
পূর্ব মেদিনীপুর: পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হলো বিজেপি কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাস দাসের নিথর দেহ। বুধবার রাতেই পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিস্তার

সূত্রের খবর, তিস্তার দেহ প্রথমে কলকাতা পৌর সভা ভবন,তার পর ৬ নম্বর মুরলিধর লেন, সেখান থেকে তাঁর নিজের ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। ইতিমধ্যেই, তমলুক জেলা হাসাপাতালে, সাংগঠনিক জেলা বিজেপি নেতৃত্বের তরফে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর মহিলা মোর্চার তরফে সিঁদুর পরিয়ে শেষ সম্মান জানানো হয় তিস্তাকে।

নিজেদের গাড়িতেই পরিবারের সঙ্গে হেঁড়িয়া কলেজ থেকে দিঘা হয়ে ফিরছিলেন কলকাতার ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি পুরপ্রতিনিধি (BJP Councilor) তথা ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর তিস্তা বিশ্বাস দাস। কিন্তু ফেরার পথেই দুর্ঘটনা। আচমকা নিমতৌড়ির কাছে পেছন থেকে ধাক্কা মারে একটি ট্যাঙ্কার। গাড়ির পেছনেই বসেছিলেন তিস্তা। দ্রুত গতিতে আসা ট্যাঙ্কারের ধাক্কায় সর্বাধিক জখম হন তিনিই। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই গাড়িতেই ছিলেন তিস্তার স্বামী ও মেয়ে। তাঁরাও গুরুতর জখম হন।

বিজেপি পুরপ্রতিনিধির মৃত্যুর খবর পেয়ে তত্পর পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তমলুকের এসপি ও জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। মৃত তিস্তার মেয়ে ও স্বামীকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁদের চিকিত্সা হবে। এদিকে তিস্তার মৃত্যুর খবর পেয়ে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভিড় করেন সেখানকার বিজেপি নেতারা। কলকাতায় তিস্তার গডসে ফার্স্ট লেনের বাড়িতেও ভিড় প্রতিবেশীদের। তাঁর বাড়িতে যান তৃণমূল বিধায়ক দেবাশিষ কুমার।

তিস্তার স্বামী গৌরব বিশ্বাসের কথায়, "ওর আজ এমএড-এর রেজাল্ট বেরিয়েছিল। সেইটা আনতেই আমরা এসেছিলাম। ফেরার সময়ে যে এমন ঘটনা ঘটবে তা বুঝতেও পারিনি। আমরা কেবল দুমদাম আওয়াজ পেলাম। আমাদের গাড়ির সামনে একটা লরি এসে পড়ে। লরিটা ব্রেকডাউন হয়েই ছিল বোধহয়। আমি ব্রেক কষি। সেইসময় পেছন থেকে একটা অয়েল ট্যাঙ্কার ধাক্কা মারে। তিস্তা পেছনে বসেছিল। তারপর আর কিছু জানিন না।" মৃত বিজেপি কাউন্সিলরের পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার পর তিস্তার মেয়ে অবন্তিকাই কোনওক্রমে ফোন করে বাড়িতে জানায় তার মা কথা বলছে না। বাবা রাস্তায় পড়ে রয়েছে। গাড়িটার অবস্থা শোচনীয়। সঙ্গে সঙ্গে ওখানকার থানায় খবর দেন তিস্তার পরিবার। যোগাযোগ করা হয় তমলুকের থানাতেও।

প্রসঙ্গত, নেত্রী হিসেবে পদ্ম শিবিরে রীতিমতো সুখ্যাতি ছিল তিস্তার। ভবানীপুরে উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপক্ষে বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালের নাম ঘোষণা হওয়ার আগে তিস্তার নাম নিয়েও বেশ চর্চাও হয়েছিল দলের অন্দরে। যদিও পরে প্রিয়াঙ্কাকেই প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়াা হয়। নিজ ওয়ার্ডেও বেশ প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন তিস্তা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিস্তার মৃত্যুতে তাঁরা হতবাক। বিপদে-আপদে সবসময়ই তিস্তাকে পাশে পেয়েছেন তাঁরা। সেই তিস্তার এমন মর্মান্তিক মৃত্যু হবে তা ভাবতেও পারেননি কেউ।