোটাবে, তা ভোটের পর দেখা যাবে।’’ অন্যদিকে, তৃণমূলনেত্রীর এ হেন মন্তব্যে কার্যত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছে বিজেপি। বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডল বলেছেন, ‘‘এ সব তৃণমূলের নিজস্ব বিষয়। তাঁরা কাকে চামড়া গোটাবে, কাকে মারবে, ওদের ঠিক করে নিতে দিন। বনগাঁর মানুষ ভারতীয় জনতা পার্টির হাতে পুরসভা তুলে দেবে। তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে মানুষ এখন থেকেই ভয় পাচ্ছেন।’’
প্রসঙ্গত, গত জুন মাসেই বনগাঁ পুরসভায় বড়সড় রদবদল হয়েছিল। বনগাঁ পুরসভার প্রশাসক শঙ্কর আঢ্যকে সরিয়ে সেই জায়গায় নিয়ে আসা হয় বিধায়ক গোপাল শেঠকে। বনগাঁ পুরসভার প্রসাশক পদ থেকে শঙ্করকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে অনেক দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। বিধানসভা নির্বাচনের দেড়মাস পরেই এই সিদ্ধান্ত নেয় দল।
২০১৫-র পুরনির্বাচনে বনগাঁর ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে তৃণমূল জয়লাভ করে৷ ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে তখন চেয়ারম্যান হয়েছিলেন শঙ্কর। এর পর ২০১৯-এর মে মাসে ১৩ জন কাউন্সিলর শঙ্করের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার ও স্বজনপোষণের অভিযোগ করে অনাস্থা আনেন। তাঁরা চেয়ারম্যান পদ থেকে শঙ্করকে সরিয়ে দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন জেলা নেতৃত্বের কাছে। তারপর যদিও কয়েকজন কাউন্সিলর শঙ্করের পক্ষে সুর তোলেন। বাকিরা যোগ দেন বিজেপিতে। সেসময়, শঙ্কর জানিয়েছিলেন, তাঁকে না জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে দলের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি শঙ্কর।
পৌরসভা নির্বাচনে শঙ্কর ও গোপালের নিজ নিজ অনুগামীরা ভোটের ময়দানে একে অপরের পাশে দাঁড়াবে না বলেই অনুমান সংশ্লিষ্ট মহলের। সেখানে প্রাক্তন পুর প্রশাসক দলের টিকিট না পেলে নিজের উদ্যোগে দাঁড়িয়ে পড়তে পারেন ভোটে। তেমন পরিস্থিতি যাতে না হয়, সেকথা জানিয়েই আগে থেকেই এদিন হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূলে নেত্রী আলোরানি সরকার।
আরও পড়ুন: Enamul Haque: ‘সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন’, গরুপাচার-কাণ্ডে ফের জামিন খারিজ এনামুলের