Lakshmi Puja 2024: অষ্টরূপে আমাদের রক্ষা করেন দেবী মহালক্ষ্মী! কোন রূপের কী মাহাত্ম্য?
Lakshmi Puja 2024: বাংলাতেও কোথাও কথাও নবদুর্গার পুজো করার চল রয়েছে। আবার তাঁরই কন্যা ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মী। শাস্ত্র মতে তাঁরও রয়েছে আটটি রূপ। জানেন মহালক্ষ্মীর সেই আট রূপ কোনগুলি?
ন'দিন ধরে নয় রূপে সমগ্রে দেশে পূজিত হন দেবী দুর্গা। বাংলাতেও কোথাও কথাও নবদুর্গার পুজো করার চল রয়েছে। আবার তাঁরই কন্যা ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মী। শাস্ত্র মতে তাঁরও রয়েছে আটটি রূপ। জানেন মহালক্ষ্মীর সেই আট রূপ কোনগুলি?
আদি লক্ষ্মী - শাস্ত্র মতে দেবী লক্ষ্মীর পুরনো ও প্রধান রূপ হল আদি লক্ষ্মী। মহালক্ষ্মীর এই রূপ শ্রী ও ভার্গবী নামেও পরিচিত। নারায়ণের পাশে সর্বদা এই রূপেই দেখা যায় তাঁকে। দেবীর দুই হাতে থাকে পদ্ম ও শ্বেত পতাকা। দুই হাত থাকে অভয় ও বরদা মুদ্রায়। দেবীর গায়ের রং হলুদ এবং পরনে থাকে লাল বস্ত্র।
ধনলক্ষ্মী - একবার অর্থের গুরুত্ব নিয়ে মত পার্থক্যের জেরে বৈকুন্ঠ ত্যাগ করে মনুষ্য রূপে মর্ত্যে চলে আসেন লক্ষ্মী দেবী। এরপরেই দারিদ্র কাঠুরের রূপে পৃথিবীতে আসেন নারায়ণও। মনুষ্যরূপেই লক্ষ্মীর প্রেমে পড়েন নারায়ণ। বিয়ে হয় তাঁদের। তবে দরিদ্র কাঠুরে বিয়ে করার জন্য কুবেরের থেকে টাকা ধার করেন। সেই অর্থ শোধ করতে না পেরে দেবী লক্ষ্মীর স্মরণ করেন নারায়ণ। এরপরেই অর্থের গুরুত্ব বুঝতে পারেন দেবী ধনলক্ষ্মী। এই দেবীর ছয় হাত। পাঁচ হাতে থাকে শাঁখ, চক্র, পবিত্র কলস, তির-ধনুক ও স্বর্ণ মুদ্রা। ষষ্ঠ হাত থাকে অভয় মুদ্রায়।
গজলক্ষ্মী - নারায়ণের ভক্ত ছিলেন এক বিশালাকার হাতি গজেন্দ্র ও দেবী লক্ষ্মী। নারায়নের আদেশেই দু'জনে একত্রে নারায়ণের আরাধনা শুরু করেন। দেবীর চার হাত দুই হাত থাকে অভয় ও বরদা মুদ্রায়। দুই হাতে থাকে পদ্ম। দুই পাশে থাকে দুই হাতি। যাঁদের শুড় থেকে বেড়িয়ে আসা জল অবিরাম ধারায় ঝরে পড়ে লক্ষ্মীদেবীর দেহে।
সন্তানলক্ষ্মী - এই রূপে দেবী ষড়ভূজা। এক শিশুকে কোলে নিয়ে দেবী বিরাজ করেন পদ্মাসনে। দেবীর দুই হাত থাকে অভয় মুদ্রা ও বরদা মুদ্রায়। বাকি চার হাতে রয়েছে দুটি কলস, তরোয়াল ও ঢাল। সন্তানদের মঙ্গলকামনায় এই রূপের আরাধনা করা হয়।
বীরলক্ষ্মী - এই রূপ ধৈর্যলক্ষ্মী নামেও পরিচিত। কথিত ভোজরাজ্যের রাজা ভোজ ছিলেন অষ্ট লক্ষ্মীর পূজারি। একবার দেবী রাজা ভোজকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন অষ্টলক্ষ্মীর মধ্যে সাত লক্ষ্মীর রাজ্য ছেরে যহেরে প্রস্থানের সময় হয়েছে তাই যেকোনও এক রূপকে বেছে নিতে। সেই রূপ বিরাজমান হবেন দেবী। তখন রাজা ভোজ এই বীররূপ বেছে নেন, কারণ সাহস ও ধৈর্য্য থাকলে সব কিছুই সম্ভব। শৌর্য ও বীরত্বের প্রতীক দেবীর হাতে রয়েছে শাঁখ, চক্র, ধনুক, তির, ত্রিশূল ও সোনার ফলক। বাকি দুই হাত থাকে অভয় ও বরদা মুদ্রায়।
বিজয়লক্ষ্মী - কথিত, এক দরিদ্র ব্যক্তি ছিলেন দেবী লক্ষ্মীর একনিষ্ঠ ভক্ত। তাঁর নিষ্ঠা দেখে তুষ্ট দেবী দর্শন দিয়েছিলেন। কিন্তু ভক্তকে আরও একটু পরীক্ষা করার জন্য দেবী বলেছিলেন, তার জন্ম অশুভ মুহূর্তে তাই তিনি জীবনে সম্পদশালী হতে পারবেন না। এ কথা শুনেও দেবীর আরাধনা থেকে বিচ্যুত হননি ওই ভক্ত। বরং আরও কঠোরভাবে শুরু করেছিলেন লক্ষ্মীর তপস্যা। ত্যাগ করেছিলেন আহার ও নিদ্রা। বিচলিত লক্ষ্মী তখন ভক্তের কুটিরে উজাড় করে দিয়েছিলেন তাঁর ধনসম্পদ। কিন্তু সেই দরিদ্র ভক্ত ততদিনে জয় করেছিলেন নিজের কামনা ও বাসনা। তাঁর কাছে অর্থ সম্পদ হয়ে উঠেছিল মূল্যহীন। তাই দেবী লক্ষ্মীর দেওয়া সম্পদ দিয়ে তিনি নির্মাণ করেছিলেন বিজয়নগর রাজ্য। সমস্ত সম্পদ তিনি বিলিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্যের জনসাধারণের মধ্যে। এই দেবীই হলেন বিজয়লক্ষ্মী। অষ্টভুজা এই দেবীর পরনে রক্তবস্ত্র। দেবীর ছ'টি হাতে থাকে চক্র, শঙ্খ, তরবারি, ঢাল, ফাঁস ও পদ্ম। দুটি হাত থাকে বরদা ও অভয় মুদ্রায়।
বিদ্যালক্ষ্মী - পদ্মাসনা, শুভ্রবস্ত্র পরিহিতা, শ্বেতবর্ণা দেবী বিদ্যালক্ষ্মী জ্ঞানরূপ ধনপ্রদায়িনী। চতুর্ভুজা দেবীর দুটি হাতে থাকে দুটি পদ্ম। অন্য দুই হাত অভয় ও বরদা মুদ্রায়। দেবী বিদ্যালক্ষ্মী বৈষয়িক সুখ ও সমৃদ্ধির দেবী নন। তিনি জ্ঞান, বুদ্ধি ও আত্মিক সমৃদ্ধির দেবী। তিনি ভক্তের সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত করেন।
ধান্যলক্ষ্মী - কথিত অজ্ঞাতবাসে পাণ্ডবরা এক বার ঘন অরণ্যে অনেক খুঁজেও খাবার জোগার করতে পারেননি। পাণ্ডবদের অসহায় অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে, দেখা দিয়ে পাণ্ডবদের হাতে আহার্য্য বস্তু পূর্ণ একটি পাত্র তুলে দিয়েছিলেন দেবী। ওই পাত্রের বিশেষত্ব ছিল, খালি হয়ে গেলে নিজে থেকেই আবার ভরে উঠত। এই ভাবেই ক্ষুধার্ত ভক্তদের রক্ষা করেন দেবী ধান্যলক্ষ্মী। এই রূপে দেবী অষ্টভুজা। কৃষিসম্পদের প্রতীক দেবীর পরনে থাকে সবুজ বস্ত্র। আটটি হাতের মধ্যে ছ'টি হাতে দুটি পদ্ম, গদা, ধানের শিষ, আখ ও কলা থাকে। বাকি দুটি হাত অভয় ও বরদা মুদ্রায়। নবান্ন উৎসবে বাংলার প্রতিটি কৃষকের গৃহে পূজিতা হন এই দেবী।