এ যেন বাস্তবের পাতালপুরী। চারিদিক জনমানবশূন্য, যেদিকেই তাকাবেন শুধু চোখে পড়ে গুহা আর গুহা। গুহাগুলি দিয়ে নেমে গিয়েছে সুড়ঙ্গ, মাটির নীচে। আধো আলো সুড়ঙ্গের সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলেই পাবেন রূপকথার রাজ্যের হদিস।
শুনতে অবাক লাগলেও এই গ্রাম কিন্তু বাস্তবেই বিদ্যমান। সুড়ঙ্গ পেরিয়ে নীচে গেলে দেখতে পাবেন কত শত মানুষের বাস সেখানে। এ যেন পাতালপুরিতে স্বর্গরাজ্য। মাটির নীচে হলেও প্রযুক্তির দিক থেকে কিন্তু কোনও খামতি নেই।
দামি দামি হোটেল, সুইমিং পুল থেকে সব অত্যাধুনিক সামগ্রীর রয়েছে এখানে। রয়েছে ক্লাব থেকে পানশালা, আর্ট গ্যালারি সব কিছুই। মানুষজন, জনপদ সব মিলিয়ে জমজমাট এক এলাকা। কোথায় আছে এই গ্রাম জানেন?
অস্ট্রেলিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে মালভূমিতে অবস্থিত এই গ্রাম। অ্যাডিলেড থেকে ৮৪৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই গ্রাম কুবের পেডি। কুবার পেডি শব্দ দুটি এসেছে স্থানীয় নাম কুপা পিটি থেকে যার বাংলা অর্থ সাদা মানুষের গর্ত। অবশ্য গ্রাম না বলে আস্ত একটা শহর বললেও এটাকে ভুল বলা হবে না।
এক সময়ে এই শহরকে একসময় উপল পাথরের শহর বলা হত। কিন্তু কেন এই নাম জানেন? আসলে এই শহরের মূল বৈশিষ্ট্য হল, এখানে বহুমূল্য রত্নের খনি রয়েছে। বিশেষ করে উপল নামে এক মূল্যবান রত্নের খনি রয়েছে। এমনকি সারা বিশ্বে যতটা এই পাথর পাওয়া যায় তার ৯৫ শতাংশই উৎপত্তি স্থল এই কুবের পেডি গ্রাম। এছাড়াও রয়েছে বিশাল তেলের খনিও।
হঠাৎ এত জায়গা থাকতে মাটির নীচে কেন গড়ে তুলতে হল এই শহর। এর পিছনে আছে প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রামের ইতিহাস। কুবের পেডি শহরের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯১৫ সালে। অর্থাৎ এই শহরের বয়স প্রায় ১১০ বছর।
সেই সময় অস্ট্রেলিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে গ্রীষ্মের চরম দাপট। এতটাই দাপট যে বাঁচা দায়। কুবের পেডি এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির বেশি। তখন আজকাল কার মতো এসি বা কুলার ছিল না।
গরমের হাত থেকে বাঁচতে মাটি খুঁড়তে শুরু করেন বাসিন্দারা। মাটির তলাতেই তৈরি করেন পাকাপাকি ভাবে থাকার ব্যবস্থা। সেই থেকেই পৃথিবীর অন্যতম বিষ্ময় এই গ্রাম। এখন এই গ্রামে মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় পাতাল গ্রাম। তাই গড়ে উঠেছে পর্যটন শিল্প। রয়েছে বিলাস বহুল সব হোটেলও। (সব ছবি - Getty Images)